ভারতীয় ঋণে (এলওসি) আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, কসবা, ধরখার হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ চলছে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ রাস্তা ভারতের ত্রিপুরার আগরতলাকে আশুগঞ্জ নৌবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করবে। এ ছাড়া ৭ হাজার ১৮৮ কোটি টাকায় কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ধরখার সড়কও চার লেনে উন্নীত করা হবে ভারতীয় ঋণে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা পণ্য ত্রিপুরা ও আসামে পরিবহন সহজ হবে। ১২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকার এই দুই সড়কে ভারতের ফায়দা হলেও, বাংলাদেশের কী লাভ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মকর্তারা বলেছেন, মহাসড়ক দুটি চার লেনে উন্নীত হলে আগরতলার বাণিজ্য বাড়বে। সিলেট ও চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ হবে। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই লাভবান হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির সমকালকে বলেন, কেন এই মহাসড়ক প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের আদৌ লাভ আছে কিনা, খতিয়ে দেখা হবে। ময়নামতি-ধরখার মহাসড়ক প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে না হলে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে না। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে ২০১৫ সালে নৌ-ট্রানজিট চুক্তি সই হয়। এতে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহারের সুবিধা পায় ভারত। ২০১৬ সালের জুনে শুরু হয় পণ্য পরিবহন। কলকাতা থেকে নদীপথে আনা ভারতীয় পণ্য প্রথমে আশুগঞ্জ বন্দরে খালাস করা হয়। এর পর সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা, ধরখার সড়ক হয়ে আগারতলায় নেওয়া হয়। 
এ চুক্তির মাধ্যমে স্থলভূমি বেষ্টিত উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহন সুবিধা পেয়েছে ভারত। এতে কলকাতা-আগরতলার দূরত্ব কমেছে প্রায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার। পণ্য পরিবহন সহজ করতে ২০১৭ সালের এপ্রিলে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা, ধরখার হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত ধীরগতির যান চলাচলে দু’পাশে সার্ভিস এবং চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার। মোট ছয় লেনের মহাসড়কটি ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকায় ২০২০ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ সম্পন্নের পরিকল্পনা ছিল। 
পরে প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্প সম্পন্ন হবে। ব্যয় হবে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। ভারত এতে ঋণ দেবে ২ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। 

ঋণের শর্ত অনুযায়ী, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়ক নির্মাণের কাজ পায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের জনবলও নিজ দেশে চলে গেলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তার আশ্বাসে গত অক্টোবরে তারা কাজে ফেরে। ডিসেম্বরে আবার শুরু হয়েছে কাজ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। আবার ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত অংশে জমি অধিগ্রহণ হলেও এখনও সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো অনেকটাই নিশ্চিত।
সওজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুমিল্লার ময়নামতি থেকে আখউড়া বন্দরসংলগ্ন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ধরখার পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার সড়ককে দু’পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প অনুমোদন হয়। ৭ হাজার ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার প্রকল্পটির কাজ ২০২২ সালে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনে সম্পন্নের পরিকল্পনা ছিল। এখনও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। 

ভারতের কী লাভ
২০১৮ সালের অক্টোবরে সই হওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা পেয়েছে ভারত। বন্দরে খালাস করা প্রতি টন পণ্য প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮৫ ফি মাশুল দিয়ে আসাম ও ত্রিপুরায় পরিবহন করতে পারে দেশটি। 
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক পর্যন্ত পণ্য আসে কুমিল্লার ময়নামতি পর্যন্ত। সেখান থেকে বিদ্যমান ১৮ ফুট প্রশস্ত কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক দিয়ে ধরখার হয়ে আগরতলায় যায় ত্রিপুরাগামী পণ্যবাহী গাড়ি। আসামগামী পণ্যবাহী গাড়ি ধরখার থেকে আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়ক হয়ে সরাইল দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যেতে পারে। নির্মাণাধীন আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়কের আশুগঞ্জ সরাইল অংশ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেরও অংশ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে শেওলাবন্দর, তামাবিল বন্দর হয়ে আসামে যায়। 

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হচ্ছে। সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক ৩ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকায় দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। 
ময়নামতি-ধরখার সড়ক নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতীয় পণ্য সহজেই চার লেনের মহাসড়ক ব্যবহার করে আখাউড়া এবং তামাবিল হয়ে দ্রুত ও সহজে ত্রিপুরা, আসাম যেতে পারবে। দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) কর্মসূচির অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ-আখাউড়া এবং ময়নামতি-ধরখার সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করা হয়েছিল রোড সেক্টর রিফর্ম প্রজেক্টের আওতায় (আরএসআরপি)। এর সারাংশে বলা হয়েছে, আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়ক নির্মিত হলে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বাড়বে। ময়নামতি-ধরখার সড়ক সিলেটের সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ করবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে প্রকল্প দুটি। 

বাংলাদেশে অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার সঙ্গে মেলে না। প্রকল্প অনুমোদন করাতে লাভজনক দেখানো হয় জানিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.

