Samakal:
2025-07-31@06:43:31 GMT

স্পষ্ট বার্তা এলো স্বাধীনতার

Published: 4th, March 2025 GMT

স্পষ্ট বার্তা এলো স্বাধীনতার

১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হওয়ার পর পূর্ববাংলার সমগ্র জনগোষ্ঠীর মনে যে আগুন জ্বলে ওঠে, তার আঁচ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও গায়ে লাগে। ২ মার্চ হরতালের মধ্যে ডাকসু ও ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় সমাবেশ করে। একই দিন বিকেলে পল্টন ময়দানে ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন বিশাল জনসভা করে। ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের সভাপতিত্বে সে জনসভার বক্তাদের কণ্ঠে ছিল স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান। বায়তুল মোকাররমে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় লীগের জনসভায়ও ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, পেছানোর আর উপায় নেই। নবগঠিত ফরোয়ার্ড স্টুডেন্টসও বায়তুল মোকাররমে ছাত্রসভা করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে জনগণকে আহ্বান করে।

২ মার্চ পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের নেতা সিরাজ সিকদার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশে এক খোলা চিঠি লিখে দেশপ্রেমিক প্রকাশ্য ও গোপন সব দলের সমন্বয়ে অস্থায়ী সরকার ও জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব করেন।

এদিকে এত কিছুর সংবাদ পেয়েও ২ মার্চ জুলফিকার আলি ভুট্টো বলেন, অধিবেশন স্থগিত করায় এমন ক্ষতি হয়নি। ফলে জনতার মনের আগুন আরও অক্সিজেন পায়। ৩ মার্চ মওলানা ভাসানী ঢাকা এসে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখে যাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে একটি জরুরি বার্তা পাঠান। ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনের ২০ জন শিল্পী গণতন্ত্রবিরোধী গোষ্ঠীর নির্যাতন চালানোর প্রতিবাদে এসব গণমাধ্যমের অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিবৃতি দেন। ইয়াহিয়া খান পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আওয়ামী লীগসহ ১০টি দলের বৈঠক ডাকেন। ইয়াহিয়ার এই সভাকে বন্দুকের নলের মাথায় ‘নিষ্ঠুর তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন বঙ্গবন্ধু। 

পল্টনে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের যৌথ জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, আমি মরে গেলেও ৭ কোটি মানুষ দেখবে– দেশ সত্যিকারের স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, হয়তো এটাই আমার শেষ ভাষণ। আমি যদি নাও থাকি, আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন যাতে না থামে।

নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বঙ্গবন্ধুকে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়। বিপুল সংখ্যক নারীও এদিন লাঠি হাতে সমাবেশে যোগদান করে। ঢাকার আন্দোলনে মেয়েদের লাঠি ধরার ঘটনা সেটাই ছিল প্রথম। 

সভায় শাজাহান সিরাজ পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ পাঠ করেন। ইশতেহারে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা আখ্যা দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেই সভাতেই রাষ্ট্রের নাম, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা নির্ধারণ করে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রতিটি অঞ্চলে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটি’ গঠনসহ সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা ঘোষণা করা হয়।

পল্টনের ওই জনসভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার আনন্দে উদ্বেলিত মানুষ রাজপথে প্রথম প্রকাশ্য স্লোগান ধরে– ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘গ্রামে-গ্রামে দুর্গ গড়ো/ মুক্তিবাহিনী গঠন করো’ ইত্যাদি। 

জনসভায় ৪ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহ্বান জানানো হয়। ৫ মার্চ বায়তুল মোকাররম থেকে লাঠি মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

জাতীয় পরিষদের অধিবেশন না ডাকার পেছনে ইয়াহিয়া খানের উদ্দেশ্য ছিল ছয় দফার ব্যাপারে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে নমনীয় হতে বাধ্য করা। কার্যত তা বুমেরাং হয়। ৩ মার্চের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করেই বলেন– আমার মৃত্যু হতে পারে, কিন্তু ছয় দফা বদলাবে না।

