উন্নয়নের জোয়ারে রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট জিরোই থাকল
Published: 25th, February 2025 GMT
রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট। সারা দিন যানবাহনে ঠাসা। পাশেই বড় মসজিদ চত্বর। দালানের চিপায় মানুষের ভিড়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গায় সব রকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দাবিদাওয়া নিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে জিরো পয়েন্টে এখনই মানুষের দম আটকে আসে। ভাবলে গা শিউরে ওঠে, ৩০ বছর পর কেমন হবে এই প্রিয় শহর।
এই ভাবনা থেকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছয় বছর আগেই ‘ভবিষ্যতের রাজশাহীর নকশা’ তৈরি করেছিলেন, কিন্তু রাজশাহী শহরের উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে গেল। সুন্দর এই শহর দেখতে আসেন সারা দেশের মানুষ। নগরের ১৯টি মোড় উন্নয়ন করা হলেও এই শহরের জিরো পয়েন্ট জিরোই থেকে গেল। নগরবিদদের নকশা নিয়ে কেউ মাথা ঘামালেন না। কী বাধার কারণে সেটা হয়নি, এখন সেটা ভাবা দরকার।
এখন যেখানে রাজশাহী সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, আগে সেখানে পুরোনো দালান ছিল। দালানেই ছিল দোকানঘর। আশির দশকের মাঝামাঝি এই দোকানঘর উড়িয়ে দিয়ে মাঝবরাবর সড়ক তৈরি করা হয়।
নগরের আলুপট্টি থেকে সোজা সেই সড়ক রাজশাহী কলেজের সামনে দিয়ে চলে গেছে। সারা দিন নগরের সব এলাকা থেকে কোনো না কোনো প্রয়োজনে কেউ একবার সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে আসবেন না, এমন প্রায় কমই হয়। এই মোড়ের পাশেই রয়েছে আরডিএ মার্কেট। এতে প্রায় তিন হাজার দোকান রয়েছে। এই মার্কেটকে কেন্দ্র করেই সারা দিন জিরো পয়েন্ট হয়ে মানুষ আসতে থাকেন। মানুষের জটে মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে।
শুধু তা–ই নয়, সাহেববাজার জিরো পয়েন্টের সেই আশির দশকের সড়কের দুই পাশের ফুটপাত পুরোটাই দোকানিদের দখলে। এমনকি ফুটপাত থেকে নিচেও এক সারি দোকানপাট বসে। এরই মধ্যে ফুলের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা ফুল কিনছেন। রাস্তার দুই পাশেই রয়েছে ফুলের দোকান। একইভাবে তালামিস্ত্রির কাছে দাঁড়িয়ে কেউ তালা সারাচ্ছেন। কেউ ফলের দোকান থেকে ফল কিনেছেন, ভাজাওয়ালার দোকান থেকে ভাজা কিনছেন। কেউ গুড়ের দোকান থেকে গুড় কিনছেন। ফুটপাতের ওপর দোকান হওয়ার কারণে কেউ মোটরসাইকেলের ওপর থেকে, এমনকি কেউ রিকশায় বসেও কেনাকাটা করছেন। বলতে গেলে একেবারে নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি।
একজন বৃদ্ধ রিকশার ধাক্কা খেয়ে সম্প্রতি খেদোক্তি করে বললেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ট্রাফিকের এমন নৈরাজ্য নেই। রাজশাহীতেও নেই। শুধু এই সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে। কিসের সুন্দর শহর!’
