মৌলভীবাজারে রাণীক্ষেত ভাইরাসে প্রতিদিন শত শত মুরগির বাচ্চা মারা যাচ্ছে। ওষুধ প্রয়োগ করেও প্রতিকার না মেলায় খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

খামারিদের দাবি, গত এক সপ্তাহে ৮ হাজার বাচ্চা মারা গিয়েছে। এতে তাদের কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, রাণীক্ষেত সিজনাল ভাইরাস। খামারে কিছু বাচ্চা মারা গিয়েছে। তবে সংখ্যা এত বেশি হবে না। খামারিদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

বিক্রির জন্য প্রস্তুত ১৩০০ কেজির মহিষ ‘পাঠান’ 

রংপুরে প্রাণিসম্পদ কর্মকতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ খামারিদের

সরেজমিন বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে, ২২ দিন বয়সের বাচ্চা থেকে ২ মাস ১৫ দিনের বাচ্চা বেশি মারা যাচ্ছে। খামারিরা জানান, প্রভিটা ফিড লিমিটেডের হ্যাচারি থেকে উঠানো লেয়ার জাতের একদিনের বাচ্চা মরা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ল্যাব টেস্ট করাবেন বলে জানান। তবে তাদের কাছ থেকে ভালো কোনো পরামর্শ আসেনি। স্থানীয় পশু চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে তেমন ফল আসছে না। এতে খামারিরা লোকসানের শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলার রাজনগর উপজেলার ভুজবহল গ্রামের জনতা পোল্ট্রি ফার্মে দেখা যায়, কয়েক বস্তা মরা বাচ্চা মাটিতে পুতে ফেলার জন্য রাখা হয়েছে। এ সময় খামার পরিচর্চাকারী সামুয়েল ও ছালিক মিয়া জানান, ওষুধে কাজ হচ্ছে না। এই সেডে প্রভিটা ফিড লিমিটেডের একদিন বয়সী বাচ্চার মড়ক শুরু হয়। এখন ২২ দিন বয়সী বাচ্চা মারা যাচ্ছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বর্ষিজুড়া এলাকার জনতা পোল্ট্রির আরেক সেডে গিয়ে দেখা যায়, আড়াই মাসের বাচ্চা মরে যাচ্ছে। ৫ বস্তা মরা বাচ্চা রাখা হয়েছে। এ সময় কথা হয় পরিচর্চাকারী হেলাল মিয়ার জানান, বাচ্চা উঠানোর পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে মড়ক শুরু হয়। আজ পর্যন্ত মরা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ২ থেকে আড়াইশত বাচ্চা মারা যাচ্ছে।   

কথা হয় সদর উপজেলার পোল্ট্রি ফিড এন্ড সিক্স এর স্বত্বাধিকারী খালেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করে বাচ্চা তুলেছিলাম কিন্তু যেভাবে মড়ক দেখা দিয়েছে, এভাবে মরতে থাকলে বড় লোকসানে পড়বো। জেলা প্রাণিসম্পদের লোকজন আমাদের কাছে আসছেন না। আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি।’’  

পোল্ট্রি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন মৌলভীবাজারের সভাপতি হাসান আহমদ বলেন, ‘‘আমি ২০ বছর ধরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এত মড়ক দেখিনি। চিকিৎসা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। একদিন বয়সী বাচ্চা থেকে শুরু করে আড়াই মাসের বাচ্চাও মারা যাচ্ছে। জেলার কমপক্ষে ২০টি খামারে মড়ক অব্যাহত রয়েছে। ৮-১০ হাজার বাচ্চা মারা গেছে। সবচেয়ে বেশি মরছে প্রভিটার বাচ্চা। আমরা বিষয়টি তাদের জানিয়েছি কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না্। প্রাণিসম্পদ বিভাগকেও জানিয়েছি।’’  

খামারে চিকিৎসা দিতে আসা পশু চিকিৎসক অমরজিৎ বলেন, ‘‘রাণীক্ষেত  ভাইরাসে মড়ক একটু বেশি মনে হচ্ছে। মরা বাচ্চার ময়নাতদন্ত করে রাণীক্ষেত ভাইরাস ধরা পড়েছে।’’    

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

আশরাফুল আলম খান বলেন, ‘‘মাঠ পর্যায়ে আমাদের জনবল কম। মাঠের হিসাবে দুই থেকে আড়াই হাজার বাচ্চার মরার খবর পেয়েছি। আমরা আক্রান্ত বাচ্চাকে এন্টিভাইরাস, সেকেন্ডারি ভ্যাকটেরিয়া ও এ্ন্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছি।’’         
 

ঢাকা/বকুল     

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ ন বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