জাফর এক্সপ্রেসে বিএলএর হামলা সংগঠনটির ২৫ বছরের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বড় হামলা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে সবচেয়ে পরিশীলিত, যা তাদের জ্ঞাত ক্ষমতাও অতিক্রম করেছে। নিঃসন্দেহে এই জঘন্য অভিযানের মধ্য দিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক মাত্রা প্রমাণিত। কারণ, সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে তাদের সহচরদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছিল।

আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সুপরিকল্পিত কৌশলের মাধ্যমে সব জিম্মিকে শুধু মুক্তই করেনি, তাদের ৩৩ জনকে হত্যাও করেছে। অভিযান শুরু হওয়ার আগেই সন্ত্রাসীরা ২১ যাত্রীকে হত্যা করেছিল এবং অভিযানের সময় চারজন এফসি (বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে কর্মরত) সৈন্যও শহীদ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পাকিস্তান ও চীনের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় বিএলএ জানিয়েছে, তারা সিপিইসি (চীনা প্রকল্প) সম্পন্ন হতে দেবে না এবং ভবিষ্যতেও একই ধরনের হামলা চালাবে। এটি প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট যে, তারা সিপিইসির প্রতিপক্ষ এবং পাকিস্তানের উন্নতি ও অগ্রগতি চায় না– এমন শক্তির পক্ষে কাজ করছে। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা পাকিস্তানের প্রতি তালেবান সরকারের বৈরিতার জন্য আফগানিস্তানে ভারতের জোরালো প্রভাব এবং র, টিটিপি, আফগান গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিএলএর মধ্যে প্রমাণিত যোগসাজশকে দায়ী করেছেন। টিটিপির প্রতিরক্ষা ও অর্থবিষয়ক প্রধান মৌলভি মনসুরের আত্মপ্রকাশ, যিনি গত বছরের জুলাই মাসে বেলুচিস্তানে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সেই জোটের অস্তিত্বকে সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে আবারও বলেছেন, টিটিপির মাধ্যমে তহবিল দেওয়া হচ্ছিল এবং সিপিইসিকে ধ্বংস করার জন্য বিএলএর সঙ্গে তাদের সহযোগিতাও তাদের নির্দেশে হয়েছিল। ভারতীয় গণমাধ্যমে ঘটনার প্রতিবেদনগুলোও ভারতের জড়িত থাকা প্রমাণ করে।
বান্নু ক্যান্টনমেন্টের পর কয়েক দিনের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম সন্ত্রাসী হামলা। সেই ঘটনায়ও আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সব আক্রমণকারীকে হত্যা করেছিল। সবচেয়ে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, কাবুলের তালেবান সরকার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে অন্য কোনো দেশের ওপর হামলার জন্য তাদের মাটি ব্যবহার করতে না দেওয়ার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা মানছে না। বরং তারা তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এই জঘন্য কাজগুলো পরিচালনাকে সমর্থন করছে। তারা নিজেদের ভবিষ্যতের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন নয়।

একদিন আগে, ১০ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে আমাদের স্থায়ী প্রতিনিধি মুনির আকরাম ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ শিরোনামে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আফগানিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসী হুমকির ব্যাপারে জোরালো মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের সীমান্তের মধ্যে আল কায়দা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সফলভাবে ধ্বংস করার পর আমাদের সীমান্ত এলাকায় প্রস্তুতি থাকতে হবে। আমি আবারও বলতে চাই, আমাদের সীমান্তের মধ্যে পাকিস্তান নিয়মিত সন্ত্রাসীদের মুখে পড়ছে। টিটিপি, দায়েশ ও মাজিদ ব্রিগেডের মতো সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করা যায়।’
আমি মনে করি, এই সন্ত্রাসী অস্তিত্বের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমর্থন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সর্বসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা জরুরি। সেই সঙ্গে তালেবান সরকারকে তার মাটিতে সন্ত্রাসীদের আস্তানা নির্মূল করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া দরকার, যা শুধু পাকিস্তানের জন্যই নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্য হুমকি। আফগানিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

পাকতিয়ায় টিটিপির আস্তানাগুলোতে হামলাকালে যেমনটি প্রমাণিত হয়েছিল, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এই হুমকি মোকাবিলায় সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। পাকিস্তান আফগানিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ চায় না। এ বিষয়টি এ থেকে স্পষ্ট– তারা সর্বদা কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে আফগানিস্তানকে এ বিষয়ে তার দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। তবে জাফর এক্সপ্রেস ঘটনার পর পরিস্থিতি ভিন্নভাবে মোকাবিলা করতে হতে পারে। আইএসপিআর মহাপরিচালক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, যেই করুক না কেন; আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই– তাকে খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে। আমি আরও যুক্ত করতে চাই, জাফর এক্সপ্রেসের এই ঘটনা খেলার নিয়ম বদলে দেয়। কারণ এই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাকিস্তান, ইসলাম এবং বেলুচিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই।’ সন্ত্রাসীরা দেশের বাইরে তাদের সহযোগী এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেওয়ার ক্ষমতা এবং দেশের অভ্যন্তরে তাদের সহানুভূতিশীলদের এই কথাগুলো অবশ্যই তাদের ব্যাপারে মাথায় রাখবে। 

মালিক মুহাম্মদ আশরাফ: ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট; দ্য নেশন
থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন আম দ র স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।  

এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। 

বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