এ বছরের জানুয়ারি মাস ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস এ পরিসংখ্যান দিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারির তাপমাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ নিয়ে গত বছরের (২০২৪) জানুয়ারির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
এবার দেশে শীত তেমন পড়েনি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর সদ্য বিদায়ী ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা বেশি ছিল ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেখা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতিমধ্যে তাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলেছে, মার্চ মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো.
এল নিনো ও লা নিনার অবস্থা
বৈশ্বিক আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব আছে। এগুলো হলো প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর বাতাসের ধরন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার একটি অনিয়মিত কিন্তু পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন। এল নিনো বলতে বায়ুপ্রবাহের উষ্ণ পর্যায়কে বোঝায়। অন্যদিকে লা নিনা বোঝায় এর শীতল পর্যায়কে।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছিল। এর আগে, মহাসাগরের উপরিতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল, যা আবহাওয়াবিদদের ভাষায় ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি হিসেবে পরিচিত।
তবে চলতি বছরে লা নিনা প্রাধান্যশীল বলে ধরা হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে, গরম অত তীব্র নাও হতে পারে। কিন্তু আবহাওয়ার বিভিন্ন মডেল ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, লা নিনার প্রভাব অনেকটাই কমে আসছে।
যুক্তরাজ্য আবহাওয়া অফিসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যাডাম স্কাইফ বলেন, ‘মজার বিষয় হলো, ২০২৫ সালের উষ্ণ বৈশ্বিক তাপমাত্রার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যদিও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল লা নিনা পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা কিছুটা শীতল পরিস্থিতি তৈরি করছে।’
অ্যাডাম স্কাইফের ভাষ্য, ২০২৫ সালের মতো বছরগুলোতে যখন এল নিনোর উষ্ণায়নের প্রভাব নেই, সেই সময় আরও শীতল হওয়া উচিত। ২০১৬ সাল ছিল এল নিনোর বছর এবং সেই সময়ে এটি ছিল বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার রেকর্ডের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। যদিও ২০২৫ সালের জন্য আমাদের পূর্বাভাসের তুলনায়, ২০১৬ এখন স্পষ্টতই শীতল দেখাচ্ছে।
আবহাওয়ার বৈশ্বিক পূর্বাভাসগুলো কী বলছে
জাপান আবহাওয়া সংস্থা গত ডিসেম্বরেই জানিয়েছিল, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত মহাসাগর থেকে পশ্চিম–উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে, দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার অনেক অংশসহ, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকবে।
বাস্তবেও তা–ই হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ না, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইন পর্যন্ত অবস্থা মোটামুটি একই রকম ছিল।
যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের ওয়েবসাইটে দেওয়া পূর্বাভাস বলছে, ২০২৫ সাল বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রার নিরিখে উষ্ণতম বছরের মধ্যে একটি হতে পারে। ২০২৪ এবং ২০২৩ সালের ঠিক পরেই থাকবে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) ইতিমধ্যেই বলেছে, ২০২৪ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণ বছর। প্রথমবারের মতো এটি প্রাক্-শিল্প (১৮৫০-১৯০০) স্তরের চেয়ে প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করেছে। ২০২৩ সালে ১ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করেছি। সেটিও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উষ্ণতম বছর ছিল। সেই ধারাবাহিকতা ২০২৫–এও চলতে পারে বলে এ সংস্থা বলছে।
