একুশে পদক নেওয়ার জন্যই বাফুফে ক্যাম্পে অবস্থান করেছিলেন তারা। পদক হাতে নেওয়ার পরদিন থেকেই একে একে নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি ছাড়তে থাকেন সানজিদা আক্তার-রুপনা চাকমারা। ছুটি পাওয়ার পর অতীতে ক্যাম্প থেকে হাসিখুশি মন নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন মেয়েরা। এবার হয়েছে তার উল্টো। আগে থেকে ব্যাগ গুছিয়ে রাখা মাসুরা পারভীন-মনিকা চাকমারা ক্যাম্প ছেড়েছেন ভগ্ন হৃদয় নিয়ে। মুখে হাসি থাকলেও ভেতরে যে কষ্ট লুকিয়ে আছে, তা বুঝতে বাকি নেই কারোরই।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাওয়ার আগে গত রোববার ফেডারেশনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের আগেই বেশির ভাগ ক্যাম্প ছেড়ে চলে যান পরিবারের কাছে। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন বয়কট করা বিদ্রোহী ১৮ নারী ফুটবলার খুঁজছেন একটু শান্তি। নানা নেতিবাচক আলোচনায় অনেকটা ট্রমায় চলে যাওয়া বিদ্রোহীরা পুনরায় ক্যাম্পে ফিরবেন কিনা, তা নিয়ে আছে সংশয়। কারণ, পিটার বাটলার আমিরাত সফরের দল ঘিরেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। যেখানে সায় আছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরও।
১৬ ফেব্রুয়ারি বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ দাবি করেন, মেয়েরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে। তাঁর দাবির সত্যতা নিয়ে সংশয় আর সন্দেহ দেশের ফুটবলে। কারণ, যারা বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন, তারা একবারের জন্যও বলেননি, নিজেদের দাবি থেকে সরে এসেছেন। আর বাফুফের চুক্তিতে স্বাক্ষর করা নিয়েও দোটানায় মেয়েরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী ফুটবলার গতকাল সমকালকে নিজেদের অভিমান ও ক্ষোভ নিয়ে কথা বলেছেন। সবার দাবি, ক্যাম্পে ফেরা আর চুক্তির বিষয়টি নির্ভর করছে ফেডারেশনের ওপর। ‘আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচটি আগে দেখি, তার পর ফেরা না ফেরা নিয়ে আলোচনা। তবে আমাদের সঙ্গে আগে বসতে হবে। না বসে কোনো কিছু করা সম্ভব না। চুক্তি তো পরের বিষয়’– বলেন এক নারী ফুটবলার।
বিদ্রোহীরা বুঝতে পেরেছেন, তাদের নিয়ে খুব একটা ভাবছে না ফেডারেশন। কিন্তু টানা দুটি সাফ জেতা দলকে অবমূল্যায়ন করাটা ভালোভাবে নেননি মেয়েরা। বিশেষ করে আমিরাত সফরের সংবাদ সম্মেলনে নতুন অধিনায়ক আফেইদা খন্দকার ‘সিনিয়রদের অভাব অনুভব করবেন না’ মন্তব্যে কষ্ট পেয়েছেন তারা। ‘এই কয়েক দিন অনেক কিছুই দেখেছি। যে যার মতো বলেছে আর লিখেছে। এখন আমাদের এক সতীর্থও বলেছেন। আসলে এই বিষয়গুলো নিয়ে আর ভাবতে চাই না।’
সানজিদা-রুপনারা যেমন ভাবতে চাননি, বাটলারও অতীত ভুলে সামনে তাকিয়ে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ দুটি ম্যাচ খেলার জন্য সোমবার আমিরাত গিয়েছে বাংলাদেশের নতুন নারী ফুটবল দল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ফ টবল আম র ত ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি