ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে তিন ঘণ্টা কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাউতলী এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী ও আলেম-ওলামারা মহাসড়কটি অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে বেলা একটার দিকে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা। এতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আন্দোলনকারীদের একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা জুলকার নাঈম বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ওলামায়ে কেরাম আন্দোলন করেন। তখন আওয়ামী লীগের নেতারা আলেমদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালান এবং উল্টো ওলামায়ে কেরাম ও মাদ্রাসার ছাত্রদের আসামি করে মিথ্যা মামলা করেন। ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হলেও সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়নি। যদি রাজনৈতিক মামলাগুলো একের পর এক প্রত্যাহার হয়, তাহলে আলেম-উলামায়ে কেরামদের মামলাগুলো এখনো কেন প্রত্যাহার হচ্ছে না। তাই দ্রুত এই মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। অন্যথায় পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও হেফাজতে ইসলাম সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাউতলী এলাকায় আলেম-ওলামা ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধ করেন। এতে কুমিল্লা-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। চালক ও দূরপাল্লার যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মোজাফফর হোসেন বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধকারীরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন। এর আগে অবরোধকারীদের ছয় সদস্যের একটি দল পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের দাবি তুলে ধরেন। দাবি আমলে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে অবরোধকারীরা মহাসড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আগামী রোববার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

অবরোধকারীদের ভাষ্য, ২০১৬ ও ২০২১ সালে পৃথক সহিংসতার ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় আলেম-ওলামা ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৫টি মামলা হয়। এসব মামলায় তিন হাজারেরও বেশি হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী ও আলেম-ওলামাদের আসামি করা হয়। ২০১৬ সালে তুচ্ছ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব, ভাঙচুর, লুটপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আর ২০২১ সালের ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে জেলার অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় করা মামলায় হেফাজতে ইসলামের এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মী কারাভোগ করেন। এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে করা হয়েছে, তাই মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, দীর্ঘদিনের কিছু মামলা ঝুলে আছে। সেগুলো শান্তিপূর্ণ ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দ্রুত যেন সুরাহা হয়, সে জন্য তাঁরা কর্মসূচি পালন করেছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। তাঁরা সেটি শুনে মহাসড়ক থেকে সরে গেছেন। জেলা প্রশাসককে নিয়ে দাবিগুলোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ইসল ম র ন ত অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

নাসির-তামিমার মামলার শুনানি বিব্রত আদালত, বদলির আদেশ 

অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানিতে বিব্রত বোধ করেছেন আদালত। মামলাটি অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান এ আদেশ দেন।

সোমবার এ মামলায় নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানার আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল। নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা আদালতে হাজির হন।

তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু আদালতে দুটি আবেদন করেন। এর মধ্যে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইসরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি আবেদন করা হয়। কারণ হিসেবে আজিজুর রহমান দুলু বলেন, “এ মামলার বিচার চলছে। এ অবস্থায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গত ১৬ এপ্রিল মিডিয়াতে বলেন, নাসির হোসেন ব্যাভিচার করে তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন। বিচার শেষে আদালত নির্ধারণ করবেন, নাসির তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন কি না এবং ব্যাভিচার করেছেন কি না।” 

একই সঙ্গে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার পুরো অভিযোগ না শুনিয়ে সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানোর আবেদন করেন নাসির ও তামিমার আইনজীবী।

এদিকে, বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আগে বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনি এখন আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।

দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, উভয় পক্ষেরই আবেদন দেওয়ার অধিকার আছে। এটা বিজি কোর্ট। একটা মামলার শুনানি করতে যে ধৈর্য দরকার, এত সময় এই আদালতের নেই। এতে অন্য মামলায় ইফেক্ট পড়ে। আমি বিব্রত বোধ করে মামলাটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দিই। এতে আপনারা কি নাখোশ হবেন?

তখন আইনজীবীরা জানান, এতে তাদের আপত্তি নেই। তখন আদালত বলেন, মামলাটা বদলি করে সিএমএম বরাবর পাঠিয়ে দিই। সিএমএম মামলাটি একটা কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন।

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা সুলতানা তাম্মির স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে আদালতে এ মামলা করেন। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শেখ মো. মিজানুর রহমান তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি আদালত নাসির-তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে, এ মামলার অপর আসামি তামিমার মা সুমি আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

ঢাকা/এম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অকার্যকর সিসি ক্যামেরা, পানি নেই ছয় মাস
  • ক্রিকেটার নাসির ও তামিমার মামলায় শুনানিতে আদালত বিব্রত
  • নাসির-তামিমার মামলায় বিব্রত আদালত, অন্য আদালতে বদলি
  • নাসির-তামিমার মামলার শুনানি বিব্রত আদালত, বদলির আদেশ