দলের নেতাকর্মীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনমুখী করার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। বর্ধিত সভায় তৃণমূলের কথা শুনবেন কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। তেমনি সর্বোচ্চ ফোরাম থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে আগামীর পরিবর্তনের জন্য নেতাকর্মীকে দেওয়া হবে নানা নির্দেশনা।

‘সুদৃঢ় ঐক্য রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র’ স্লোগান নিয়ে প্রায় সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিএনপির বর্ধিত সভা। আজ সকাল থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলসংলগ্ন মাঠে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। 

বিএনপির নেতাকর্মী জানান, সভায় মূলত তারা দলের নির্দেশনা জানতে উন্মুখ। সেখানে তারাও বক্তব্য দেবেন। এলাকার নানাবিধ সমস্যা, একটি দলের ষড়যন্ত্র, নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর দ্বন্দ্ব, সুবিধাভোগীদের দৌরাত্ম্য নিয়েও তারা সোচ্চার থাকবেন। তাদের এসব সমস্যা সমাধানে হাইকমান্ড যে নির্দেশনা দেবেন, তা তারা মেনে চলবেন।

বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের সুখ-দুঃখের পাশাপাশি প্রত্যাশার কথা শুনতে চান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একইভাবে সাংগঠনিক বিষয়সহ সার্বিক বিষয়ে মতামত নেবেন তিনি। তারা মনে করেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিগত তিনটি নির্বাচনকে কলঙ্কিত এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও মিত্রদের যারা অংশ নিয়েছে, তাদের ওপরও নানা দমনপীড়ন চালানো হয়েছিল। এখন সেই পরিবেশ না থাকলেও তাদের নানা কষ্টের কথা শুনবেন তারেক রহমান। এ ছাড়া বিএনপিকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সমস্যা ছাড়াও অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানান ওইসব নেতা।

বর্ধিত সভা থেকে কী বার্তা আসতে পারে– জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যেসব নেতা বর্ধিত সভায় আসবেন, যাদের ডাকা হয়েছে তাদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই অনেক কিছু উঠে আসবে। দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের নেতারা কী ভাবছেন, বর্ধিত সভা থেকে তার একটি ধারণা পাওয়া যাবে। সেই নিরিখে তৃণমূলকে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এসব নেতা দীর্ঘদিন ধরেই রাজপথে আন্দোলন করেছেন। এখনকার পরিস্থিতিতে করণীয় কী, কী ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করা যায়– তাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেটি আসবে। 

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে বিএনপির বর্ধিত কমিটির সভা হয়। যেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন। এখন তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন।

জানা গেছে, এবারের বর্ধিত সভায় সারাদেশে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ছয় স্তরের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতা উপস্থিত থাকবেন। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব কর্মকর্তা ও সদস্য, মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছাড়াও বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব থাকবেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী এবং মনোনয়ন ইচ্ছুক যেসব প্রার্থী প্রাথমিক পত্র পেয়েছিলেন, তারাও থাকবেন এই সভায়।

নেতারা জানান, এবারের বর্ধিত সভা বড় পরিসরে হবে। সভায় প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, ম্যাগাজিন প্রকাশসহ বিভিন্ন পর্ব রয়েছে। এর পরে রুদ্ধদ্বার কর্মঅধিবেশন, যেখানে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেবন। সমাপনীতে নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান।

বর্ধিত সভায় কী ধরনের বার্তা দিতে চাইবেন– এমন প্রশ্নে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরে অনেক নেতাকর্মীর জীবনের বিনিময়ে, জেল-জুলুম আর নির্যাতন সহ্য করে এক রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিবাদকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এখন মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দেশকে যত তাড়াতাড়ি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনা। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য জাতীয় নির্বাচনই সর্বোচ্চ প্রাধান্য। কিন্তু সেখানেও অনেক বাধা আছে, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত আছে। সেই চক্রান্ত মোকাবিলায় দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীর মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার বার্তা থাকবে এই সভা থেকে। 

তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে, তত সংকট থেকে দেশ মুক্ত হবে। এখন সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা ভেঙে পড়েছে। হত্যা, মারামারি, চাঁদাবাজি, দখল এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নাম উল্লেখ করে তারা বলেন, এই দলের নেতাকর্মীরা ঘাপটি মেরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সবকিছু দখল করছে। উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে, অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। 

তারা বলেন, আগামী নির্বাচন তাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। নেতাদের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এই কোন্দল নিরসনে দলের গাইডলাইন আসবে এই বর্ধিত সভা থেকে। এ ছাড়া এই ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায় করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে বাধ্য করার কর্মসূচি ও প্রচার চালাতে তারা সোচ্চার থাকবেন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই বর্ধিত সভা আয়োজনকে খুবই সময়োপযোগী উল্লেখ করে সমকালকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মী ও জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছেন। মানুষ অপেক্ষা করছে নির্বাচনের জন্য।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত কর ম ন ত কর ম র ষড়যন ত র পর স থ ত ব এনপ র কম ট র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির

আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ‘নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বের ষড়যন্ত্র’ রুখে দিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন সেনপাড়ায় সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তরের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের এই শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ।

সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লূনা নূর, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোতালেব হোসেন ও মহানগর কমিটির সদস্য রিয়াজ উদ্দিন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত চার মূলনীতি সমুন্নত রাখতে হবে। শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে শ্রমিক, কৃষক, যুব ও নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। বামপন্থীদের সরকার গঠন করতে সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাঁদের নেতৃত্বেই আগামী দিনের ক্ষমতায় লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে।

সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল, আজ তারাই রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, ব্যবস্থার পরিবর্তনই সময়ের দাবি। কমিউনিস্টরা সেই ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আহ্বান জানাই, গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। আগামীকাল থেকেই আমরা জাতীয় নির্বাচনের কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) দেখতে চাই।’

নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু না হলে জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট ও শোষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে জনগণের আন্দোলনে রূপ দেবে।’

সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দেশীয় দোসরদের হাতে দেশের সম্পদ লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখনো অনিশ্চিত যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না। কারণ, বর্তমান সরকার এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি। জনগণ আজ অর্থনৈতিক সংকট, বৈষম্য ও দুর্নীতির শিকার। একদিকে জনগণের ঘামঝরানো টাকায় দেশ চলছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা দেশের সম্পদ লুট করছে। সমুদ্রবন্দর, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
  • অদৃশ্য শক্তি ও ফ্যাসিষ্টরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত খোরশেদ
  • আগের ভোটের সবাই বাদ, ‘যোগ্য’ নতুন ডিসি খুঁজে পাচ্ছে না সরকার
  • নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির
  • জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
  • বিদেশ যেতে কেন বাধা দেওয়া হল, প্রশ্ন মিলনের