অর্থ আত্মসাৎ মামলায় কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কারাগারে
Published: 18th, March 2025 GMT
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার হাইকোর্টের নির্দেশে কুমিল্লার আদালতের আত্মসমর্পণ করেন আবু তাহের। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মাহবুবুর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু।
আইনজীবীরা বলেন, হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অ্যাডভোকেট আবু তাহের মুখে মাক্স পরে সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন। এ সময় ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তাকে দেখে ধাওয়া দিয়ে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মেরে লাঞ্ছিত করেন। পরে তিনি এজলাসে ঢুকে পড়েন। এ সময় বেশ কিছু আইনজীবীরা এজলাসের বাইরে অবস্থান নেন।
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শুনানিকালে আদালত কক্ষে কিছু আইনজীবী হৈচৈ করছেন। পরে তার জামিন নামঞ্জুরের পর সোমবার বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে মাথায় হেলমেট ও শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় তাকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নেওয়া হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সমিতির লেজার বইয়ে ওভার রাইটিং, ভুয়া ও দ্বৈত ভাউচার তৈরি, লেজার বইয়ের বিভিন্ন অংশে ফ্লুইড ব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অ্যাডভোকেট আবু তাহের ২০২২-২৩ অর্থবছর এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই মেয়াদে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে হিসাবরক্ষক কাজী সুমনের সহায়তায় সর্বমোট ৪ কোটি ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৭২০ টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে প্রথম মেয়াদে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৪ টাকা এবং দ্বিতীয় মেয়াদের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬ টাকা আত্মসাৎ করেন। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সমিতির ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবু তাহের এবং হিসাবরক্ষক কাজী সুমনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা আদালতে মামলা হয়। মামলার বাদী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম।
আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর সমিতির সাধারণ সভার প্রস্তাবক্রমে একই বছরের ২৪ নভেম্বর কার্যকরী কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্য পদ স্থগিত করা হয় এবং একই সঙ্গে হিসাবরক্ষক কাজী সুমনকে বহিষ্কার করা হয়।
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, সমিতির টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি আদালত আত্মসমর্পন করতে আসেন। কিন্তু আদালত তার জামিন মঞ্জুর না করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ইলেকট্রনিক খাতের দেশীয় জায়ান্ট কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ওয়ালটনের ব্যবসা বেড়েছে ৩১২ কোটি টাকা বা সোয়া ৭ শতাংশের বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি ৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল।
ব্যবসা বাড়লেও ওয়ালটনের মুনাফা কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ওয়ালটনের মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ওয়ালটনের মুনাফা কমেছে ৬৬ কোটি টাকা বা সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি।
গত রোববার ওয়ালটনের পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোম্পানিটির মুনাফার তথ্য গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে কোম্পানিটি।
আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের বছরের চেয়ে ব্যবসা বা আয় বৃদ্ধির পরও কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে মূলত দুই কারণে। প্রথমত, কোম্পানিটির উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ খরচ আগের বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকঋণের সুদ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়মূল্যের কারণে আর্থিক খরচও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে ১১৪ কোটি টাকা বা ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ওয়ালটনের ব্যাংক সুদ ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত আর্থিক খরচের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এই খাতে খরচ বেড়েছে ৫৮ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশের বেশি।
আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বা আয় ৩১২ কোটি টাকা বাড়লেও তার বিপরীতে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে এই খরচ বেড়েছে ২১৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে ওয়ালটনের উৎপাদন খরচ ছিল ২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছর ৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।
এদিকে ৯ মাসের সমন্বিত আয়-ব্যয়ের হিসাবের পাশাপাশি সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনও আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে ওয়ালটন। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি ২ হাজার ৫১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। তার বিপরীতে মুনাফা করেছে ৩৯২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। তার বিপরীতে মুনাফা করেছিল ৪২২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৩০ কোটি টাকা।