শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত শুনানিতে অংশ নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছেন ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। শুনানি শুরুর আগেই এটি বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। এরপর শুনানি চলাকালে স্লোগানে স্লোগানে আপত্তি জানান সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা, দেখা দেয় হট্টগোল। দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বাতিল করে দাম কমানোর শুনানি আহ্বান করার দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।

আজ বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে শুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে নতুন শিল্পকারখানার জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসে দাম বাড়ানো হলে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না, রপ্তানি ব্যাহত হবে এবং দেশের অর্থনীতি ধসে যাবে।

শুনানি শেষে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, শুনানিতে অংশ নেওয়া সবার বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় আছে, এর মধ্যে যে কেউ কমিশনে লিখিত মতামত দিতে পারবেন। এরপর সবার বক্তব্য বিচার বিশ্লেষণ করে একটা সন্তোষজনক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে কমিশন।

সকালে শুরুতে পেট্রোবাংলা ও ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি আলাদাভাবে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরে। তবে সবার প্রস্তাব একই ছিল। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। পুরোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের বাড়তি ব্যবহৃত গ্যাসের বিল হবে বাড়তি দামে। যেসব শিল্পকারখানা নতুন সংযোগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম। এর বাইরে বাকিটুকুর জন্য নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

গ্যাস কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তারা আলাদা করে মূল্যবৃদ্ধির কোনো সুপারিশ করেনি। তবে পেট্রোবাংলার রাজস্ব চাহিদা হিসাব করে তারা দাবি করেছে, প্রতি ইউনিট এলএনজি কিনতে পেট্রোবাংলার খরচ হবে ৭৯ টাকা ৩৪ পয়সা। প্রস্তাবিত দামের চেয়েও এটি বেশি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, তিন হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয়ের জন্য গ্যাসের দাম ৭৫ টাকা করার যে প্রস্তাব, তা ভয়ংকর গণবিরোধী। এটি যৌক্তিক নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।

আগামী রোববারের মধ্যে এ প্রস্তাব বাতিল করার দাবি জানিয়ে শামসুল আলম বলেন, গত সরকারের ১৫ বছরের লুটপাট ও দুর্নীতির দায়ে সৃষ্ট বাড়তি খরচ কমিয়ে গ্যাসের দাম কমানোর প্রক্রিয়া নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, গ্যাসের দাম সমন্বয়ের কারণে জনগণের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা কেউ প্রস্তাবে বলেনি। এটা চিন্তা করা হলে গত সরকারের লুটপাটের খরচ সমন্বয় করে গ্যাসের দাম কমানোর শুনানি হতো।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্ত সবার কাছে যৌক্তিক হতে হবে, একতরফা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। যেকোনো ধরনের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করেন, আপাতত শুনানি স্থগিত করেন। এমনিতে ব্যবসা–বাণিজ্য, শিল্পের অবস্থা খারাপ। গ্যাসের দাম এক টাকাও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। ভুল নীতি, দুর্নীতি হলো সংকটের মূল।’

মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্লোগান

সকাল ১০টায় বিয়াম মিলনায়তনে শুরু হয় শুনানি। এর আধা ঘণ্টা আগে থেকে মিলনায়তনের বাইরে মানববন্ধন শুরু করে ক্যাব। এ সময় ক্যাব নেতারা বক্তব্য দিয়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শুনানি বাতিলের দাবি জানান। ১১টায় এটি শেষ করে তারা মিলনায়তনে প্রবেশ করেন। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টার বক্তব্য শেষ হলেই মিলনায়তনজুড়ে তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে স্লোগান শুরু হয়। বেলা পৌনে একটার দিকে মিলনায়তনের ভেতরে ‘প্রহসনের শুনানি, বাতিল করো বাতিল করো’; ‘গণবিরোধী শুনানি, বাতিল করো বাতিল করো’; ‘আমলাতন্ত্রের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ এমন স্লোগানে শুরু হয় হট্টগোল। তাঁরা অবিলম্বে শুনানি বন্ধের জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শুনানিতে বিরতি ঘোষণা করে কমিশন। বেলা দুইটায় এটি আবার শুরু হয়।

