বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি নিয়ে অসন্তোষ
Published: 12th, March 2025 GMT
জাতীয় লিগের বেতনভুক্ত ১০০ ক্রিকেটারের তালিকায় রাখা হয়নি আল আমিন জুনিয়রকে। ৩১ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার চুক্তি থেকে বাদ পড়ার কারণ বুঝতে পারছেন না। এক সাবেক ক্রিকেটারের পরামর্শে সাবেক নির্বাচক হান্নান সরকারের কাছে বাদ পড়ার কারণটা জানতে চান আল আমিন। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ মিলিয়ে একটা ব্যাখ্যা দেন তিনি। সব শুনে আল আমিন উদাস দৃষ্টিতে দূরে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। এর পর চলে গেলেন একাডেমি মাঠে অনুশীলনের জন্য।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের চেয়েও বেশি হতাশ কেন্দ্রীয় চুক্তি পাওয়া কয়েকজন ক্রিকেটার। সৌম্য সরকার যেমন হতাশ হয়েছেন নিজেকে ‘সি’ গ্রেডে দেখে। মন খারাপ জাকের আলীরও। শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে ভবিষ্যৎ বিবেচনায় রাখা হয়নি। কারও কারও মতে এবারের কেন্দ্রীয় চুক্তি বৈষম্যমূলক।
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির একটি কাঠামো ছিল। অভিজ্ঞতা, বর্তমান পারফরম্যান্স ও ভবিষ্যৎ মাথায় রেখে মার্কিং করে কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা করা হতো পয়েন্টের ভিত্তিতে। বিসিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান নির্বাচক কমিটি বৈজ্ঞানিক সে পদ্ধতি অনুসরণ করেনি।
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু নিজেদের মতামতের ভিত্তিতে ক্রিকেটারদের ক্যাটেগরি নির্ধারণ করেছেন বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা এক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পেস বোলারদের মূল্যায়ন করছে, সেটা খুবই ভালো। কারণ তারা সব ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে না। তাদের ভালো গ্রেডে রাখা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। সমস্যা হলো কেউ কেউ জাতীয় দলকে ভালো সার্ভিস দেওয়ার পরও তাদের নিচের গ্রেডে রাখা হয়েছে। এটা তো বৈষম্য তৈরি করবে।’
এ অভিযোগের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করেও প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে ফোনে পাওয়া যায়নি। নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকও ফোন ধরেননি। তবে হান্নান সরকার একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন এভাবে, ‘এ চুক্তিতে আমার স্বাক্ষর আছে। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে গ্রেডিং করা হয়েছে। নাহিদ রানা দেশের সেরা একজন ফাস্ট বোলার। সে তিন সংস্করণে খেলবে। এ কারণে তাকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে।’
নাহিদ রানা টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ দলে থাকলেও অভিষেক হয়নি। তাঁর তুলনায় জাকের আলীর পয়েন্ট বেশি হওয়ার কথা। তিন সংস্করণে খেলা উইকেটরক্ষক এ ব্যাটারের পারফরম্যান্সও ভালো।
লিপুদের নির্বাচিত জাতীয় দল যে বর্তমানে ভালো ক্রিকেট খেলছে না, তা ফলের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। পারফরম্যান্সের দোহাই দিয়ে অভিজ্ঞ লিটন কুমার দাসকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে রাখা হয়নি। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে ভালো করতে পারছে না লিপুর নির্বাচিত দল। আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ৫০ ওভারের খেলায়। মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে একটি টেস্ট জিতেছে ও লিটনের নেতৃত্বে টি২০ সিরিজ।
এ পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালের টি২০ আর ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ মাথায় রেখে বিসিবি যখন জাতীয় দল গড়ার পরিকল্পনা বা গাইডলাইন তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে, সে মুহূর্তে কেন্দ্রীয় চুক্তি জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের পছন্দে হয়েছে বলে অভিযোগ।
