কোনো জাতি কি তার কূটনৈতিক পুঁজি নষ্ট করেছে; তার নিজস্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থা লুণ্ঠন করেছে কিংবা তার অংশীদারদের আক্রমণ করেছে? ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের মতো এত দ্রুত ও নির্লজ্জভাবে তার দুর্বল শত্রুদের সামনে নিজেকে সমর্পণ করেছে?
শুক্রবার ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে অগ্নিময় বৈঠক হয়েছে। এতে মার্কিন নেতা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এমন এক জাতির নেতাকে জনসমক্ষে অপমান করার চেষ্টা করেছেন, যা একটি জঘন্য ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মুখোমুখি।
এসবের কারণ জেলেনস্কি আত্মসমর্পণের একটি আইনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছিলেন, আর পুতিনের সমালোচনা করেছিলেন, যিনি বহুবার জেলেনস্কিকে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন; এবং তিনি আত্মস্বীকৃত রাজা ট্রাম্পের কাছে হাঁটু গেড়ে নত হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, ট্রাম্পের উদ্ভট আচরণ এখন স্বাভাবিকভাবে দেখা হচ্ছে। তাঁর প্রশিক্ষিত কুকুর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে ট্রাম্প জনসাধারণের কাছে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে তুলে ধরেন।
দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ট্রাম্পের ধ্বংসাত্মক বল ইতোমধ্যে বিশ্বে ভূমিকম্পের মতো প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার জন্য রাশিয়ার নিন্দা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দিয়েছিল। অন্যপক্ষে ছিল রাশিয়া, বেলারুশ ও উত্তর কোরিয়া। এমনকি চীনও ভোট দেয়নি।
যুক্তরাজ্যে ইউগভ জরিপে পাঁচ হাজারেরও বেশি উত্তরদাতাকে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। মাত্র ২০ শতাংশ ইউক্রেনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।
ট্রাম্প এক উদ্ভট পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজ নিজ প্রতিরক্ষা বাজেট অর্ধেকে নামিয়েছে। নিশ্চিতভাবেই তা শক্তির পরিবর্তে তাদের দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। যেখানে ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী করেছে, একই সঙ্গে তারা নিজেদের বন্ধুদেরও দুর্বল ও শঙ্কিত করে তুলেছে।
সহজ কথা হলো, ইউরোপ বা এশিয়ায় কোনো মার্কিন মিত্র এখন ওয়াশিংটন তাদের নিরাপত্তা-প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে সম্মান দেখাবে বলে আস্থা রাখতে পারে না। ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ন্যাটো সদস্যদের কাছে এটি স্পষ্টভাবে আনা হয়েছিল। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধিরা হতবাক দর্শকদের জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে আর ইউরোপীয় নিরাপত্তার প্রধান গ্যারান্টার হিসেবে দেখতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতার অর্থ হলো, ইউরোপীয় দেশগুলোকে দ্রুত নিজেদের সশস্ত্র করার ইচ্ছা ও উপায় খুঁজে বের করতে হবে। শুধু তাই নয়, বরং ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য সম্মিলিতভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে।
তারা তা করতে পারবে কিনা, তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। ইউরোপের নিষ্ক্রিয়তার ইতিহাস ভালো কিছু বয়ে আনবে না। মার্কিন মিত্রদেরও এশিয়ায় কাউকে বেছে নিতে হবে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এখন সাহসী চীনকে ঠেকাতে সব বিকল্প, এমনকি হয়তো পারমাণবিক অস্ত্রের কথা ভাববে। অস্ট্রেলিয়াতেও উদ্বেগ রয়েছে। এটা কি ভান করতে পারে যে কিছুই পরিবর্তন হয়নি এবং পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে?
যখন হোয়াইট হাউস ইউরোপে তার বন্ধুদের মতো একই উদাসীনতার সঙ্গে তাইপে, টোকিও, সিউল ও ক্যানবেরার প্রতি আচরণ করে, তখন মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে পূর্ণ জোট বাঁধার কৌশলগত অর্থ কী?
শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ২.
