Prothomalo:
2025-06-16@06:21:30 GMT

কেমন হলো একুশে বইমেলা 

Published: 28th, February 2025 GMT

বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে প্রতিবছর নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এমনটিই দেখে আসছি। কোনোবার শুনি মেলায় অতিরিক্ত ভিড়। ধুলাবালুতে নিশ্বাস নেওয়া দায়। ছুটির দিন হলে তো কথাই নেই। মেলায় ঢুকতে শাহবাগ থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়। কোনো কোনোবার শুনি এবারের বেচাবিক্রি ভালো না। লোকজন মেলায় এসে বই কেনে না। খালি ঘোরে আর ছবি তোলে। এটা কি তামাশার জায়গা! বিশেষত পরিচিত প্রকাশক ভাই-বন্ধুদের তরফ থেকে এমনটাই শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আবার মেলা শেষ হলে প্রতিবছরই প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে পত্রপত্রিকায় দেখি, বই বিক্রি অন্য সব বছরের রেকর্ড ছাড়াল!

একটা বিষয়ে অবশ্য প্রায় প্রতিবছরই মিল দেখি। সেটা বাংলা একাডেমি পুরস্কার সম্পর্কিত। যদিও পুরস্কার মেলার অংশ নয়, তবু পুরস্কারটি মেলার প্রথম দিন দেওয়া হয় বলে এই আলোচনা মাসজুড়ে শীতের আমেজের মেলার মাঠকে বেশ গরম করে রাখে। মেলার মাঠে এবং এর বাইরে প্রতিবারই শুনি, এবারের পুরস্কার জঘন্য হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অধিকাংশ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই তদবির করে পেয়েছেন। যোগ্যরা বাদ পড়েছেন। গেল! গেল! শিল্প-সাহিত্য-গবেষণা রসাতলে গেল! দু–একজন ভালো লেখক অবশ্য পুরস্কার পান প্রতিবছরই। তাঁরা শোভা পান পায়েসের মধ্যে ভেসে থাকা এলাচির মতো। সংখ্যায় অত্যন্ত কম। কিন্তু মনে হয় বেশ। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না! এবারের পুরস্কারও ভালো হতে হতেও ভালো হলো না বলে বেশ শোরগোল উঠল। হায় পুরস্কার! তুমি কবে মনঃপূত হবে!

এ তো গেল ‘কমন’ আলাপ-আলোচনা। ব্যক্তি পর্যায়ে আলোচনা করতে গেলে নানা বৈচিত্র্য পাওয়া যায়। বিশেষত কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে নানা মত-পথ পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন, মেলাটা বাংলা একাডেমি থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হোক। কেউ বলেন, না না না সেটা হবে গর্হিত! বাঙালির আবেগ নিয়ে খেলা চলবে না। বাংলা একাডেমি বাঙালির আবেগের জায়গা। জাতির জন্মের সঙ্গে এর নাড়ি লাগানো। এই নাড়ি কাটলেই শেষ। একাডেমিও বাঁচবে না, মেলাও নয়। এই বর্ধমান হাউসের প্রাঙ্গণের ছোঁয়া আমাদের লাগবেই! কেউ কেউ বলেন, এই মেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির পালন করার দরকার কী! এটা তাদের কাজ নয়। বাংলা একাডেমি ব্যস্ত থাকুক গবেষণা-সৃজনশীল চর্চা নিয়ে। বলা বাহুল্য, এগুলোও ৩০ বছর ধরেই শুনে আসছি।

এবারের বইমেলাকে কেন্দ্র করে এসব আলাপের কোনোটাই বাদ যায়নি। আলাপগুলো অনেকটা জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ গোছের। সেই পুরোনো কথকতা। প্রতিবছর পুনরাবৃত্তি। কারণ, প্রতিবছর বইমেলা হয় স্বাভাবিক নিয়ম ও পরিবেশে। শুধু ব্যতিক্রম ঘটেছিল ১৯৮৩ সালে। সে বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের এরশাদবিরোধী মিছিলের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে দুজন ছাত্র মারা যান। এই শোকের ভেতর সেবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে সেবার কোনো কথাও ওঠেনি। নাকি অভ্যাসবশত সেবারও বিচিত্র কথা উঠেছিল!

অমর একুশের বইমেলা ২০২৫-এর পটভূমি ছিল একেবারেই ভিন্ন। মাত্র পাঁচ মাস আগে দেশে ঘটে গেল একটা গণ-অভ্যুত্থান। প্রাণহানি ঘটল শত শত মানুষের। দেশ পরিচালনা করছে একটি অন্তর্বর্তী সরকার। বলা যায়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। দেশ ও মানুষ স্থির নয়। দেশের সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও মানুষের মধ্যে আছে নানা কথা। এ অবস্থার মধ্যে একুশের বইমেলা হয়ে গেল। মেলার মাসজুড়ে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটল। বইমেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বলছে, ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৫১ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে। এত মানুষের সমাগম! ভাবতে গেলেও অবাক লাগে!

