ঋণ পুনঃ তফসিলে বিশেষ সুবিধা চায় বসুন্ধরা গ্রুপ
Published: 6th, March 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের বেশ কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। আবার একক গ্রুপ যে পরিমাণ ঋণ নিতে পারে, তার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের ঋণগুলোকে একাধিক গ্রুপ হিসেবে ভাগ করেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বলেছে, বসুন্ধরা সংশ্লিষ্ট সব ঋণ একক গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এমন পরিস্থিতিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এতে বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী ও কবির আহাম্মদসহ ঊর্ধ্বতন অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্র জানায়, বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে বলা হয়েছে, বসুন্ধরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। এসব আলাদা গ্রুপ হিসেবে দেখাতে চায় তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, তাদের (বসুন্ধরা গ্রুপ) দেখানো সবগুলো গ্রুপকে এক গ্রুপ হিসেবেই চিহ্নিত হবে। পাশাপাশি খেলাপি হয়ে পড়া ঋণ সহজ শর্তে পুনঃ তফসিল করার দাবি জানায় বসুন্ধরা গ্রুপ।
সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না হয়, এটা সরকারের চাওয়া। এ জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি। শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক সহায়তা করে যাবে। তবে খেলাপি হয়ে পড়া ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হলে এককালীন টাকা জমা দিতে হবে, যা তারল্যসংকটে ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। এমন বার্তা বসুন্ধরা গ্রুপকে দেওয়া হয়েছে।
গত অক্টোবরে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ তাঁদের পরিবারের আট সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত নভেম্বরে আহমেদ আকবর সোবহানসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ নভেম্বর এ আদেশ দেন আদালত। পরিবারের অন্য সদস্যরা হলেন আহমেদ আকবর সোবহানের চার ছেলে সাদাত সোবহান, সাফিয়াত সোবহান, সায়েম সোবহান আনভীর ও সাফওয়ান সোবহান এবং তিন পুত্রবধূ সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান, সাবরিনা সোবহান ও ইয়াশা সোবহান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।