আবু সাঈদ হত্যা মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে: আইজিপি
Published: 6th, March 2025 GMT
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলা পুলিশ বাহিনীর জন্য ল্যান্ডমার্ক কেস এবং এর বিচার যেন কোনোভাবে ব্যর্থ না হয়, সেজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে পুলিশ বিভিন্ন বাধা ও আক্রমণের শিকার হচ্ছে, তাই সমাজকে বেশি আবেগতাড়িত না হয়ে পুলিশকে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের হলরুমে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের উপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
নরসিংদীতে জুয়ার টাকা সংগ্রহে সহকর্মীকে হত্যা, ২ বন্ধু গ্রেপ্তার
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝিকে কুপিয়ে হত্যা
এ সময় আইজিপি বলেন, ‘‘মব সৃষ্টি করে যারা অপকর্ম করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি থানাগুলোকে আরো সক্রিয় করতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’
এর আগে কর্মশালায় অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘গত ১৬ বছরে বিচারকরা মোমবাতি জ্বালিয়ে নৈরাজ্যবাদী সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে রায় দিয়েছেন। বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার নামে দলীয় এজেন্টদের বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা ফরমায়েশি রায়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে এই সংস্কৃতিতে আর ফেরা যাবে না।’’
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে অতীতে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, কারণ আয়না ঘরের সংস্কৃতিতে দেশ আর ফিরে যাবে না।’’
কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসন ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’’ সুষ্ঠু বাসযোগ্য পরিবেশ উপহার দিতে সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো.
এ কর্মশালায় রংপুর বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
ঢাকা/আমিরুল/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।