ম্যাথিউ সাসেক্স: অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স স্টাডিজ সেন্টারের ফেলো; দ্য কনভারসেশন থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সবুজ এলাকায় পুলিশের প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কম হয়
উন্মুক্ত স্থান সবুজ থাকার সঙ্গে পুলিশি সহিংসতার সম্পর্ক আছে। সবুজ পরিসর বেশি এমন এলাকায় পুলিশ প্রাণঘাতী গুলি কম চালায়। সবুজ ভূমির সঙ্গে পুলিশের আচরণের এই সম্পর্ক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক ও গবেষক। গবেষণার ফলাফল নিয়ে একটি প্রবন্ধ ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড বিহেভিয়ার’ নামের সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে। ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, নিরাপদ পাড়াপড়শি ও এলাকা নিরাপদ হওয়ার পেছনে ভূপ্রকৃতির মান ও পরিমাণের সম্পর্ক আছে।
গবেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ৩ হাজার ১০০ কাউন্টির (যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক অঞ্চল) সবুজ পরিসর ও পুলিশের প্রাণঘাতী গুলির ঘটনার পাঁচ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। সময় ছিল ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল। কাউন্টির মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকার ৮০৫টি কাউন্টিও ছিল।
গবেষণায় সামাজিক একটি পরিপ্রেক্ষিত যুক্ত করার জন্য গবেষকেরা সামাজিক বঞ্চনার কিছু সূচক ব্যবহার করেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, শিক্ষার স্তর, শুধু বাবা অথবা মা থাকা পরিবার, ভাড়া বাস, ঘন বসতি, গাড়িবিহীন পরিবার, চাকরিতে থাকা ৬৫ বছরের কম বয়সীদের হার। গবেষকেরা দাবি করেছেন, কঠোর নিয়মকানুন মেনে গবেষণাটি করা হয়েছে।
গবেষকদের মধ্যে একজনের সংশয় ছিল যে সবুজের সঙ্গে প্রাণঘাতী গুলি বেশি ব্যবহারের সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নেতিবাচক সম্পর্কই পাওয়া যায়। অর্থাৎ সবুজ যেখানে বেশি, গুলির ব্যবহার সেখানে কম।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেট্রোপলিটন এলাকার যেসব কাউন্টিতে সবুজ বেশি, সেখানে প্রাণঘাতী গুলির ব্যবহার ১৫ শতাংশ কম। আর পুরো যুক্তরাষ্ট্রে যেসব কাউন্টিতে সবুজ বেশি, সেখানে প্রাণঘাতী গুলির ব্যবহার ৯ শতাংশ কম। আবার সবুজের পাশাপাশি বঞ্চনা বেশি এমন এলাকাগুলোতে পুলিশের গুলির ঘটনা কম। সামাজিক বঞ্চনার নানা স্তরেই এটা দেখা গেছে।
সবুজের সঙ্গে পুলিশি সহিংসতার সম্পর্ক কী
গবেষকেরা বলছেন, সবুজ এলাকা যত বেশি, পুলিশি সহিংসতা তত কম হওয়ার সম্ভাব্য চারটি কারণ থাকতে পারে: ক. কোনো এলাকা সবুজ থাকার অর্থ এলাকাটিতে আশপাশের মানুষের আনাগোনা বেশি; খ. কোনো এলাকা সবুজ থাকার অর্থ এলাকাটির নিয়মিত যত্ন নেওয়া হয়, দেখভাল করা হয়; গ. সবুজ এলাকায় স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে; ঘ. সবুজ পরিবেশে অপরাধ কম হয়।
গবেষণা প্রবন্ধে আগের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সবুজ পরিসর মানসিক চাপ থেকে দ্রুত সামলে উঠতে সহায়তা করে। সবুজের কারণে অপরাধ ও সহিংসতা কম হয়।
গবেষকেরা বলছেন, সবুজ এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তারা কম মানসিক চাপে থাকেন, তাঁরা দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব দেখাতে চান। তাঁরা সহিংস আচরণ থেকে বিরত থাকেন। অন্যদিকে সবুজের ভেতরে বেশি সময় কাটানোর কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়, এলাকায় একধরনের অনানুষ্ঠানিক নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং ঝগড়া-দ্বন্দ্ব অহিংস পন্থায় মিটমাট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গবেষকেরা এ-ও বলছেন, বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা হওয়া দরকার। কারণ, অনেক সবুজ এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের দল বা গ্যাং সক্রিয় থাকে, সবুজ ঝোপঝাড়ের আড়ালে কিছু মানুষ লুকিয়ে অবৈধ কাজ করে। এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নেওয়ার জন্য সবুজের সঙ্গে সহিংসতার সম্পর্ক নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।