ময়মনসিংহে কম মূল্যে গরুর মাংস–ডিম বিক্রির উদ্যোগ, দাম আরও কমানোর দাবি
Published: 4th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহে পবিত্র রমজান উপলক্ষে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে ‘সুলভ মূল্যে’ গরুর মাংস ও ডিম বিক্রি শুরু হয়েছে। সেখানে সপ্তাহে ২ দিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জন ১ কেজি করে গরুর মাংস ও ১ ডজন করে ডিম কিনতে পারবেন। তবে মাংস ও ডিমের দাম আরও কিছুটা কমানোর দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।
আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে এ বাজারের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে জেলা প্রশাসন ও জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এ ছাড়া বিক্রয় ও বিপণনের কাজ করছে ‘বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন’।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায, প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার সেখানে ‘সুলভ মূল্যে’ মাংস ও ডিম বিক্রি করা হবে। আপাতত ৬৫০ টাকায় ১ কেজি গরুর মাংস কিনতে পারবেন ক্রেতারা। আর ১ ডজন ডিমের দাম নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। স্থানীয় বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও প্রতি ডজন ডিম খুচরা বাজারে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানুষের চাহিদা বাড়লে সুলভ মূল্যের বাজারে পণ্যগুলোর পরিমাণও বাড়ানো হবে বলে জানান আয়োজকেরা। গত রমজানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গরুর মাংস ৫৫০ টাকা এবং প্রতি ডজন ডিম ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
আজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিক্রি শুরু কথা থাকলেও শুরুর দিকে ক্রেতার উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। আয়োজকেরা বলছেন, দিন দিন ক্রেতার উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে।
হোসনা বেগম নামের এক নারী ক্রেতা বলেন, ‘বাজার থেকে সেখানে মাংস ও ডিমের দাম কিছুটা কম। তবে গত বছর গরুর মাংস ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেছিল প্রশাসন। এবার ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আমরা চাই, দাম আরও কিছুটা কমানো হোক।’
আবদুর রশিদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারের থেকে সেখানে পার্থক্য তেমন বেশি না। সেখানেও লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস ও ডিম কিনতে হয়। সরকার যেহেতু ভর্তুকি দিচ্ছে, দাম আরেকটু কম হলে আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য উপকার হয়।’
উদ্বোধনের সময় ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, রমজান উপলক্ষে সাধারণ মানুষের খাদ্যতালিকায় যেসব পণ্য থাকে, সেগুলো যেন কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারে, তাই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুধ বিতরণের ব্যবস্থাও করা হবে। সারা মাস এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ক্রেতাদের দাম কমানোর দাবির প্রসঙ্গে জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য নিম্ন আয়ের মানুষকে বাজার থেকে কিছুটা কম মূল্যে গরুর মাংস ও ডিম দেওয়া। এখানে সরকারি কোনো ভর্তুকির ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে উৎপাদন মূল্যে ডিম ও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতার যদি ১০০ টাকাও সেভ হয়, তাহলেও আরেকটা কাজ হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ম আর
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহের সেই মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল, অপসারণের উদ্যোগ
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে পরিচালিত মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল করে অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এক দশকের বেশি সময় ধরে চিড়িয়াখানাটি পরিচালিত হলেও সিটি করপোরেশনকে চুক্তির টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
আজ বুধবার সকালে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ। মিনি চিড়িয়াখানা অপসারিত হওয়া স্থানে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ৮ এপ্রিল প্রথম আলো অনলাইনে ‘ময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেদিন বিকেলে বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট সেখানে অভিযান চালিয়ে ৪৮টি প্রাণী জব্দ করে অবৈধভাবে পরিচালিত চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দেয়।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ভালুকের শরীরে পচন ধরার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই শুরু করে কর্তৃপক্ষ। জয়নুল আবেদিন উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা ও চিড়িয়াখানাসংলগ্ন শিশুপার্কের ভূমি ইজারার চুক্তিপত্র বাতিল করে গত ২৬ জুন ইজারাগ্রহীতা মো. সেলিম মিয়াকে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সেখানকার অবকাঠামো ও পশুপাখি নিজ হেফাজতে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। ইজারাগ্রহীতা সেলিম মিয়া হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের শ্যালক। চলতি বছরের ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন মাহবুবুর রহমান।
