জুলাই সনদ হলে কিছু সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে, বাকিগুলো করবে রাজনৈতিক সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 6th, March 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশ করা সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সংলাপ শেষে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ (জুলাই চার্টার) স্বাক্ষর করবে। অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদের সুপারিশগুলোর কিছু অংশ বাস্তবায়ন করবে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইট টু ফ্রিডম’–এর প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি মাইলাম আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এ সময় ‘রাইট টু ফ্রিডম’–এর নির্বাহী পরিচালক জন ড্যানিলোউইচ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই কথা জানানো হয়েছে।
সাবেক দুই কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম ও জন ড্যানিলোউইচ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে রাইট টু ফ্রিডমের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। তাঁরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তার অংশ হিসেবে তাদের প্রচেষ্টার পরিকল্পনার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন। অধ্যাপক ইউনূস রাইট টু ফ্রিডমের কাজ এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে এগিয়ে নিতে সহায়তা প্রচেষ্টার জন্য তাঁদের প্রশংসা করেন।
মাইলাম ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূত ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশে ব্যাপক সংস্কার এবং একটি সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বড় সুযোগ এনে দিয়েছে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জন ড্যানিলোউইচ। তিনি বলেন, ভুয়া খবর ও ভুল তথ্যের বিপদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ইতিবাচক বয়ান এবং জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কূটনীতিকদের বলেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশকৃত সংস্কারের ওপর সংলাপ শেষে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ স্বাক্ষর করবে। ‘জুলাই চার্টার আমাদের পথ প্রদর্শন করবে’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদের সুপারিশগুলোর কিছু অংশ বাস্তবায়ন করবে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের আগে কম সংস্কারে সম্মত হলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে। অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক দুই কূটনীতিকের সাক্ষাতে বর্তমান বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট, আগের আমলে চুরি যাওয়া কোটি কোটি ডলার উদ্ধার, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রধান উপদেষ্টার প্রচেষ্টাসহ নানা বিষয়েে আলোচনা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ র জন ত ক র ইট ট সরক র বছর র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।