রাজবাড়ী ও ঝিনাইদহ দিয়ে বয়ে গেছে গড়াই নদ। নদের এক প্রান্তে রাজবাড়ী, বিপরীত প্রান্তে ঝিনাইদহ। দুই পাড়ের মানুষ নদে গোসল করা, গরু-মহিষ গোসল করানোসহ নিত্যদিনের কাজ করতেন। তবে এক মাসের বেশি সময় ধরে নদে কুমির দেখা যাওয়ায় দুই পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে একটি, দুটি কিংবা তিনটি কুমির একসঙ্গে ভেসে ওঠে। কুমির বেশির ভাগ সময় রাজবাড়ী সীমান্তে দেখা যায়, মাঝেমধ্যে ঝিনাইদহের দিকেও দেখা যায়। কুমির একনজর দেখতে প্রতিদিন দুই জেলার নদের পাড়ে বহু মানুষ ভিড় করেন।

কুমিরের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করতে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা প্রশাসন থেকে গত সোমবার ও মঙ্গলবার এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। গতকাল বুধবার পাংশা উপজেলা বন বিভাগ থেকে ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ লেখাসংবলিত লাল কাপড় নদের পাড়ে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাংশা উপজেলা ফরেস্টার মো.

আজিজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের কেওয়াগ্রাম ঘাট। গড়াই নদের অপরপ্রান্তের অংশ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার খুলুমবাড়ি ঘাট।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কেওয়াগ্রাম ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, দুই পাড়ে শত শত শিশু, নারী ও পুরুষের ভিড়। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন কুমির দেখতে। কিছুদূর পরপর মানুষের জটলা। সবার দৃষ্টি নদের দিকে।

কেওয়াগ্রাম ঘাটের পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোহনের ঘাট। এরপরই রাজবাড়ী জেলা শেষ, কুষ্টিয়া জেলা শুরু। কেওয়াগ্রাম ঘাটের পূর্বে মাগুরা জেলা। চার জেলার মধ্যবর্তী কেওয়াগ্রাম ও খুলুমের ঘাট। প্রতি ঘাটে মানুষের ভিড়। সবার দৃষ্টি নদের দিকে। স্মার্টফোন নিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকে, কুমির দেখামাত্র ভিডিও বা স্থিরচিত্র ধারণ করে।

প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের সুবর্ণাখোলা থেকে আসা ভ্যানচালক রেজাউল করিম বলেন, সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীপুর গ্রামের লোকজন প্রায় দুই মাস আগে গড়াই নদে কুমির দেখেন। তখন তাঁদের নিয়ে তাঁরা হাসাহাসি করতেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি কেওয়াগ্রাম ঘাটে বসে কুমির দেখেন। একটা মহিষ পানিতে থাকলে যতখানি লম্বা দেখা যায়, কুমিরটাও ততখানি লম্বা ছিল বলে তাঁর দাবি।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হুসাইন বন্ধুকে মোটরসাইকেল নিয়ে কেওয়াগ্রাম ঘাটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘শুনলাম নদীতে কুমির ভাসছে। তাই দেখতে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কুমির দেখতে পাইনি। শুনেছি অনেকে কুমির দেখেছেন।’

কেওয়াগ্রাম ঘাটের কাছে কুমির দেখতে এসেছেন জামাল শেখ নামের একজন। তিনি বলেন, ‘কাইলকা ঘাটের কাছে সকাল ৯টার দিকে দুবার দেখলাম বড় কুমির ভাইসা আছে। পয়লাবার হাতখানেক মাথা জাইগা উইঠা নিচের দিকে গেল। আবার পরে উঠে শাঁই করে চলে গেল।’

স্থানীয় জেলে পলাশ মন্ডল বলেন, ‘ঘাটের কাছে রাত ১১টার সময় খেও জাল মারিছে। জাল টান দিয়ে উঠানোর সময় গুততালি মারলে জাল ফেলে পাড়ে উঠে পড়ি। এ সময় জাল ছিঁড়ে কুমির চইলা যায়। নদীতে ভয়ে কেউ নামছে না। নদীর পাড়ে বসে বদনা দিইয়া গোসল করছে। আগে এখানকার পোলাপান নদী সাঁতরে চলে যেত।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তামজিদ হোসেন বলেন, প্রায় দুই মাস গড়াই নদে কুমির দেখা যাচ্ছে। সাধারণত বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে ভেসে ওঠে। তবে তিনি কয়েক দিন নদের পাড়ে ঘুরে কুমিরের দেখা পাননি।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আবু দারদা বলেন, ‘১৫-২০ দিন আগে কসবামাজাইল ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কুমিরের বিষয় শুনি। স্থানীয়ভাবে ভিডিওর মাধ্যমে নিশ্চিত হই। বন বিভাগের মাধ্যমে ঢাকা বন বিভাগের কাছে একটি টিম চাওয়া হয়েছে, যাতে নিরাপদ স্থানে সরানো যায়। আপাতত সতর্ক থাকতে এলাকায় মাইকিং করে ও কাপড় টানিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নদ র প ড় ঝ ন ইদহ সতর ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