হাদীউজ্জামান সমকালকে বলেন, খালি চোখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের লাভ। তবে সামগ্রিকভাবে দেখলে ভারতীয় ঋণে প্রকল্প দুটিতে বাংলাদেশের চেয়ে অর্থায়নকারী দেশেরই লাভ। তারা তো শুধু একবার ঋণ দেবে সড়ক নির্মাণে। পরে এই সড়কের রক্ষণাবেক্ষণে খরচ বাংলাদেশকেই দিতে হবে। ভারতীয় পণ্য পরিবহন করে সেই খরচ উঠবে কিনা, দেখতে হবে। সিলেটের সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রামের যোগাযোগ বাড়াতে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় লাভজনক হবে কিনা, তাও দেখতে হবে। যদিও প্রকল্পগুলো যে পর্যায়ে আছে, তাতে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হবে না। ব্যয় ২০ হাজার কোটি টাকাও ছাড়াতে পারে। 
হাদীউজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল সহজ নয়। আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কের কাজ অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়ে যাওয়ায় এখান থেকে ফিরে আসার পথ নেই। ময়নামতি-ধরখার সড়কের কাজ শুরুর আগে ভাবতে হবে, বাংলাদেশের কতটা লাভ হবে। শুধু ভারতের স্বার্থেই রক্ষিত হচ্ছে কিনা, খতিয়ে দেখতে হবে। 

বাংলাদেশের কী লাভ 
২০১১ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরার পালাটানায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালপত্র পরিবহন করে ভারত। পরে কয়েক দফায় খাদ্যশস্য, ইস্পাত, পাথর পরিবহন করে তারা। ২০১৬ সালের ১৫ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পরের চার বছরে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে সব মিলিয়ে মাশুল পায় ৩৫ লাখ টাকা। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে আখাউড়ার এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয় ৭ কোটি ৫ হাজার টাকার পণ্য। রপ্তানি হয় ৪২৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকার পণ্য। কোনো অর্থবছরেই মোট আমদানি-রপ্তানি ৫০০ কোটি টাকার বেশি ছিল না। এই বন্দরকে যুক্ত করতে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার মহাসড়ক বাংলাদেশের জন্য কতটা লাভজনক হবে– এ প্রশ্ন শুরু থেকেই ছিল। সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, এগুলো খতিয়ে দেখা হবে। 

আশুগঞ্জ-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া মহাসড়ক নির্মাণ শেষে সিলেট থেকে কুমিল্লা, চট্টগ্রামগামী গাড়ি ধরখার পর্যন্ত চার লেনের সড়কে আসবে। পরে বিদ্যমান সরু ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের সড়কে ময়নামতি পর্যন্ত এসে চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে বন্দরে যেতে পারে। পুরো পথ চার লেনের সুবিধা পেতে হলে আশুগঞ্জ থেকে নরসিংদী ঘুরে দাউদকান্দী হয়ে চট্টগ্রাম যেতে হয়। এতে ৬০ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হয়। 

ময়মনামতি-ধরখার সড়ক প্রকল্পের পরিচালকের পদ শূন্য থাকায় অরিক্তি পরিচালক শামীম আল মামুন দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, দুই লেনের সরু রাস্তায় হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা অংশে ব্যাপক যানজট হয়। চার লেনের সড়ক হলে সিলেট থেকে কুমিল্লা, চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ হবে। 
৭ হাজার ১৮৮ কোটি টাকার ময়মনামতি-ধরখার সড়ক প্রকল্পে ভারত ২ হাজার ৮১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ দেবে। বাকি ৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ১৩৩ কোটি টাকা, যা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পর সবচেয়ে ব্যয়বহুল। সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের যোগাযোগ বাড়াতে এত ব্যয়বহুল সড়ক বাংলাদেশের জন্য লাভজনক নাকি শুধু ভারতের লাভ হবে– এসব প্রশ্নে শামীম আলম মামুন বলেন, দুই দেশের জন্যই ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ তৈরি হবে। দু’পক্ষেরই লাভ হবে। 
ময়নামতি-ধরখার সড়কের নির্মাণকাজ এখনও শুরুই হয়নি। ভারতীয় ঋণের সুরাহা না হওয়ায় দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা যাচ্ছে না। এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ ও পুনবার্সনে খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা। স্টেশনারি, সিল ও স্ট্যাম্পের জন্য ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা, প্রকল্পের জন্য ৬৮০ বর্গমিটার অফিস তৈরিতে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার, আসবাব, কম্পিউটারে পৌনে ২ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। 

