ছিল সপ্তাহের শেষ দিন। সরকারি ছুটি। পুরো মাস বইমেলায় যারা যেতে পারেননি, শিশুসন্তানকে হাতে আগলে ছুটেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। সকাল থেকে মেলা শুরু হলেও ভিড় বাড়ে বিকেলে। সন্ধ্যায় জনারণ্যে পরিণত হয়। নতুন জামা পরে তরুণ-তরুণীরা হাজির হন। কেউ কেউ বই কিনছেন; কেউ তুলছেন সেলফি। ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেলাজুড়ে। তবে প্রকাশকরা জানিয়েছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেক প্রকাশক হতাশার সুরে বলেন, এবার তাদের বিক্রি আশানুরূপ হয়নি।
গতকাল শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার এবারের আসরের পর্দা নেমেছে। মাসজুড়ে চলা মেলায় বিক্রি কেমন ছিল– এমন প্রশ্নে অমর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী অমর সাহা বলেন, ‘আমি বলব, আমার প্রকাশনী থেকে বিক্রি ভালোই হয়েছে। যা হয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে তাতেই চলে যাবে। তবে সার্বিক মেলায় অনেক সিঙ্গেল ইউনিটে প্রকাশকদের বিক্রির হার কম ছিল।’ ম্যাগনাম ওপাসের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার ফরিদী বলেন, এবারের মেলাটি ছিল অসফল। বিক্রি নেই, পাঠক নেই। শুধু বই ও স্টলের সঙ্গে ছবি তোলা ও ঘুরে বেড়ানো।
শেষ দিনে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে বিকেলে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। মেলা মাঠে দেখা হয় কথাসাহিত্যিক হামিম কামালের সঙ্গে। পুরো মেলা প্রসঙ্গে তিনি আশাবাদের সুরে বলেন, শুরুর দিকে কিছু শঙ্কা কাজ করছিল। ছন্দপতনও ঘটেছে। কিন্তু মানুষের ভেতর জ্ঞানের প্রতি ও মিলনমেলার প্রতি খুবই মৌলিক আগ্রহ ও ব্যগ্রতা দেখা গেছে। এ কারণে মেলার পরের দিনগুলোতে দেখতে পাই– সব দ্বিধা ও পশ্চাৎপদতা দূরে ঠেলে তারা মেলায় শামিল হয়েছেন।
ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় মেলা। শেষ প্রহরে বিকেল ৫টায় সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এর সদস্য সচিব ড.
মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘এমন এক পরিস্থিতিতে এবার বইমেলার আয়োজন করতে হয়েছে, যখন দেশে পুলিশ নেই, ব্যুরোক্রেসি ফাংশন করছে না। সংস্কৃতির ট্রেনটা লাইনে তুলতে ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে। আমার মনে হয়, সেটি এখন ঠিক লাইনে চলছে।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কিছু অস্থিরতা সত্ত্বেও এ বছর আমরা বইমেলার আয়োজন করেছি। প্রতি বছর মেলায় সেরা বইগুলোর জন্য বাংলা একাডেমি থেকে বিশেষ পুরস্কার প্রবর্তন করা প্রয়োজন।
সদস্য সচিব সরকার আমিন প্রতিবেদনে বলেন, বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ সব প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হয়েছে। একাডেমি ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বই বিক্রি করেছে।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের চেতনাবহ ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ভাষার জন্য জীবনদানকারী শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার একটি মাধ্যম।’
এবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ২৯৯টি। এর আগে ২০২৪ সালে বই প্রকাশিত হয় ৩ হাজার ৭৫১টি ও ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৭৩০টি। লেখক বলছি মঞ্চে নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিমুল পারভীন ইতি, গবেষক আবদুল আলীম, গবেষক এম এ মোনায়েম এবং কবি মঈন মুনতাসীর।
সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আল মুজাহিদী, হান্স হার্ডার ও বর্ণালী সাহা
শেষ দিনে কবি জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫ এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমির ‘কবি জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫’ এ ভূষিত হয়েছেন কবি আল মুজাহিদী এবং ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এ ভূষিত হয়েছেন অধ্যাপক হান্স হার্ডার ও কথাশিল্পী বর্ণালী সাহা। তাদের পুরস্কারের অর্থ, সম্মাননাপত্র ও স্মারক দেওয়া হয়।
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পেল যেসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান
অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫ দেওয়া হয়। গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশ (প্লেটো: জীবন ও দর্শন– আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া), ঐতিহ্য (ভাষাশহিদ আবুল বরকত: নেপথ্য কথা– বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথাপ্রকাশকে (গোরস্তানের পদ্য : স্মৃতি ও জীবনস্বপ্ন-সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়।
২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কাকাতুয়াকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল এক ড ম র র জন য বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ও নির্দেশনা প্রকাশ
দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডে ১০ম গ্রেডভুক্ত ‘অফিসার (জেনারেল)’ পদের বাছাই পরীক্ষার (এমসিকিউ) ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০০ জন। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়। বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ও নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
লিখিত পরীক্ষার তারিখ ও সময়: আগামী ১৫ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
পরীক্ষার স্থান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে (৫ম তলা, এক্সাম হল-০২)।
লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য নির্দেশনা–১. প্রবেশপত্র ব্যতিরেকে কোনো প্রার্থীকে পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
২. পরীক্ষার কেন্দ্রে ক্যালকুলেটর, বই, কাগজ, মুঠোফোন, স্মার্টওয়াচ, সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসদৃশ কোনো ডিভাইস, গয়না, ব্রেসলেট, মানিব্যাগ বা ওয়ালেট ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৩. প্রয়োজনীয় চেকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা পূর্বে প্রার্থীদেরকে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে।
৪. পরীক্ষার সময় প্রার্থীরা কানের ওপর কোনো আবরণ রাখতে পারবেন না, উভয় কান দৃশ্যমান রাখতে হবে।
আরও পড়ুন১০ ব্যাংক ও ১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান নেবে ১৮৮০ অফিসার, ফি ২০০৩০ অক্টোবর ২০২৫৫. পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীদেরকে কোনো প্রকার টিএ/ডিএ প্রদান করা হবে না।
১৭ সেপ্টেম্বর দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডে ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত ২৩ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১১ অক্টোবর অফিসার (জেনারেল) পদের বাছাই পরীক্ষা (এমসিকিউ) অনুষ্ঠিত হয়। এই পদে তিনজনকে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনমেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, নম্বর কাটাসহ যে যে পরিবর্তন৩০ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুন৪৮তম বিশেষ বিসিএসে আর পদ বাড়ানোর সুযোগ নেই৩০ অক্টোবর ২০২৫