নগরের কুমারপাড়া থেকে মনিবাজার পর্যন্ত রাজশাহী নগরের প্রাণকেন্দ্রখ্যাত এলাকাটিতে রাতদিনই পথচারীকে এই দুর্ভোগে পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাঝখানে সড়ক বিভাজক থাকার কারণে মানুষের চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন সারা দিন দুই পাশে অটোরিকশা এমনভাবে ঢুকে থাকে যে ওপর থেকে ছবি তুললে মনে হবে, এই সড়ক অটোরিকশার একটি বড় বিক্রয়কেন্দ্র। বিক্রয়ের জন্য অটোরিকশা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পথচারীদের চলাচল অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।
শহর উন্নয়নের অংশ হিসেবে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনে থেকে স্টেশনে রোডের মুখটাকে প্রশস্ত করা হয়েছিল। সেখানে সম্প্রতি দোকানপাট বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে উত্তরে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে যানজট, একই জট পশ্চিমে, পুবে ও দক্ষিণে বড় মসজিদের সামনেও। সম্প্রতি এই ভিড়ের মধ্যে একজন রসিক পথচারী মোজাম্মেল হক মন্তব্য করে বসলেন, ‘এখন শহরের এই প্রাণকেন্দ্রের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সারা শহর উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে গেল। আর রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র এই জিরো পয়েন্ট কানাগলির চেহারা পেল, জিরো পয়েন্ট জিরোই থেকে গেল।’
অথচ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এটিই এখন পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর উন্নয়ন’ নামের এই প্রকল্পের অধীনে প্রশস্ত সড়ক, সবুজায়ন আর আলোকায়ন করে সারা দেশে হইচই ফেলে দেয় রাজশাহী। পুরোনো রাস্তাগুলো সম্প্রসারণ করা হয়। নতুন সড়ক ওভারপাস নির্মাণ করা হয়। নগরের ১৯টি মোড়ের খোলনলচে পাল্টে ফেলা হয়। এতে শহরকে একেবারে নতুন রূপ দেওয়া হয়, কিন্তু ব্যস্ততম জিরো পয়েন্ট সেই তুলনায় একটি কানাগলির চেহারা পেয়েছে।
এই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জিরো পয়েন্টের আশপাশ দিয়ে নগরের আলুপট্টির মোড়, বাটার মোড়, সোনাদিঘির মোড়, জাদুঘরের মোড়সহ সব কটি মোড়ই সমাবেশস্থলের মতো প্রশস্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই সব মোড়ে রাজনৈতিক সভা–সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অথচ এই শহরের সব আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে জিরো পয়েন্ট থেকে। এই ঐতিহ্য অনুসরণ করে এখনো বড় সমাবেশ না করতে পারলেও জিরো পয়েন্টে শুধু মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। তবে যতক্ষণ অনুষ্ঠান চলে, মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। বিশেষ করে এসব কর্মসূচির সময় এক পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অথচ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এটিই এখন পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর উন্নয়ন’ নামের এই প্রকল্পের অধীনে প্রশস্ত সড়ক, সবুজায়ন আর আলোকায়ন করে সারা দেশে হইচই ফেলে দেয় রাজশাহী। পুরোনো রাস্তাগুলো সম্প্রসারণ করা হয়। নতুন সড়ক ওভারপাস নির্মাণ করা হয়। নগরের ১৯টি মোড়ের খোলনলচে পাল্টে ফেলা হয়। এতে শহরকে একেবারে নতুন রূপ দেওয়া হয়, কিন্তু ব্যস্ততম জিরো পয়েন্ট সেই তুলনায় একটি কানাগলির চেহারা পেয়েছে।
এই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জিরো পয়েন্টের আশপাশ দিয়ে নগরের আলুপট্টির মোড়, বাটার মোড়, সোনাদিঘির মোড়, জাদুঘরের মোড়সহ সব কটি মোড়ই সমাবেশস্থলের মতো প্রশস্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই সব মোড়ে রাজনৈতিক সভা–সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অথচ এই শহরের সব আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে জিরো পয়েন্ট থেকে। এই ঐতিহ্য অনুসরণ করে এখনো বড় সমাবেশ না করতে পারলেও জিরো পয়েন্টে শুধু মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। তবে যতক্ষণ অনুষ্ঠান চলে, মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। বিশেষ করে এসব কর্মসূচির সময় এক পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একজন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বলেন, নগরের ১৯টি মোড় উন্নয়ন করা হয়। জিরো পয়েন্টের পাশের স্থাপনা ভাঙার ব্যাপারে আপত্তি ছিল। একজন দলীয় নেতার মার্কেট উচ্ছেদ করতে হতো। এসব কারণে প্রথম দফায় জিরো পয়েন্ট উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। পরে হওয়ার কথা ছিল, তা আর হয়নি।
রুয়েট শিক্ষার্থীদের নকশায় রেলগেট এলাকায় ‘ট্রান্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট’ নকশা তৈরি করা হয়। নগরের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়। এ ছাড়া যানজট কমানোর জন্য ভবিষ্যতে শহরজুড়ে গণপরিবহনের প্রস্তাব রাখা হয়। রাজশাহী নগরের বড় মসজিদ চত্বর, সোনাদিঘির মোড় ও বরেন্দ্র জাদুঘরের মোড়কে তাঁরা ‘প্লেস মেকিং’-এর আওতায় এনে নকশা তৈরি করেন। নকশায় এমন স্থানও ছিল, শহরের যে জায়গাগুলোতে প্রতিদিন ব্যাপক জনসমাগম হয়, নকশা অনুযায়ী এই জায়গাগুলোতে মানুষ বেড়াতে পারবেন।
এখন বেড়ানো দূরের কথা, বিশেষ প্রয়োজনে এই এলাকায় আসতেও মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।
● আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র প রশস ত এই শহর এই প র অন ষ ঠ শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’
জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।