আমাদের শিক্ষা পরিকল্পনায় যে নানা মাত্রায় গলদ থেকে যায়, তার প্রমাণ এই শিক্ষাবর্ষের শুরুতে আরেকবার পাওয়া গেল। প্রায় দেড় মাস পার হলেও এখনো শিক্ষার্থীরা সব বই পায়নি। অবস্থা দেখে মনে হয় না এ মাসের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছানো সম্ভব হবে।

এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ এই বাস্তবতা আগে থেকে অনুমান করতে পেরেছে, কিন্তু কোনো ধরনের পরিপূরক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও যে পাঠদান এগিয়ে নেওয়া সম্ভব, এটি বুঝি তাদের মাথাতেইও আসেনি।

শিক্ষার্থীদের বই পাওয়া নিয়ে গত দুই বছরও সমস্যা ছিল। তবে সে সমস্যা এত প্রকট ছিল না। এর পেছনে অবশ্য কারণও ছিল। পরিবর্তিত শিক্ষাক্রম অনুসারে পাঠ্যবই তখন সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি করা হয়। ফলে কিছু বই নির্ধারিত সময়ে ছাপানো সম্ভব হয়নি। এরপরও জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে স্কুলগুলোতে বই উৎসব পালন করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, করোনার সময়টি বাদ দিলে গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম এ উৎসব হলো না। অথচ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বেশির ভাগ বই প্রকাশ করা যেত।

পাঠ্যবই রচনা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত কাজের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কাজ রচনা ও সম্পাদনা। এরপর বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বইয়ের প্রয়োজনীয় সংশোধনের কাজ করা হয়। এ দুটি কাজ শেষ করার আগেই বইয়ের সম্ভাব্য পৃষ্ঠাসংখ্যা নির্ধারণ করে ছাপানোর কার্যাদেশ চূড়ান্ত করা যায়। তাহলে সম্পাদনা বা সংশোধনের কাজে একটু বেশি সময় পাওয়া যায়। এ বছর বেশির ভাগ বইয়ে কেবল পরিমার্জন বা সংশোধন করা হয়েছে, নতুন করে কোনো বই তৈরি হয়নি। এরপরও কেন যথাসময়ে বই ছাপার কাজ শেষ করা গেল না, তার ব্যাখ্যা এনসিটিবি কর্তৃপক্ষই ভালো দিতে পারবে।

নতুন বছরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই তুলে দেওয়ার জন্য আগের বছরের জুলাই-পরবর্তী মাসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসগুলোতে পাঠ্যবইয়ের সর্বশেষ সংশোধন-পরিমার্জনের কাজ করা হয়, ছাপার কাজের দরপত্র বাছাইও চূড়ান্ত করতে হয়।

গত বছর এ সময়ে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ও তার পরের ঘটনাপ্রবাহের কারণে এসব কাজ ব্যাহত হয়। তা ছাড়া যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পুরোনো শিক্ষাক্রমেই ফিরে যাওয়া হবে, তখন হাতে সময়ও বেশি ছিল না। কিন্তু এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের তো জানা ছিল, কোন কাজে ন্যূনতম কতটুকু সময় লাগে। ফলে সে অনুযায়ী আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল।

যেমন পাঠ্যবইয়ের যেসব পাঠ, অধ্যায় বা অংশ নিয়ে আপত্তি ছিল, সেগুলো সরাসরি ফেলে দিলেই হতো। নতুন কিছু যোগ করা কিংবা বড় ধরনের পরিমার্জনের কাজগুলো পরের বছরের জন্য রেখে দেওয়া যেত। তা ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় আন্দোলনকে ধরতে পারে, এত অল্প সময়ের মধ্যে তেমন লেখা তৈরি করার কাজটিও সহজ ছিল না। মোটকথা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ করার জন্য একটি রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা করতে হতো।

