ভারত নেই বলে লর্ডসের লোকসান ৬৩ কোটি টাকা
Published: 13th, March 2025 GMT
২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৪ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—টানা তিনটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে ভারত। তবে এ বছরের জুনে হতে যাওয়া আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেই ভারত।
আর ভারত নেই বলেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আয়োজন করতে গিয়ে ৪ মিলিয়ন পাউন্ড লোকসান হতে যাচ্ছে লর্ডসের, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩ কোটি টাকা। এতে বৈশ্বিক পর্যায়ে ভারতীয় ক্রিকেটের অর্থনৈতিক প্রভাব ফুটে উঠেছে বলে উল্লেখ করেছে লন্ডনের দ্য টাইমস।
২০২৩–২৫ চক্রের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও গত বছরের শেষ প্রান্তিক পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুইয়ে ছিল ভারত। তবে নিউজিল্যান্ডের কাছে ঘরের মাঠে ৩–০ এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে তাদের মাটিতে ৩–১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হেরে ফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে যায় রোহিত শর্মার দল।
দ্য টাইমসের খবরে বলা হয়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারত থাকছে ধরে নিয়ে প্রিমিয়ার রেটে টিকিটের দাম ধার্য করেছিল লর্ডস কর্তৃপক্ষ এমসিসি (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব)। ভারত থাকলে টিকিটের চাহিদা থাকে ব্যাপক, উচ্চ দামেও গ্যালারি ভরে যাওয়ার আশা ছিল এমসিসির। কিন্তু রোহিত–বিরাট কোহলিরা ফাইনালে উঠতে পারছেন না দেখে টিকিটের দাম কমিয়ে ফেলে লর্ডস কর্তৃপক্ষ, যাতে গ্যালারিতে দর্শক উপস্থিতি দৃষ্টিকটুভাবে কম না হয়।
লর্ডসের টিকিটের দাম কমানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত এমসিসি গত বছরই নিয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ড–শ্রীলঙ্কা টেস্টের চতুর্থ দিন লর্ডসে দর্শক ছিল মাত্র ৯ হাজার। তখনই টিকিটের দাম নিয়ে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় এমসিসি।
এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের জন্য টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে স্ট্যান্ড ভেদে ৪০ থেকে ৯০ পাউন্ড, যা প্রথমে নির্ধারণ করা দামের চেয়ে ৫০ শতাংশের মতো কম। আর টিকিটের দাম কমিয়ে দেওয়ার ফলেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে লর্ডসের আয় ৪ মিলিয়ন পাউন্ড কমবে বলে হিসাব বলছে। দ্য টাইমস জানিয়েছে, যাঁরা আগেই টিকিট কেটে রেখেছেন, তাঁদের বাড়তি অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
চলতি বছর টিকিট বিক্রি থেকে বড় আয়ের আশা করছে লর্ডস কর্তৃপক্ষ। ২০২৫ সালে ইংল্যান্ড–ভারত টেস্ট, ইংল্যান্ড–দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে, ইংল্যান্ড–ভারত মেয়েদের ওয়ানডে, দ্য হান্ড্রেডের ফাইনাল আয়োজন করবে লর্ডস। জুলাইয়ের ইংল্যান্ড–ভারত টেস্টের প্রথম চার দিনের টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া–দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১১ থেকে ১৫ জুন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এমস স
এছাড়াও পড়ুন:
তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন
সরকারি নথিপত্রে যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের ইচ্ছাকৃত অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীতভাবে ইতিহাস বিকৃতির সবচেয়ে খারাপ ধাপ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় প্রত্যেকে এই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকারদের, আর রাজাকারের তালিকায় সুবিদিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের অন্তর্ভুক্তি দেখা গেছে। কিন্তু হাজারো তরুণের রক্তস্নাত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, তা অকল্পনীয় ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা দেখিয়েছে, আগের সেই রেশ থামেনি। দেখা যাচ্ছে, সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শহীদদের যে তালিকা করেছে, তাতে এমন অর্ধশতাধিক লোকের নাম এসেছে, যাঁরা জুলাই শহীদ নন।
জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী অথবা আওয়ামী শাসক দলের লোকদের হাতে নিহত ব্যক্তিরাই জুলাই শহীদ বলে গণ্য হবেন। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সরকারের তৈরি করা জুলাই শহীদদের তালিকায় কমপক্ষে ৫২ জনের নাম আছে, যাঁরা জমিসংক্রান্ত বিরোধ বা অন্য কারণে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন কিংবা নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ছাড়া তালিকায় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন ছাত্রলীগ নেতা আছেন। এমনকি তালিকায় এমন একজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি প্রতিবাদীদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন।
প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন মোট ৩০ লাখ টাকা দেবে সরকার। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। ঢাকায় তাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
জনমানসের যৌক্তিক ধারণা, এই অর্থনৈতিক সুবিধার প্রলোভন তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা, শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং অপকৌশলের সুযোগ তৈরি করেছে। শুধু জালিয়াতি করে শহীদ দেখিয়ে শুধু সহায়তা নেওয়া নয়; সংশ্লিষ্ট নিহতের ঘটনায় মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার নজিরও মিলেছে।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, তালিকাভুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ কাজ করে থাকতে পারে। ঘটনাটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তার মিলিত কৌশল এবং সুযোগসন্ধানীদের চক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি সরকার আমলে নিয়েছে, এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই।
বহু শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকার এক মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, শহীদের মর্যাদাকে সরকারি পরিসরে আর্থিক প্রলোভন, সংকীর্ণ রাজনৈতিক সুবিধা বা স্বার্থপর উদ্দেশ্যে বিকৃত করা হলে সেটি ইতিহাস, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব লঙ্ঘনের অমার্জনীয় অন্যায় হয়ে ওঠে।
এ অন্যায় থেকে বাঁচতে ও মানুষের আস্থা পুনঃস্থাপনে অবিলম্বে বিতর্কিত সব নামের সব সরকারি সুবিধা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। স্বাধীন ও অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করে প্রতিটি নামের পুনঃ যাচাই নিশ্চিত করা জরুরি। বাদ পড়া শহীদদের নামও তালিকায় যুক্ত করতে হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে যাদের গাফিলতি বা দুর্নীতির কারণে এই অনিয়ম হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে এক অমর মাইলফলক। এর শহীদদের তালিকায় নকল বা অপ্রাসঙ্গিক নাম সংযোজন করা হলে ‘বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা’ সব ‘ধরার ধুলায় হবে হারা’। সরকারকে এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
আশার কথা হলো, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো প্রকার ভুয়া প্রমাণিত হলে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কথা ও কাজের সম্মিলিত প্রয়াস আমরা দেখব, সেটিই কাম্য।