গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শুনানিতে তীব্র বিরোধিতা, হট্টগোল
Published: 26th, February 2025 GMT
শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত শুনানিতে অংশ নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছেন ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। শুনানি শুরুর আগেই এটি বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। এরপর শুনানি চলাকালে স্লোগানে স্লোগানে আপত্তি জানান সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা, দেখা দেয় হট্টগোল। দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বাতিল করে দাম কমানোর শুনানি আহ্বান করার দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।
আজ বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে শুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে নতুন শিল্পকারখানার জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসে দাম বাড়ানো হলে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না, রপ্তানি ব্যাহত হবে এবং দেশের অর্থনীতি ধসে যাবে।
শুনানি শেষে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, শুনানিতে অংশ নেওয়া সবার বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় আছে, এর মধ্যে যে কেউ কমিশনে লিখিত মতামত দিতে পারবেন। এরপর সবার বক্তব্য বিচার বিশ্লেষণ করে একটা সন্তোষজনক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে কমিশন।
সকালে শুরুতে পেট্রোবাংলা ও ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি আলাদাভাবে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরে। তবে সবার প্রস্তাব একই ছিল। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। পুরোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের বাড়তি ব্যবহৃত গ্যাসের বিল হবে বাড়তি দামে। যেসব শিল্পকারখানা নতুন সংযোগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম। এর বাইরে বাকিটুকুর জন্য নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
গ্যাস কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তারা আলাদা করে মূল্যবৃদ্ধির কোনো সুপারিশ করেনি। তবে পেট্রোবাংলার রাজস্ব চাহিদা হিসাব করে তারা দাবি করেছে, প্রতি ইউনিট এলএনজি কিনতে পেট্রোবাংলার খরচ হবে ৭৯ টাকা ৩৪ পয়সা। প্রস্তাবিত দামের চেয়েও এটি বেশি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, তিন হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয়ের জন্য গ্যাসের দাম ৭৫ টাকা করার যে প্রস্তাব, তা ভয়ংকর গণবিরোধী। এটি যৌক্তিক নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।
আগামী রোববারের মধ্যে এ প্রস্তাব বাতিল করার দাবি জানিয়ে শামসুল আলম বলেন, গত সরকারের ১৫ বছরের লুটপাট ও দুর্নীতির দায়ে সৃষ্ট বাড়তি খরচ কমিয়ে গ্যাসের দাম কমানোর প্রক্রিয়া নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, গ্যাসের দাম সমন্বয়ের কারণে জনগণের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা কেউ প্রস্তাবে বলেনি। এটা চিন্তা করা হলে গত সরকারের লুটপাটের খরচ সমন্বয় করে গ্যাসের দাম কমানোর শুনানি হতো।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্ত সবার কাছে যৌক্তিক হতে হবে, একতরফা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। যেকোনো ধরনের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করেন, আপাতত শুনানি স্থগিত করেন। এমনিতে ব্যবসা–বাণিজ্য, শিল্পের অবস্থা খারাপ। গ্যাসের দাম এক টাকাও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। ভুল নীতি, দুর্নীতি হলো সংকটের মূল।’
মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্লোগানসকাল ১০টায় বিয়াম মিলনায়তনে শুরু হয় শুনানি। এর আধা ঘণ্টা আগে থেকে মিলনায়তনের বাইরে মানববন্ধন শুরু করে ক্যাব। এ সময় ক্যাব নেতারা বক্তব্য দিয়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শুনানি বাতিলের দাবি জানান। ১১টায় এটি শেষ করে তারা মিলনায়তনে প্রবেশ করেন। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টার বক্তব্য শেষ হলেই মিলনায়তনজুড়ে তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে স্লোগান শুরু হয়। বেলা পৌনে একটার দিকে মিলনায়তনের ভেতরে ‘প্রহসনের শুনানি, বাতিল করো বাতিল করো’; ‘গণবিরোধী শুনানি, বাতিল করো বাতিল করো’; ‘আমলাতন্ত্রের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ এমন স্লোগানে শুরু হয় হট্টগোল। তাঁরা অবিলম্বে শুনানি বন্ধের জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শুনানিতে বিরতি ঘোষণা করে কমিশন। বেলা দুইটায় এটি আবার শুরু হয়।
বিয়াম ভবনের নিচে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মানববন্ধন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