৩ মার্চ সারাদেশে পূর্ণ হরতাল শেষে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেটে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ২০০-এর বেশি আহত লোককে ভর্তি করা হয়। এদের ৯৯ শতাংশের দেহে বুলেটের আঘাত ছিল। ঢাকায় নিহতের সংখ্যা ৪৭ বলে দাবি করা হয়।

রাজশাহীতে ঘটে অভূতপূর্ব এক ঘটনা। এদিন সেখানে টেলিফোন অফিসের সামনে সামরিক বাহিনীর গুলিতে আহতদের স্থানীয় মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। তাদের কয়েকজন ব্যাংকের দেয়ালে নিজের শরীর থেকে নিঃসৃত রক্ত দিয়ে লেখেন– ‘বাংলাদেশ স্বাধীন কর’।

৪ মার্চও হরতাল ছিল। পূর্বের দুই দিনের তুলনায় একটু শান্ত অবস্থা বিরাজ করে, যদিও চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়। খুলনায় ৩৩ জন হতাহত হয়। এদিন ঢাকায় আকস্মিকভাবে কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়। আনন্দে মানুষ রাস্তায় বের হয় মিছিল নিয়ে। 

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯ জন শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি পৃথক বিবৃতিতে সশস্ত্র বাহিনীর নির্দয় হত্যাযজ্ঞের নিন্দা করে। তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা পোষণ করেন। বেতার-টেলিভিশন শিল্পীরা তাদের অনুষ্ঠানমালা বর্জন করে বিবৃতি দেন।

ছাত্রলীগ ও ডাকসু পাড়া-মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও সংগ্রাম কমিটি গঠন করে আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয়। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত নেতৃ সম্মেলন প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়। মতিয়া চৌধুরী এ সমাবেশে বলেন, বাংলার মানুষ আজ এক দফার সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নও প্রেস ক্লাবে জরুরি সভা করে পূর্ববাংলার মুক্তিপাগল জনতার সঙ্গে সংহতি জানায়।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল। তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস: ১৮৩০-১৯৭১, ড.

মোহাম্মদ হাননান।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র রহম ন জনসভ য় অন ষ ঠ র জন য হরত ল

এছাড়াও পড়ুন:

আশুলিয়ায় বিএনপির জনসভা ও এনসিপির পদযাত্রা আজ, নিরাপত্তা জোরদার

সাভার উপজেলার আশুলিয়ার কাছাকাছি স্থানে বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পৃথক কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ বুধবার দুপুরের পর আশুলিয়ায় শ্রীপুর এলাকায় বিএনপির জনসভা করার কথা আছে। সেখান থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বাইপাইল এলাকায় বিকেলে পদযাত্রা ও পথসভার কর্মসূচি রয়েছে এনসিপি।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পরিবারের সম্মানে আজ বেলা ৩টার দিকে শ্রীপুরের দারুল ইহসান মাদ্রাসা মাঠে জনসভা করবে দলটি। ঢাকা জেলা বিএনপির আয়োজনে এই সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা আছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এ ছাড়া সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকতে পারেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। সভা পরিচালনা করবেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী।

নিপুণ রায় প্রথম আলোকে বলেন, তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ সবার উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। তাঁর নির্দেশনায় জনগণের স্বার্থ, অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা থাকবে। কাছাকাছি দূরত্বে এনসিপির কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, একে অপরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের কর্মসূচি দেবে এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কর্মসূচি পালন করবে—এটাই রাজনৈতিক সৌন্দর্য। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে। তবে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সবার মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। একে অপরের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচির সময়টি আগে পরে নির্ধারণ করা হয়েছে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও ঢাকা জেলার সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মেহরাব সিফাত প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল ৫টায় আশুলিয়ার বাইপাইলে পদযাত্রা ও সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকবেন। কাছাকাছি দূরত্বে বিএনপির সমাবেশ হলেও সময় ভিন্ন হওয়ায় কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাইপাইলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চন্দ্রামুখী সার্ভিস লেনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভার জন্য তৈরি মঞ্চ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আশুলিয়ায় বিএনপির জনসভা ও এনসিপির পদযাত্রা আজ, নিরাপত্তা জোরদার