বিয়াম ভবনের নিচে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মানববন্ধন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ত ল কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন

ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুর পাড় এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

আগামী দুই দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে  সড়ক অবরোধ সহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও  করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে মানববন্ধন থেকে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ  করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এতে করে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়কের উভয় পাশে যানবাহন বন্ধ হয়ে যানজটের সৃস্টি হয়।

বুধবার সকাল ১০ টার দিকে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ  অনুস্ঠিত হয়। ১১ টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনাস্থলে এসে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন আজ দুপুরের পর এলাকাবাসীর সাথে নির্বাহী কর্মকর্তা কথা বলবেন তাদের সমস্যার কথা শুনবেন এবং দ্রুতই তা সমাধানের জন্য কাজ করবেন। 

এ সময় লালপুর পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন মুসা বলেন জলাবদ্ধতার কারনে মুসুল্লিরা নামাজ পরতে পারছেনা,কর্মজীবিরা কাজে যেতে পারছেনা,স্কুল -কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা,নোংরা পানির কারনে ঘরে ঘরে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পরেছে।

আমাদের কে আশ্বাস করেছিলো সেনাবাহিনী কতৃক যে পাম্প বসানো হয়েছিলো সেটা চালু হলে আমাদের দ্ঃূক কস্ট লাঘব হবে। কিম্ত সে পাম্প চালু হলেও আমাদের কস্ট শেষ হয়নি। সেই পাম্প আমাদের কোন কাজে আসেনি। 

আমরা  সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি দিয়েছি তারা এসে দেখেও গেছে কিন্ত আজো সমস্যার সমাধান করা হয়নি। বিগত সরকারের আমলে তখনকার চেয়ারম্যান, এমপি সাহেবের নিকট গিয়েছি। শামীম ওসমান এসে দেখে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। তা শুধু কথার কথাই ছিলো। কিন্ত কোন কাজে আসেনি। 

ইউপি সদস্য মাঈনুদ্দিন জানায়, দীর্ঘদন যাবৎ আমরা এই সমস্যা আছি। মৃত মানুষের লাশ পযন্ত দাফন করতে পারছিনা। মসজিদের ভিতরে পানি নামাজ পরতে পারছিনা। রাস্তায় বের হতে পারছিনা।

আমাদের কোরবানী ঈদে পশু কোরবানী দিতে হয় ছাদের ওপরে নতুবা অন্য এলাকায় গিয়ে। এ সব কিছুই সরকারের সকল বিভাগের কর্মরত কর্তার জানে। কিন্ত শুধু আশ্বাস পেয়ে গেছি। কোন সমাধান পাইনি তাই আজ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে আমাদেরকে। 

আমরা দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। ফতুল্লায় এতো উন্নয়ন হয়, কিন্তু লালপুর পৌষাপুকুর পাড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছেনা। আমরা চাই এই জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হোক।

ব্যবসায়ী হাবিব জানায়, আমাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। হাসিনা সরকারের আমলে আমাদের কোন কাজ হয় নাই। আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি দিয়েছি। কিন্ত কোন কাজ হয়নি।  আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন প্রকার টেক্স আর দিবোনা।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, লালপুর- পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আঃ বারী, আজাদুর রহমান আজাদ,আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক রফিক, লালপুর আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সভাপতি মো. জনি, শামীম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসুর পথরেখা ও সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম
  • জকসুর রোডম্যাপ ও সম্পূরক বৃত্তি দাবি শিক্ষার্থীদের
  • সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসায় কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
  • রূপগঞ্জে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
  • ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন
  • রামেক হাসপাতালে ইআরসিপি স্যুট, জটিল রোগের চিকিৎসা মিলবে সহজেই
  • অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে ববিতে মানববন্ধন
  • সিজু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
  • মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে মিছিল-সমাবেশ
  • নেত্রকোনায় বাবরকে নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন