পেঁয়াজের দামে ক্রেতা খুশি, লোকসানে কৃষক
Published: 17th, March 2025 GMT
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে। কম দামে পেঁয়াজ কিনে তারা বাজারে স্বস্তি পাচ্ছেন। কিন্তু কৃষকরা ঠিক উল্টো অবস্থায় রয়েছেন। কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পেঁয়াজের উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা তাদের জন্য লাভজনক নয়। এ পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য এক নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছেন রাজবাড়ীর কৃষক মো.
সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ‘মায়ের দোয়া আড়তের’ সামনে কৃষক সোলায়মানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘‘চলতি বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে গড়ে ২৪-২৫ মণ। এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ২৪ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয় ২৮ হাজার ৮০০ টাকা।’’
আরো পড়ুন:
এক লাফে পেঁয়াজের দাম কমলো কেজিতে ১০ টাকা
রমজানে স্বাভাবিক থাকবে আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম
‘‘অথচ বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ চাষে খরচ পড়েছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। লাভ তো দূরের কথা, প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ চাষে লোকসান হয়েছে ১২-১৫ হাজার টাকা। লোকসান হওয়ায় আগামীতে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে অনেক কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদন করবেন না।’’
শুধু সোলায়মান একা নয়, এরকম অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ অনুযায়ী পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় নীরবে ‘চোখের জল’ ফেলছেন।
যাত্রাবাড়ীতে কথা রাজবাড়ীর আরেক পেঁয়াজচাষি বোরহান শেখের সঙ্গে। বলেন, ‘‘পেঁয়াজ আবাদে বীজতলা তৈরি, সার, কীটনাশক দিয়ে জমি প্রস্তুত, সেচ, শ্রমিক মজুরিসহ প্রতি বিঘা জমিতে ৪৫-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বেশিরভাগ জমিতে ফলন হয়েছে ২৫-৩০ মণ। এসব পেঁয়াজ ১১০০-১২০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। পেঁয়াজ চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান হচ্ছে।’’
এবার দশ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন ফরিদপুরের রহিম মোল্লা। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে গড়ে ৩০-৩৫ মণ। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর প্রতি বিঘায় যার ফলন ভালো হয়েছে, তিনি সর্বোচ্চ ৪৩ মণ পেয়েছেন। পেঁয়াজের যে দাম পাচ্ছি, তাতে চাষাবাদ করা সম্ভব না। ওষুধ, সার, শ্রমিক খরচসহ সব কিছুর দাম বেশি। সরকার পেঁয়াজচাষিদের দিকে নজর না দিলে আগামীতে আর চাষ করা সম্ভব হবে না।’’
সবুজ নামের পাবনার আরেক কৃষক বলেন, ‘‘সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ না আনলে আমরা ভাল দাম পেতাম। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যর অবসানের জন্য। কিন্তু আমরা পেঁয়াজের চাষ করে আজ বৈষম্যের শিকার হয়েছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। সঠিক দাম পাচ্ছি না। সরকারে কাছে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ২০০০-২২০০ টাকা করার দাবি করছি।’’
যাত্রাবাড়ী মায়ের দোয়া আড়তের প্রোপাইটার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘এ বছর পেঁয়াজের দাম কম থাকায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট। দীর্ঘ ৫ বছরেও ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। আমরা কৃষকের কাছ থেকে যে দামে কিনি, তার চেয়ে সামান্য লাভে বেচি। এ বছর দেখেছি কৃষকদের চোখে-মুখে কান্না। তারা নীরবে কান্না করছেন। যে দামে তারা পেঁয়াজ উৎপাদন করছেন, সেই দামে বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য অনেকেই পেঁয়াজ বিক্রি করে হতাশ হয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছেন। আর বলছেন আগামী বছর চাষ করবেন না।’’
কৃষি বিভাগ জানায়, গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন। এ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৮ লাখ টন।
কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মৌসুমের সময় কৃষক পেঁয়াজ একসঙ্গে উত্তোলন ও বিক্রি করায় দাম কিছুটা কম থাকে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হলে কৃষকরা সঠিক দাম পাবেন। কৃষক প্রান্তিক পর্যায়ে যেন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন, সে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ১২০০ ট ক ন হয় ছ চ ষ কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৬০ হাজার ৮০২ টন গম নিয়ে দেশে এল যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় জাহাজ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত ৬০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি স্পার এরিস নামের জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।
সোমবার (২ নভেম্বর) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
আমি থাকাকালে তাইওয়ানে হামলার ‘পরিণতি কী হবে’ চীন জানে: ট্রাম্প
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উভয় দেশের সরকারে মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে জি টু জি ভিত্তিতে এ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশের খাদ্য অধিদপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) চুক্তিটি সই করে। এর আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে।
জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ২৫ অক্টোবর প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম বাংলাদেশে পৌঁছায়।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