নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে এক ছাত্রীকে (৭) ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা সালিশে আপসরফার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার বিকেলে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াজি বাড়ির পেছনে ওই বৈঠক হয়। সেখানে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আপসের চাপ দেওয়া হয় ভুক্তভোগীর স্বজনকে। যদিও শিশুটির পরিবার তা মানতে রাজি হয়নি। রোববারই মেয়েটির মা মামলা করেন। আজ সোমবার এ মামলার আসামি মো.

শাহরুখকে (১৯) নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গত শনিবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে ওই মেয়েটিকে কৌশলে রাস্তা থেকে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে শাহরুখ। এ সময় শিশুটির চিৎকারে এক পথচারী এগিয়ে এলে ওই তরুণ পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে সালিশে আপস মীমাংসার চেষ্টা চলে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার রায় দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়েটির মা সঠিক বিচারের দাবিতে অনড় থাকেন। তিনি স্থানীয় মীমাংসায় রাজি হননি। রোববার তিনি বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

মামলার আগেই রোববার সালিশ বসে। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, সালিশের শুরুতে শাহরুখের এক স্বজন সালিশকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনরা যাই বলেন তাই মানি।’ তখন পাল্টা আরেকজন বলেন, ‘মানেন বলেই তো স্বাক্ষর দিয়েছেন।’ পরে সালিশে উপস্থিত কয়েকজন মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সালিশকারী মো. আলী ওরফে জনিকে কথা বলতে বলেন। তখন জনি বলেন, ‘শাহরুখ ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ায় সে অভিযুক্ত। সবার সম্মতিক্রমে কোর্ট-কাচারির দিকে না গিয়ে আমাদের এখানে রায় হয়েছে, শাহরুখের ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২০টি বেত্রাঘাত দেবেন অভিভাবকরা। এ বিচার মানলে স্ট্যাম্প সালিশদার আলমগীরের কাছে থাকবে। বিচার না মানলে স্ট্যাম্প নিয়ে যান।’ তখন আলমগীর বলেন, ‘স্ট্যাম্প দেওয়া হবে না।’ এর পর সালিশকারীরা ছেলেকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিয়ে শাহরুখের বাবাকে বলেন, ‘বেত্রাঘাতের বিষয়টি এখন নেই, তবে মিডলইস্টের দেশে আছে।’ এ সময় জরিমানার টাকা একদিন পর দেওয়ার কথা বলেন শাহরুখের বাবা। তার মা এসে ছেলেকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করলে সে চলে যায়।

এই ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা শিশু ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় যারা আপসের চাপ দিয়েছেন, সেই সালিশকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। 

এ বিষয়ে মো. আলী ওরফে জনি বলেন, তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। নিজেকে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেন, সালিশকারীরা বেশির ভাগই বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাহার কন্ট্রাক্টর মুছাপুর ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও নয়ন আওয়ামী লীগ সমর্থক।

জনির ভাষ্য, ‘রোববার বিকেলে সালিশকারী জসিম, নয়ন, বাহার কন্ট্রাক্টর, সিকদারের বাড়ির সাইফুল, দুলাল, হারুনসহ নির্যাতিত শিশুর মা আমাকে ডেকে সালিশে নেন। ঘটনাটি আমার পাশের বাড়ির। শিশুর মা কান্নাকাটি করায় আমি গিয়েছি। আমার যাওয়া ঠিক হয়নি।’ তিনি দাবি করেন,  রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সালিশের ভিডিওটি ভাইরাল করে ঘায়েল করতে চাইছে।

মোহাম্মদ আলী জনি বিএনপির রাজনীতিতে থাকলেও তিনি দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার। বিষয়টি তারা দেখছেন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, ‘সালিশের ভিডিওটি দেখেছি। বৈঠকে যারা ছিলেন, চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ তিনি জানান, শিশু ধর্ষণচেষ্টার মামলায় একমাত্র আসামি শাহরুখকে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে নোয়াখালী শহরের সোনাপুর জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