ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারে মার্কিন ইহুদিরা, গ্রেপ্তার ৯৮
Published: 14th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারের লবিতে বিক্ষোভ করেছেন মার্কিন ইহুদিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন ইহুদিদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পরে ৯৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত শনিবার মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। গতকালের বিক্ষোভটি ছিল তেমনই একটি কর্মসূচি।
মাহমুদ খলিল একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক। আর তাঁর স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক। গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তাঁকে দেশে বিতাড়িত করতে চায়।
তবে খলিলের আইনজীবী এবং সমর্থকেরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সমালোচনাকে ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলছে। বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। তারা খলিলকে ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
গতকাল বিক্ষোভকারী নেতারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে বার্তা দিতে তাঁরা ট্রাম্প টাওয়ারকে বেছে নিয়েছেন। উঁচু ভবনটিতে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন এবং নিউইয়র্কে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাসভবনের অবস্থান।
জিউশ ভয়েস ফর পিস নামে মার্কিন ইহুদিদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ইহুদি হিসেবে আমরা যে এটা গণহারে প্রত্যাখ্যান করছি, তা জানাতে আমরা ট্রাম্প টাওয়ারের দখল নিয়েছি।’
ওই পোস্টে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ফ্যাসিবাদী উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনিদের এবং যারা মার্কিন অর্থায়নে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল সরকারের গণহত্যা বন্ধের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে, তাদের অপরাধী করার চেষ্টা করলে আমরা চুপ করে থাকব না এবং আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য লড়াই কখনো থামাব না।’
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অভিনেত্রী ডেব্রা উইংগারও ছিলেন। বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডেব্রা বলেন, ‘আমি মাহমুদ খলিলের জন্য দাঁড়িয়েছি, যাঁকে অবৈধভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং গোপন স্থানে নেওয়া হয়েছে। এটাকে কি আপনাদের কাছে আমেরিকা বলে মনে হচ্ছে?’
আরও পড়ুনফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের মুক্তির দাবিতে নিউইয়র্কের আদালতের বাইরে শত শত মানুষের বিক্ষোভ১৩ মার্চ ২০২৫নিউইয়র্ক থেকে আল–জাজিরার প্রতিনিধি ক্রিস্টেন সালুমি বলেন, ট্রাম্প টাওয়ারের লবি ফাঁকা করতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ৯৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিক্ষোভকারীরা মূলত সাধারণ পর্যটকদের পোশাক পরে নির্বিকারভাবে ভেতরে ঢুকেছিলেন। এর পর তাঁরা তাঁদের জ্যাকেটগুলো খুলে ফেলে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে লাল রঙের টি–শার্ট পরেন। মাহমুদ খলিলের পক্ষে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে তাঁদের মধ্য থেকে ৯৮ জনকে হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে বের করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
খলিল বর্তমানে লুইজিয়ানাতে আটক আছেন। মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারপতি সেই সিদ্ধান্তের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে নিউইয়র্কে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন, যেন তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছাকাছি থাকতে পারেন। তাঁর স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
তবে খলিলকে বিতাড়িত করার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন অনড় অবস্থানে আছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আবারও নিরপরাধ দাবি হিটু শেখের, ভিন্ন কথা সাক্ষীদের
আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তৃতীয় দিনের মতো গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে মাগুরায়। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এদিনও মামলার প্রধান আসামি আছিয়ার বোনের শ্বশুর হিটু শেখ আদালত কক্ষে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেন। কিন্তু আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষীরা প্রত্যেকে হিটু শেখের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার ছিল এই মামলার দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ। সেদিনও শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় হিটু শেখ নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেন।
গতকাল কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হিটু শেখসহ ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, গত তিন কার্যদিবস টানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। গতকাল ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষীদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, আছিয়ার বোন হামিদা ছিলেন। এ নিয়ে মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো। এ মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। আজ বুধবার মাগুরা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাক্ষ্য দেবেন। গতকাল আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গতকালও আদালত কক্ষে ঢোকার আগে হিটু শেখ ঘটনার জন্য তাঁর পুত্রবধূ আছিয়ার বোনকে দায়ী করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। হিটু শেখ বলেন, ঘটনার সময় আমিসহ আমার দুই ছেলে বাড়িতে ছিলাম না। সকালে বাইরে যাওয়ার সময়ও আছিয়াকে সুস্থ দেখে গেছি। আছিয়ার বোন এ সময় একাই বাড়িতে ছিল। সাংবাদিকরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন। দোষী হলে যে শাস্তি হয়, মাথা পেতে নেব।
বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশু আছিয়া। ঢাকা সিমএমএইচে ১৩ মার্চ তার মৃত্যু হয়।