লা নিনার কারণে গরম যে খুব কমে যাবে, তা বলছে না জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তসরকারি প্যানেল বা আইপিসিসি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লা নিনার শীতল প্রভাব সত্ত্বেও চরম তাপ এখনো উদ্বেগের বিষয়। এশিয়ায়, তাপপ্রবাহের তীব্রতা বেড়েছে, সেই সঙ্গে শীতের তীব্রতা কমে গেছে। প্রবণতা আগামী দশকগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছিলেন, এবার লা নিনার বছর হলেও গত বছরের চেয়ে তাপমাত্রা এবার অনেকটা কমে যাবে এমন সম্ভাবনা কম। গত বছরের উষ্ণ আবহাওয়ার ধারাবাহিকতা এবারও থাকতে পারে। এর জন্য যে শুধু বৈশ্বিক আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতিই কারণ, তা–ই নয়। গাছ উজাড়, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ পরিবেশবিরুদ্ধ নানা কর্মকাণ্ডের ভূমিকা আছে।
অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট, বুয়েটউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৫ স ল পর য য এল ন ন দশম ক বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
নারী বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন কত টাকা পাবে, সপ্তম হওয়া বাংলাদেশ পেয়েছে কত
৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ২০২৫ আইসিসি নারী বিশ্বকাপ শেষ হচ্ছে আজ। নাবি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ট্রফির জন্য লড়বে স্বাগতিক ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই দলের জন্যই প্রথমবার শিরোপা জয়ের সুযোগ এটি। তবে ট্রফির পাশাপাশি অর্থের হাতছানিও কম নয়।
বিশ্বকাপ জিতলে ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকা পাবে ৪৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। ফাইনালে হেরে রানার্সআপ হওয়া দলের প্রাপ্তি চ্যাম্পিয়নের ঠিক অর্ধেক—২২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। দুই ফাইনালিস্ট দলের মধ্যে কারা কত পায়, সেটি জানতে তাই ফাইনালের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে বাকি ৬ দলের কারা কত পাচ্ছে, সেই হিসাব এরই মধ্যে সম্পন্ন।
এবারের নারী বিশ্বকাপে মোট ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার অর্থ পুরস্কার রেখেছে আইসিসি, যা ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আসরে ছিল মাত্র ৩৫ লাখ ডলার। এমনকি ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ছেলেদের বিশ্বকাপেও মোট প্রাইজমানি ছিল কম—১ কোটি ডলার।
রেকর্ড অর্থ পুরস্কারের কারণে প্রতিটি দলের প্রাপ্তিও বেড়েছে। পুরস্কারগুলো মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে অংশগ্রহণ, টুর্নামেন্টে অবস্থান এবং জয়সংখ্যা। এর মধ্যে প্রথমটি সবার জন্যই সমান। অর্থাৎ বাংলাদেশ যা পাবে, চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলও তা-ই পাবে। এই খাত থেকে বাংলাদেশ পাচ্ছে আড়াই লাখ ডলার।
আরও পড়ুনবিশ্বকাপে কেমন খেলল বাংলাদেশের মেয়েরা২৭ অক্টোবর ২০২৫টুর্নামেন্টে অবস্থানের ভিত্তিতে যে অর্থ, সেখানে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের অর্থের পরিমাণ তো আগেই বলা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী অন্য ৬ দলের মধ্যে দুই সেমিফাইনালিস্ট ১১.২০ লাখ ডলার করে, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে দুই দল ৭ লাখ ডলার করে আর সপ্তম ও অষ্টম স্থানে থাকা দুই দল ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার করে পাচ্ছে। বাংলাদেশ লিগ পর্বের খেলায় ৩ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম হয়েছে। অর্থাৎ টুর্নামেন্টে অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ পাচ্ছে ২.৮০ লাখ ডলার।
তৃতীয় খাত জয়ের সংখ্যায়। বাংলাদেশ দল ৭ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে একটিতে—পাকিস্তানের বিপক্ষে। এখান থেকে জয় বাবদ ৩৪ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
সব মিলিয়ে এবারের নারী বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ বাবদ আড়াই লাখ, সপ্তম হিসেবে ২.৮০ লাখ এবং এক জয় বাবদ ৩৪৩১৪ ডলার মিলিয়ে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩১৪ ডলার পাচ্ছে, যা বর্তমান মুদ্রাবাজার অনুসারে (১ ডলার= ১২২.৩২ টাকা ধরে) বাংলাদেশি টাকায় ৬ কোটি ৯০ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
আরও পড়ুননারী বিশ্বকাপের প্রাইজমানি বাড়ল চার গুণ, কোন দল কত টাকা পাবে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