মহাকাশে দীর্ঘদিন থাকলে শরীরে হতে পারে অদ্ভুত বদল
Published: 18th, March 2025 GMT
মহাকাশচারীরা দীর্ঘদিন মহাকাশে অবস্থান করলে তাঁদের শরীরে ঘটে যেতে পারে অদ্ভুত সব পরিবর্তন। বদলে যেতে পারে তাঁদের পেশি ও মস্তিষ্ক, প্রভাব পড়তে পারে পাকস্থলীতে থাকা ব্যাকটেরিয়াতে।
এখন পর্যন্ত একজন মহাকাশচারীর টানা ৪৩৭ দিন মহাকাশে অবস্থান করার রেকর্ড রয়েছে। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি রাশিয়ার মহাকাশচারী ভালেরি পলিয়াকভ ওই রেকর্ড গড়েন।
মার্কিন মহাকাশচারীদের মধ্যে ফ্রাঙ্ক রুবিও একবারে সর্বোচ্চ ৩৭১ দিন মহাকাশে ছিলেন। তাঁর আগে রেকর্ডটি ছিল ৩৫৫ দিনের।
বিবিসির খবরে বলা হয়, রুবিওর অবশ্য এত দিন মহাকাশে থাকার কথা ছিল না। কিন্তু তিনি ও তাঁর সতীর্থদের মহাকাশ স্টেশন থেকে যে মহাকাশযানে ফেরার কথা ছিল, সেটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে ২০২৩ সালের মার্চে তাদের মহাকাশে অবস্থানের সময় বাড়তে হয়।
আরও পড়ুনঅবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন সুনিতাসহ চার নভোচারী৪ ঘণ্টা আগেওই বাড়তি সময় মিলিয়ে রুবিও মহাকাশে যে ৩৭১ দিনে থেকেছেন, সে সময়ে তিনি ৫ হাজার ৯৬৩ বার পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণ করেছেন ১৫ কোটি ৭৪ লাখ মাইল (২৫ কোটি ৩৩ লাখ কিলোমিটার) দূরত্ব।
মহাকাশযান সোয়ুজ এমএস-২৩ যখন ধুলার ঝড় উড়িয়ে নিরাপদে কাজাখস্তানের শহর ঝেজকাজগানে ফিরে আসে, তখন রুবিওর মুখে ছিল আকর্ণবিস্তৃত হাসি। কিন্তু নিজের ক্যাপসুল থেকে তিনি একা বেরিয়ে আসতে পারেননি। উদ্ধারকারী দল তাঁকে বের করে নিয়ে আসে। লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) লো গ্রাভিটির মধ্যে থাকার কারণে তাঁর শরীরকে মূল্য চোকাতে হয়েছে।
দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকে থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন।
বিভিন্ন দেশ এখন মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, মঙ্গল গ্রহে যেতে এবং সেখান থেকে ফিরে আসতে প্রায় ১ হাজার ১০০ দিনের (তিন বছরের বেশি) মতো সময় লেগে যেতে পারে। এ ছাড়া যে মহাকাশযানে মহাকাশচারীদের মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেটির আকার আইএসএস থেকে অনেক ছোট হবে। যার অর্থ, সেখানে ব্যায়ামের জন্য ছোট এবং কম ওজনের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়বে।
দীর্ঘ মহাকাশ ভ্রমণে মহাকাশচারীদের শরীর ফিট রাখার পাশাপাশি মানবদেহের ওপর দীর্ঘ ভ্রমণের প্রভাব নিয়েও তাই উদ্বেগ বাড়ছে।
বছরের পর বছর টানা মহাকাশে থাকার ফলে মানবদেহের ওপর কিছু প্রভাব পড়ে।
পেশি ও হাড়ের ক্ষয়মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ক্রমাগত টান খুব কম থাকার কারণে পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মানুষের পিঠ, ঘাড়, ঊরু ও পায়ের হাঁটুর নিচের পেশিতে। মাইক্রোগ্রাভিটিতে যেহেতু সেগুলোর খুব বেশি কাজ করতে হয় না, সেহেতু সেগুলো ক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে থাকে।
মহাকাশে মাত্র দুই সপ্তাহে পেশির ঘনত্ব ২০ শতাংশ পর্যন্ত এবং তিন থেকে ছয় মাসে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
একইভাবে হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তিও কমতে থাকে। মহাকাশচারীদের মহাকাশে প্রতি মাসে হাড়ের ঘনত্ব ১ থেকে ২ শতাংশ কমে। ছয় মাসের বেশি হলে সেটা ১০ শতাংশের বেশি হয়। পৃথিবীতে বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতিবছর হাড়ের ঘনত্ব গড়ে ০ দশমিক ৫ থেকে ১ শতাংশ কমে।
সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর আট দিনের অভিযানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন। তবে ৯ মাসেও তাঁরা সেখান থেকে ফিরতে পারেননি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ড় র ঘনত ব ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে
মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।
মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তিপৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)
আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।
এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্বমৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।
এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)
হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)
মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।
তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।
বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।
আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়ামৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)
মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।
নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।
হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)
এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।
মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)
মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।
আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