শুধু তা–ই নয়। আরও আছে। বলা যায় গোদের ওপর বিষফোঁড়া। কারণ, নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এবার ছিল না মেলার অন্যতম সহায়ক সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতির ঘোষিত কমিটি। বাংলাদেশের প্রচলিত ধারা অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই সৃষ্টি হয়েছে মেলা সংশ্লিষ্ট নতুন প্রতাপশালী শ্রেণি। তাদের অন্তর্ভুক্তির চাপ ছিল বাংলা একাডেমির ওপর। পুরোনো প্রতাপশালীদের রাখা হবে নাকি বাদ দেওয়া হবে, রাখলে কীভাবে রাখা হবে এসবেরও চাপ থাকার কথা বাংলা একাডেমির ওপর। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই এবারের বইমেলা হয়েছে বলে বাইরে থেকে অনুমান করছি। ফলে এবার কিছু নতুন কথার সূত্রপাত হওয়া অসম্ভব নয়। হয়েছেও বটে। কিন্তু আমি মনে করি, সম্ভাব্যতার তুলনায় কমই হয়েছে। বরং অধিকাংশ কথাই ওই ‘হাজার বছর ধরে’ গোছের পুরোনো। এসব কথার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পুরোনো হলেও প্রতিবারই নতুন ও জীবন্ত মনে হয়। 

এবার বিশেষভাবে কথা হয়েছে বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় রাষ্ট্রের তরফ থেকে; বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে নয়। এবারের বইমেলা যে অনেকটাই অরক্ষিত ছিল, এ কথা মিথ্যা নয়। তার মানে এই নয় যে নিরাপত্তাবাহিনী বা নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। ছিল। বরং বিগত বছরের চেয়ে একটু বেশিই ছিল। কিন্তু তা সংখ্যায়; তৎপরতায় নয়। পুলিশ বাহিনী প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল। এই সুযোগে মেলায় ঢুকে পড়েছে ব্যাপকভিত্তিক হকার। যত্রতত্র দেখা গেছে ফুডকার্ট। এসব নিয়ে মানুষ নিন্দামন্দও কম করেনি। বেচারা বাংলা একাডেমি!

এত কিছুর ভেতরেও এবার মেলায় স্টল-বিন্যাস ভালো ছিল বলে মনে হয়। চলাচলের রাস্তা ছিল আগের চেয়ে প্রশস্ত। যদিও এবার গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০০ স্টল বেশি ছিল। লিটলম্যাগ চত্বরটি ছিলে চোখে পড়ার মতো গোছানো ও পরিসরবান্ধব (যদিও একটা বড়সংখ্যক লিটলম্যাগ এবার স্টলে আসেনি। এর কারণ কি বাংলাদেশে লিটলম্যাগ কমে যাওয়া! নাকি অন্য কিছু!)। ঢোকার পথে ভিড় তুলনামূলক কম হয়েছে। কারণ, এবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকেও প্রবেশপথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রবেশপথ বিচিত্র হলেও সব পথ এসে মিশেছে বইয়ের কাছে। বই মানে বিচিত্র ধরনের বই। প্রতিবারই কথা ওঠে, কোন ধরনের বইয়ের কেমন কাটতি হলো এবারের বইমেলায়? এবারও উঠেছে। পাই-টু-পাই হিসাব দেওয়া মুশকিল। তবে চোখ-কান খোলা রেখে যতটুকু বোঝা যায়, এবারের বইমেলায় বহুল বিক্রীত বইয়ের তালিকার শীর্ষে থাকবে নতুন জেনারেশনের আগ্রহের বইয়ের জগতের মধ্যে। এদিক থেকে মোটিভেশনাল বই, নেটওয়ার্কিং, প্রোগ্রামিংয়ের বইসহ বিচিত্র পেশাগত দক্ষতাভিত্তিক বইয়ের কাটতি বরাবরের মতোই বেশি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। পুরোনোদের ফিকশনের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের লেখা ফিকশনের স্টলগুলোতেও ভিড় ছিল লক্ষ করার মতো। ইসলামি বইয়ের বেচা-বিক্রিও শীর্ষের দিকে থাকবে বলে মনে হয়। তবে মননশীল লেখার প্রতি ঝোঁক বোধ করি দিন দিন বাড়ছে। এবং এই বাড়ার গতি ভবিষ্যতেও ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে মনে হয়। কারণ, একটি জনগোষ্ঠী যখন চিন্তায় প্রকাশ করে, তখন মননশীল বইপত্রের কদর বাড়ে, বৈকি! 

প্রতিবছর বইমেলায় আসেন বিচিত্র মানুষ, বিচিত্র পাঠক.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক এক ড ম র বইয় র র ওপর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু এ বছরই: রুশ রাষ্ট্রদূত

চলতি বছরের শেষ নাগাদ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ম্যান্টিতস্কি। রোববার রাশিয়া দিবস উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ বছর রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ের ৮০ বছর উদযাপন করছে। একইসঙ্গে সোভিয়েত পারমাণবিক শিল্প প্রতিষ্ঠারও ৮০ বছর। এই গৌরবময় সময়ে রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতি আমাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।’ তিনি জানান, রুশ ও বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের যৌথ প্রচেষ্টায় রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে এবং প্রথম ইউনিট উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর প্রকল্প শুধু প্রযুক্তিগত নয়, রাশিয়া-বাংলাদেশ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা ‘রোসাটম’ এর সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদনক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং বর্তমানে প্রকল্পের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক চালুর প্রস্তুতিতে রয়েছে।

উল্লেখ্য, রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়ার প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন রয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর অন্যতম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু এ বছরই: রুশ রাষ্ট্রদূত