অভ্যুত্থানে হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিতে জাবি প্রশাসনের গড়িমসির অভিযোগ
Published: 5th, March 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিতে গড়িমসি এবং পুনর্বাসনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তারা হামলাকারীদের বিচারে প্রশাসনের গড়িমসির সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কীভাবে জেলে ও হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দেয়, সেই প্রশ্ন তোলেন।
আরো পড়ুন:
নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন
জেলে ও হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন জাবিতে হামলাকারী ২ ছাত্রলীগ নেতা
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ইমন বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রশাসন জেনে বা না জেনে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগের হামলাকারী এবং অবাঞ্চিতরা এখনো কীভাবে পরীক্ষায় অংশ নেয়?”
তিনি লোক প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আপনি ছাত্রলীগকে এভাবে পুনর্বাসিত করলে আপনার চেয়ার থাকবে না, টেনে—হিঁচড়ে নামাবো। আবার এমন করলে ছাত্রলীগের দোসরদের মতোই আপনার পরিণতি হবে। মবের কারনে মৃত্যু হয় শামীম মোল্লার, কিন্তু সেখানে বিপ্লবীদের পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়। প্রশাসনকে বলতে চাই সঠিক তদন্ত করে বিপ্লবীদের ফিরিয়ে আনুন। জুলাই হামলাকারীদের দ্রুত বিচার করুন।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাকিব আল মাহমুদ অর্ণব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিচারের নামে কমিটি কমিটি করে যে টালবাহানা করছে, অতিদ্রুত এ নাটকের অবসান ঘটাতে হবে। কিভাবে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের কর্মীরা হাসপাতালে ও জেলে বসে পরীক্ষা দিতে পারে? যেখানে আমাদের বিপ্লবীদের জীবন আজ বিপন্ন। আজ কেন আমার ভাই আহসান লাবিবকে লুকিয়ে থাকতে হবে, কেন রায়হান আজ জেলে, কেন আমার ভাই হামিদুল্লাহ সালমান ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারে না?”
তিনি বলেন, “আমাদের বিজয় অর্জনের সাত মাস পরেও প্রশাসন এখনো সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোন মামলা করতে পারেনি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। পক্ষান্তরে এ প্রশাসন বিপ্লবীদের প্রাপ্য সম্মান দিতে পারেনি। অতিদ্রুত হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে এবং আমাদের বিপ্লবী ভাইদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচারমূলক মামলা করা হয়েছে, তা তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে পুনর্বহাল করতে হবে।”
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “হাসপাতালে ও জেলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতারা। গত ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগনেতা শামীম মোল্লা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেছিল। সেই শামীম মোল্লা গণঅভ্যুত্থানের পর মব জাস্টিসের শিকার হলো। এরপর প্রশাসন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার ২ ঘণ্টা পর শামীম মোল্লা মারা যাওয়ার সংবাদ আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে নয়, পুলিশের হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এ ঘটনায় বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার ভিতরে মামলা করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের উপর এখনো মামলা দিতে পারেননি। আপনারা সত্যিকারে যদি গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হয়ে থাকেন, তাহলে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করুন।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।”
ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।
গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