এবার রোজায় বড় ব্যবসা করল ইউরোপের কোম্পানি
Published: 9th, March 2025 GMT
রোজার পণ্য থলে ভরে বাসায় নিয়েছেন আপনি। আপনার থলেতে হয়তো জায়গা করে নিয়েছে দেশি নানা ব্র্যান্ডের তেল, চিনি, ডাল কিংবা আটা–ময়দা। আপনার ধারণা, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোই শুধু ব্যবসা করছে। তবে এই ধারণা আংশিক। কারণ, এই পণ্য যারা সরবরাহ করেছে, তাদের হাতেও রয়েছে বড় ব্যবসা। আর এবার রোজার পণ্যের এই সরবরাহ ব্যবসায় এগিয়ে আছে ইউরোপের দুই বহুজাতিক কোম্পানি।
কোম্পানি দুটি হলো ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি (এলডিসি) ও নেদারল্যান্ডসের ভিটেরা। কোম্পানি দুটি বাংলাদেশের রোজার পণ্যের ১৮ শতাংশ সরবরাহ করেছে। এই দুটি কোম্পানি পেছনে ফেলেছে চীন, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন কোম্পানিগুলোকে। গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত বন্দর দিয়ে খালাস হওয়া রোজার পণ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
রোজার পণ্যের মধ্যে তেল ও তেল উৎপাদনের কাঁচামাল, চিনি, গম, ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুরের আমদানির হিসাব ধরা হয়েছে। এ সময়ে এই ছয়টি পণ্য আমদানিতে ২৫৩ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। এই হিসাব পাওয়া গেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের আমদানির তথ্য থেকে।
এনবিআরের হিসাবে, গত তিন মাসে সুইজারল্যান্ডের এলডিসি বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে ২৩ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য সরবরাহ করে শীর্ষস্থানে রয়েছে, যা মোট পণ্যের ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। কোম্পানিটি ছোলা, মসুর ডাল, গম, সয়াবিন তেল ও সয়াবিন বীজ এবং চিনি সরবরাহ করেছে। অবশ্য কোম্পানিটির নিজ দেশ সুইজারল্যান্ডের কোনো পণ্য ছিল না। বিশ্বের সাতটি দেশ থেকে তারা এই পণ্য সরবরাহ করেছে বাংলাদেশে। এই সাতটি দেশ হলো আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, ইউক্রেন, প্যারাগুয়ে ও অস্ট্রেলিয়া।
রোজার পণ্য সরবরাহে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের ভিটেরা। ইউরোপিয়ান এই কোম্পানিটি বাংলাদেশে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন রোজার পণ্য সরবরাহ করেছে। এতে তাদের আয় হয়েছে ২২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। তারাও ৯ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করেছে। কোম্পানিটির সরবরাহের তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার সয়াবিন তেল, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন বীজ, অস্ট্রেলিয়ার মসুর ডাল ও কানাডার মটর ডাল।
রোজার পণ্য সরবরাহের পরের তালিকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার সরবরাহকারী কোম্পানি। যেমন এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রোকর্প। তারা সরবরাহ করেছে ১৯ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য। সিঙ্গাপুরের উইলমার সরবরাহ করেছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য। চীনের কফকো সরবরাহ করেছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের পণ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল ও আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ড (এডিএম) বাংলাদেশে রোজার পণ্য সরবরাহে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি এবার। বিশ্বে কৃষিপণ্য সরবরাহে মোগলের আসনে থাকলেও এবার বাংলাদেশে রোজার পণ্য সরবরাহে পিছিয়ে ছিল তারা। কোম্পানি দুটির অবস্থান শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় নেই। এর মধ্যে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের ব্যবসা করে ১২তম অবস্থানে রয়েছে কার্গিল। আর ৪ কোটি ২৫ লাখ ডলারের ব্যবসা করে ১৫তম অবস্থানে রয়েছে এডিএম। নেদারল্যান্ডস থেকে যাত্রা করা যুক্তরাষ্ট্রের বুঙ্গিও খুব ব্যবসা করতে পারেনি এবার।
রোজার নিত্যপণ্য বা কৃষিপণ্যের ব্যবসা শুরু হয় মূলত উৎপাদনকারী দেশগুলো থেকে। বহুজাতিক এই কোম্পানিগুলো কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশে পণ্য সংগ্রহের জন্য বিনিয়োগ করে। আবার মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে নিজেদের শস্যগুদামে রেখে দেয়। এরপর সময়মতো সেখান থেকে নানা দেশে এসব পণ্য সরবরাহ করে তারা। অর্থাৎ পণ্য সংগ্রহ থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত কৃষি, বন্দরসেবা ও সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনেও তাদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে।
বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা মূলত এদেশীয় ভোগ্যপণ্যের বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে। গত এক দশকে বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলারের শিল্পগোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে। বাংলাদেশের এই বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলোই মূল গ্রাহক বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। যাদের কাছ থেকে দেশের কোম্পানিগুলো জাহাজভর্তি পণ্য আমদানি করে।
জানতে চাইলে নিত্যপণ্য বাজারজাতকারী শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বে কৃষিপণ্য সরবরাহের একচেটিয়া বাজার ইউরোপ–আমেরিকার বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে। পণ্যের গুণগত মান ও সময়মতো সরবরাহের অঙ্গীকার ঠিক রাখে তারা। ফলে এসব বহুজাতিক কোম্পানি থেকে পণ্য আমদানি হয় বেশি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরবর হ র র ব যবস অবস থ ন ইউর প আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।