সাবেক এক নির্বাচক বলেন, ‘এখন থেকে নির্বাচকদের সমীহ করে চলতে হবে ক্রিকেটারদের। কারণ কেন্দ্রীয় চুক্তির ক্রিকেটার নির্বাচিত হবেন নির্বাচকদের পছন্দে; এবার যেটা হয়েছে। আগের গাইডলাইন ফেলে দিয়ে তারা নিজেরা যাকে যেখানে নেবেন বলে ঠিক করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটেছে গ্রেডিংয়ে।’ এ অভিযোগের সত্যতাও যাচাই করা যায়নি নির্বাচকরা ফোন না ধরায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম য সরক র জ ত য় দল
এছাড়াও পড়ুন:
তাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম
চট্টগ্রাম টেস্টে আজ প্রথম দিনে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে ৬০ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেনতাইজুল ইসলাম। টেস্টে এ নিয়ে ১৬তমবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম দিনের খেলা শেষে তাইজুলের প্রশংসা করে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন তামিম ইকবাল।
আরও পড়ুনতাইজুলের মনে হয় না তারা খেলা বোঝে১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের পেজে তাইজুলের একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত (আন্ডাররেটেড) বোলার। এখন খেলা অন্য বোলারদের পরিসংখ্যান দেখুন, তাহলে আমার কথাটা বুঝতে পারবেন। আরেকবার ৫ উইকেট নিয়ে দারুণ খেলেছ তাইজুল।’
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে টেস্ট ও ডিসেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক তাইজুলের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ২০১৯ সালে। ওয়ানডে (২০) ও টি-টোয়েন্টির (২) চেয়ে টেস্ট ম্যাচই (৫২) বেশি খেলেন তাইজুল। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি টেস্টে প্রথম দিনের পারফরম্যান্সসহ মোট ৫৩ টেস্টে এ পর্যন্ত ২২৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। তাঁর টেস্ট সংস্করণের পারফরম্যান্সটা যাচাই করে দেখা যায়।
এখনো যাঁরা খেলছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নাথান লায়নের। অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনারের টেস্ট অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেকের সময় থেকে লায়নের পারফরম্যান্স— ১০৩ টেস্টে ২৯.৪৮ গড়ে ৪৪১ উইকেট। মোট ২৪ বার ৫ উইকেট নিলেও তাইজুলের অভিষেকের পর থেকে ১৯ বার ৫ উইকেট নেন লায়ন। তবে অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলায় লায়ন এ সময়ে তাইজুলের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বোলিং গড় এবং স্ট্রাইকরেটে লায়ন ও তাইজুলের মাঝে ব্যবধান বেশি না। তাইজুলের বোলিং গড় ৩১.৫৬, স্ট্রাইক রেট ৬১.৯, যেখানে লায়নের স্ট্রাইকরেট ৬১.৬ ও গড় ৩০.১৯।
আরও পড়ুনতাইজুলের ভেলকি, শেষ সেশনে গেল ৭ উইকেট২ ঘণ্টা আগেভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েন। টেস্টে তার অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেক থেকে এই সংস্করণে ৮৫ ম্যাচে ২২.৮৪ গড়ে ৪৩০ উইকেট নেন অশ্বিন। এ সময়ে ২৮ বার পেয়েছেন ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও বেশি বেশি টেস্ট খেলায় স্বাভাবিকভাবেই এ সময়ে তাইজুলের তুলনায় বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন অশ্বিন।
ভারতের আরেক স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তাইজুলের অভিষেকের দুই বছর আগে টেস্টে অভিষেক জাদেজার। তাইজুলের অভিষেকের সময় থেকে এ পর্যন্ত ৬৮ টেস্টে ২৭৮ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। তবে তাঁর চেয়ে এ সময়ে বেশি সংখ্যকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। জাদেজা এ সময়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৩ বার, তাইজুল নিয়েছেন ১৬ বার।
তাইজুল ৫ উইকেট নেওয়ার পর তাঁকে জড়িয়ে ধরেন অধিনায়ক নাজমুল