ধরা যাক, এরপরও এই বিলম্ব এড়ানো সম্ভব ছিল না। এ পরিস্থিতিতে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল এ সময়ের পাঠদান পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া। কারণ, পাঠ্যবই দেরিতে আসার কারণে কোনোভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম থেমে থাকতে পারে না। শিক্ষা বিশেষজ্ঞেরাও জানেন পাঠ্যবই একমাত্র শিখন উপকরণ নয়। প্রতিটি বিষয়ের শিক্ষকদের নিয়ে পরিকল্পনা করার দরকার ছিল পাঠ্যবই ছাড়া প্রথম দু-তিন মাসে কীভাবে শ্রেণিকার্যক্রম চালানো হবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আগের শ্রেণির বই থেকেও পড়ানো যেতে পারত।

আমাদের দেশে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই কমবেশি শিখন-ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে ওঠে। গত বছর এই ঘাটতি আরও বেশি ঘটেছে। শিক্ষাবর্ষের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আন্দোলন ও অস্থিরতার কারণে ঠিকমতো ক্লাস-পরীক্ষা হতে পারেনি। এরপরও বছর শেষে প্রায় সব শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। পুরোনো বইয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করেও যদি নতুন বছরে পাঠদান চালু রাখা হতো, তবে নতুন শ্রেণির পরবর্তী পাঠদানের কাজটিও সহজ হয়ে যেত।

এনসিটিবি ও স্কুল কর্তৃপক্ষ যখন সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন কোচিং সেন্টারগুলো কিন্তু ঠিকই কৌশল নির্ধারণ করে নিয়েছে! তারা পুরোনো বই ও শিক্ষাক্রমের আলোকে নোট তৈরি করে পাঠদান শুরু করে দিয়েছে। ফলে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানকে নিয়ে আরও বেশি কোচিংমুখী হয়েছেন। এ সময় কিছু পুরোনো বইও চড়া দামে বইয়ের দোকানে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রকাশকেরা এদিক থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে। বাজারে পাঠ্যবই আসার অনেক আগেই তারা গাইড বই বাজারে নিয়ে এসেছে।

কিছুদিন পর আবার রোজা, ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হবে। ফলে বই হাতে এলেও এ সময়ে পাঠদান ব্যাহত হবে। ছুটির মধ্যে কেবল বাড়ির কাজ আর অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শিক্ষকেরা তাঁদের আসল দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। একেকজন শিক্ষার্থীর দুর্বলতা চিহ্নিত করে যদি সেগুলো পূরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে বই প্রকাশের এই বিলম্বও বড় ক্ষতির কারণ হবে না। এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের উচিত, বই মুদ্রণ ও স্কুলে পৌঁছানোর কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যাপারে জোর দেওয়া। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে এ সময়ে পাঠদানের বিষয় ও কৌশল নির্ধারণ করা।

তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ধ র ত সময় প ঠ যবই এনস ট ব পরবর ত ন ত কর এ সময় বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত

নরসিংদী সদর উপজেলা বিএনপির আওতাধীন নজরপুর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির সকল কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতৃবৃন্দ।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে দলীয় কার্যালয় চিনিশপুর থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ নজরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মো. তোফাজ্জল হোসেন (টবু) এবং সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম নিশ্চিত করতে এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নজরপুর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গুরুতর সাংগঠনিক অনিয়ম ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি এরইমধ্যে জেলা বিএনপিকেও অবহিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে উপজেলা বিএনপি সূত্র।

নরসিংদী সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মো. তোফাজ্জল হোসেন (টবু) বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন, যেখানে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। দলের ভেতরে কোনো অভিযোগ উঠলে সেটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। নজরপুর ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা এমনই একটি অবস্থানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কোনো রকম ব্যক্তিগত অভিপ্রায় নয়, বরং দলীয় শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা রক্ষার্থেই আমরা কমিটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।”

ঢাকা/হৃদয়/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম
  • জামায়াতের প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত
  • চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