কোটি টাকার ব্যবসা, তবু খাজনা দেন না মালিকরা
Published: 24th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মেসার্স কাদেরিয়া ব্রিকস ইটভাটায় বছরে ৩০ লাখ ইট তৈরি করা হয়। ইটের ব্যবসা থেকে আয় আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৪ সালে ১২ হাজার টাকার ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) সরকারকে পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। পরিবেশ অমান্য করে ইটভাটায় পোড়ানো হয় জ্বালানি কাঠ। নেই জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স হালনাগাদ। এসব অনিয়মের কারণে ৮ ফেব্রুয়ারি কাদেরিয়া ব্রিকসকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপকর্ম আড়াল করতে নিয়মিত প্রশাসনকে লাখ টাকা চাঁদা দিত প্রতিষ্ঠানটি।
শুধু এ ইটভাটাই নয়; অবৈধ কাঠ ব্যবহার, হালনাগাদ লাইসেন্স না থাকার অপরাধে মেসার্স কর্ণফুলী ব্রিকসকে ২ লাখ টাকা, মেসার্স গোল্ডেন ব্রিকসকে ৫০ হাজার, মেসার্স সাঈদ আহম্মদ ব্রিকসকে ১ লাখ এবং মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তারা সরকারের ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খাজনা পরিশোধ করেনি। এ পাঁচ ইটভাটার মতো চট্টগ্রামের ২৭৬টি ভাটার মালিক ২০২৪ সালে সরকারের নির্ধারিত খাজনা পরিশোধ করেনি। এতে সরকারের গচ্চা গেছে ৪১ লাখ টাকা। যদিও বছরে প্রতিটি ইটভাটা মালিক ১ থেকে ৩ কোটি টাকার ইট বিক্রি করে থাকেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.
২০২৪ সালে কাঙ্ক্ষিত ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়নি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজস্ব বিভাগ কর আদায়ে কাজ
করে যাচ্ছে।
যদিও মাসিক সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম চট্টগ্রামের ৩৭৩ ইটভাটার বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। তার পরও ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশ কয়েকটি উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে।
মেসার্স বখতেয়ার ইটভাটার মালিক বখতেয়ার উদ্দিন বলেন, আগস্টের পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ ইটভাটার মালিকানায় পরিবর্তন এসেছেন। আগে যারা মালিক ছিলেন, তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-সমর্থক হওয়ায় গা-ঢাকা দিয়েছেন। আড়ালে থেকে তারা নতুন পার্টনার নিয়ে ইটভাটাগুলো চালাচ্ছেন। এখন যারা নতুনভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন, তারা খাজনা দিতে হবে– তা না জানার কারণে খাজনা বকেয়া রয়ে গেছে।
আরেক ইটভাটার মালিক নিজাম উদ্দিন বলেন, বড় ইটভাটায় বছরে ২০-৩০ লাখ ইট তৈরি হয়। ২ থেকে ৩ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কর্মচারী খরচ, প্রশাসন ও সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা লাভ হয়। অবহেলার কারণে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খাজনাটা দেওয়া হয়ে ওঠে না।
চট্টগ্রামে ৩৭৩ ইটভাটা থাকলেও মহানগর এবং পটিয়া উপজেলায় কোনো ইটভাটা নেই। জেলার অন্য ১৪টি উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও চন্দনাইশ উপজেলায়। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় ৭০টি, সাতকানিয়ায় ৫৩টি, রাউজানে ৪৭টি, ফটিকছড়িতে ৪৩টি, লোহাগাড়ায় ৪২টি, হাটহাজারী ও চন্দনাইশে ৩২টি করে, মিরসরাইয়ে ১৪টি, সন্দ্বীপে ১৬টি, সীতাকুণ্ডে আটটি, বোয়ালখালীতে দুটি, কর্ণফুলীতে আটটি, আনোয়ারায় দুটি ও বাঁশখালীতে চারটি ভাটায় ইট তৈরি হচ্ছে।
অনেকের অভিযোগ, অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানোসহ নানা অনিয়ম চালু রাখতে লাখ টাকা প্রশাসনকে চাঁদা দেওয়ার কারণে মালিকরা খাজনা দিতে অনীহা দেখান।
এসব ইটভাটার মধ্যে জেলা প্রশাসন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) আদায় নির্ধারণ করে ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৭ লাখ টাকা। ১৪ উপজেলার মধ্যে শুধু সীতাকুণ্ডের ইটভাটাগুলো শতভাগ খাজনা পরিশোধ করেছে। রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া ও বাঁশখালী উপজেলার কোনো ইটভাটা খাজনা পরিশোধ করেনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইটভ ট ইটভ ট র ম উপজ ল য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’