চুক্তির টাকা পরিশোধের আগেই মেয়াদ শেষ
সিটি করপোরেশন থেকে সেলিম মিয়াকে দেওয়া চুক্তি বাতিলের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পৌরসভা মিনি চিড়িয়াখানাটি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ইজারার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ৬ লাখ টাকায় চিড়িয়াখানাটি ইজারা দেওয়া হয় এবং ৩ বছর পরপর শতকরা ১০ শতাংশ ভাড়া বর্ধিত হিসাবে দেওয়ার কথা। নথিপত্রে নিরাপত্তা জামানত ৩ কিস্তিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও ইজারার টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয়নি, যা অর্থ আত্মসাতের শামিল। অন্যদিকে গত বছরের ৩০ জুন ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চিড়িয়াখানা দখলে আছে, যা সুস্পষ্টভাবে অন্যায় এবং অপরাধমূলক কার্যক্রম হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বন বিভাগের যথাযথ অনুমতি না নিয়ে ২৩ প্রজাতির প্রাণী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল মিনি চিড়িয়াখানাটি। কিন্তু বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই মর্মে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছে। ওই চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেখানে দোকান ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ করে সাবলিজ দেওয়া হয়েছে, যা চুক্তিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অবশ্য সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোয় অভিযান চালিয়ে অপসারণ করেছে।
জায়গা ভাড়া নিয়ে শিশুপার্ক
মিনি চিড়িয়াখানার পাশের জমিটি ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মাসিক ১ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এটিও ইজারা দেওয়া হয় সেলিম এন্টারপ্রাইজকে। দুই শতক জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও চুক্তিপত্রে শিশুপার্কের কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয় বলে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে নিয়মিত মাসিক ভাড়া না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল, যা চুক্তিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়া, ভাড়ার টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা, ইজারা এলাকার কিছু অংশে দোকান ও রেস্তোরাঁ বানিয়ে সাবলিজ দেওয়া ও বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন–২০১২ অনুযায়ী ‘মিনি চিড়িয়াখানা’ স্থাপনের কোনো সুযোগ না থাকায় দুটির ইজারা দেওয়ার আগের চুক্তিপত্র বাতিল ঘোষণা করা হলো বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
৩৪ দিন আগে অপসারণের চিঠি দেওয়া হলেও আজ দুপুরে জয়নুল আবেদিন উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়। কাগজপত্রে সেলিম মিয়া ইজারাদার থাকলেও দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরা তাঁর মুঠোফোন নম্বরও দিতে পারেননি। সেখানে দায়িত্বরত কামাল হোসেন বলেন, ‘শ্যালকের নামে ইজারা নিলেও দেখাশোনা করতেন সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। তাঁর নম্বর আমাদের কাছে নেই। কাউন্সিলর এখন জেলে আছেন।’ তিনি বলেন, চুক্তি বাতিল করে অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশন চিঠি দেওয়ার পর তাঁরা বকেয়ার ব্যাপারে জানতে পারেন। এ অবস্থায় বকেয়া পরিশোধ ও চুক্তি নবায়ন করে কার্যক্রম চালানোর অনুরোধ জানিয়ে সিটি করপোরেশনে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ বলেন, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ, অর্থ পরিশোধ না করায় মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশের জমিতে করা শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেখানে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য লাইব্রেরি, খেলনা ও কিছু রাইড থাকবে এবং বাগান করে দেওয়া হবে। শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করবে।
বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, সিটি করপোরেশন মিনি চিড়িয়াখানা অপসারণ করলে প্রাণীগুলো জব্দ করে তাঁরা বনে অবমুক্ত করে দেবেন।
আরও পড়ুনময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন০৮ এপ্রিল ২০২৫