‘সংসার সাজাতে গিয়ে সংসারই শেষ হয়ে গেছে’
Published: 7th, March 2025 GMT
দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল আবুল হাশেম ও মোমেনা বেগমের সংসার। অসুখে মারা যান ছোট ছেলে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে মোমিনুল ইসলামকে নিয়েই চলছিল সংসার। নাতি-নাতনিদের নিয়ে চলে যাচ্ছিল সংসার।
সংসার সাজানোর স্যানিটারি পণ্য কিনতে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে গিয়েছিলেন মোমিনুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী নদী বেগম। কিন্তু বিস্ফোরণে দু'জনই মারা যান। তার পরিবার বলছে ‘সংসার সাজাতে গিয়ে সংসারটাই শেষ হয়ে গেছে।’
গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে একটি ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ। এতে ২৬ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে মোমিনুল-নদী দম্পতিও রয়েছেন।
মোমিনুলের চাচা জয়নাল আবেদীন বলেন, “বড় ভাইয়ের ছোট ছেলে রোগে মারা গেছেন। বড় ছেলেকে আঁকড়েই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু সেই ছেলেটাও মারা গেলো। তার স্ত্রীও মারা গেছে। তাদের দুইটা সন্তান আছে। তারা তাদের দাদা-দাদীর কাছেই বড় হচ্ছে। তাদের নিয়ে বেঁচে আছেন ভাই ও ভাবী। দুইটা ছেলেই মারা গেছেন। এতে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।”
তিনি বলেন, “সংসার সাজানোর জন্য বাসার বেসিন, কল, বেসিনের সামনের গ্লাস কিনতে সেদিন তারা গিয়েছিলেন। সংসার সাজাতে গিয়ে তো সংসারটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মাকে হারালো। আমার ভাই তার সন্তানকে হারালো।”
সেদিনের ঘটনা উল্লেখ করে জয়নাল আবেদীন বলেন, “বিকেল ৩ টার দিকে চকবাজারের ইসলামবাগের নিজেদের বাসা থেকে তারা বের হয়। সেখানে আমার ভাগ্নের একটা দোকান আছে। তার সাথে পরামর্শ করে জিনিসপত্র কিনতে যায়। এরপর থেকে আর তাদের কোনো খবর নাই। আছরের নামাজের পর সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সন্দেহ ঢুকে যায়। পরে মেডিকেলে লোক পাঠাই। সেখানে ওদের লাশ পাই।”
তিনি বলেন, “আছরের নামাজের পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। কতজনকে দেখি দৌড়াদৌড়ি করতেছে জীবন বাঁচাতে। ধুলোয় কিছু বোঝা যায় না। সামনে দিয়েই ভাতিজা ও তার বউয়ের লাশ নিয়ে গেছে। একটু টেরও পেলাম না। বিস্ফোরণে তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে।”
জয়নাল আবেদীন বলেন, “দুই বছর হয়ে গেলো। কত জন তাদের স্বজন হারালো আমাদের মতো। বিচার পেলাম না। দোষীদের বিচার চাই আমরা।”
২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেলে বংশালের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান ২৬ জন। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে ৯ মার্চ মামলা দায়ের করেন বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর পলাশ সাহা। থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশের পর মামলার তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
ঢাকা/মামুন/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।