কাজ এগোচ্ছে না, সেচ বন্ধে কৃষকের সর্বনাশ
ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফেরায় ডিসেম্বর থেকে আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কের কাজ এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের পরিচালক আবদুল আউয়াল মোল্লা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে লাভজনক হবে কিনা? বিনিয়োগ উঠে আসবে কিনা– এসব প্রশ্নে তিনি ২৯ জানুয়ারি সমকালকে বলেছিলেন, ‘সব প্রশ্নের জবাব সমীক্ষায় রয়েছে। সমীক্ষা করেই প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। আমি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ, আমাকে যেভাবে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে, সেভাবে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। 
আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইন ঠান্ডা রাখতে মেঘনা নদী থেকে তোলা পানিতে আশপাশের ৫০ হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া হতো। ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ‘আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প’ নামে সেচ কার্যক্রম শুরু করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহৃত পানিতে সেচ সুবিধা চালু করায় তা সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ছিল।
২০২০ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক চার লেন উন্নয়নে, সড়কের পাশে ১১ কিলোমিটার সেচ খাল ভরাট করা হয়। কোথাও ৪০ ফুট প্রশস্ত খাল, এখন ৪-৫ ফুট টিকে রয়েছে। এতে সেচ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতের সুবিধায় নির্মাণ করা সড়কের কারণে কৃষকের সর্বনাশ করা হয়েছে। 
গত ২৪ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভায় বিএডিসি জানায়, সেচ খাল নির্মাণে সওজের সঙ্গে ভূমি মালিকানা চুক্তি হয়েছে। প্রস্তাবিত সেচ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। 

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন কুমিল্লা প্রতিনিধি মো. কামাল উদ্দিন) 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ ব র হ মণব ড় য় সড়ক প রকল প ক প রকল প প রকল প র ব যবহ র সড়ক র ক র ব যবহ সড়ক হয় ন র পর র জন য সড়ক হ

এছাড়াও পড়ুন:

গলার কাঁটা পানি শোধনাগার

বিয়ানীবাজার পৌরসভার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে সেখানে স্থাপিত পানি শোধনাগার প্লান্টটি। দুই বছর ধরে পুষতে থাকা এই প্রকল্পকে কীভাবে লাভজনক প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই পানি শোধনাগার প্লান্ট উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনের পর এই প্রকল্প থেকে গত ২৬ মাসে এক টাকাও আয় করতে পারেনি পৌরসভা। উল্টো এই সময়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে এর পেছনে। পৌর সূত্র মতে, ২৬ মাসে এ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে স্থাপিত পানি শোধনাগারটির পানির প্রতি পৌরবাসীর কোনো আগ্রহই নেই। এখানে প্রাকৃতিকভাবে পানি সহজে আহরণ করা যায় বলে কৃত্রিম উৎসে পরিশোধিত পানির চাহিদা একেবারে নেই বললে চলে। যার কারণে শোধনাগারটি কোনো কাজেই আসছে না। উদ্বোধনের পর থেকে অকার্যকার হয়ে আছে এটি।

স্থানীয় পৌরবাসীর ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির উৎস থাকায় শোধনাগারের পানির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। যারা এসব প্রকল্পের কাজ করেন, তারা নিশ্চয় প্রতিটি স্থানের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন। যেখানে স্বাভবাবিক উৎস থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে সহজে, সেখানে এমন একটি প্রকল্প যে অপরিকল্পিতভাবে করা– তা বোঝাই যায়। 

এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের বোঝায় পরিণত হওয়া এই প্রকল্পটিকে ঘিরে সৃষ্ট সমস্যা উত্তরণে এবং এটিকে আর্থিকভাবে লাভজনক প্রকল্পে পরিণত করার উপায় খুঁজছে পৌরসভা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে পানি সরবরাহের পাইপলাইন সম্প্রসারণ করা বা পানি শোধনাগারটি লিজ দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে ভাবছে  কর্তৃপক্ষ।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শোধনাগারটিতে উৎপাদিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে পৌরসভার আংশিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল ২২ কিলোমিটার পাইপলাইন। এ পাইপলাইন থেকে পৌর শহর, শহরতলি ও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা কোনো সংযোগ নেননি। বাণিজ্যিক সংযোগ না থাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পুরো প্রক্রিয়াটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যার কারণে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাড়তি ব্যয়ের চাপ নিতে হচ্ছে পৌরসভাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই টানাটানি তার ওপর বাড়তি ব্যয়। 

সিলেট বিভাগের ১৯টি পৌরসভার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র আব্দুস শুকুরের সময়ে।

২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর এ প্লান্ট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সে সময় এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পৌর পরিষদের মাসিক আলোচনায় কয়েকজন কাউন্সিলর আপত্তি তুলেছিলেন। সে সময় তাদের আপত্তি আমলেই নেননি তৎক্ষালীন মেয়র আব্দুস শুকুর।

২০২৩ সালে শোধনাগারটিকে কার্যকর করতে পৌরসভার ২০০ পরিবারকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র ফারুকুল হক। তবে পৌরসভার সে উদ্যোগেও আগ্রহ দেখায়নি পৌরবাসী। যার কারণে উন্নয়নের নামে সরকারের ৯ কোটি টাকা গচ্চার পাশাপাশি পৌরসভা প্রতি মাসে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকা পানি শোধনাগারটি বন্ধের সুযোগ নেই জানিয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, এটি স্থাপন করার আগে এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সেটি সেভাবে সার্ভে করা হয়নি, যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং পৌরসভা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই পানি শোধনাগারটিকে লাভজনক খাতে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে কাজ করা হচ্ছে। দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। পুরো পৌরসভাকে পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসতে হলে অবশিষ্ট অংশে পাইপলাইন স্থাপন করতে ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা।

এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরো পৌরসভায় পানির সরবরাহ লাইন স্থাপন করা গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
  • গলার কাঁটা পানি শোধনাগার