ঈদের খুব বেশি দেরি নেই। উৎসবের এ দিনটিতে সবাই যেমন নতুন পোশাক, গহনা বা মেকআপের জন্য আলাদা গুরুত্ব দেন, তেমনি ত্বকের জন্যও চাই বাড়তি মনোযোগ।
রোজায় অপর্যাপ্ত পানি পান, ঘুমের সমস্যা, ইফতারে ভাজাপোড়া খাওয়াসহ চারপাশের ধুলো, দূষণ, রোদ ও স্ট্রেসের কারণে ত্বক অনেক নির্জীব হয়ে যায়। তাই ঈদের আগের কয়েকটা দিন একটু বাড়তি যত্ন নিলেই ত্বকে আসবে কাঙ্ক্ষিত ঔজ্জ্বল্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঈদের আগে ত্বকের যত্নের সহজ ও কার্যকর উপায়।
ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি
ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখার প্রথম শর্ত হলো পরিচ্ছন্নতা। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ভালো মানের ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। মেকআপ করলে অবশ্যই মেকআপ রিমুভার বা ক্লিনজিং অয়েল দিয়ে ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করুন।
এ ক্ষেত্রে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল বা ফোমভিত্তিক ফেসওয়াশ আর শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিমভিত্তিক ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
মৃত কোষ দূর করুন
স্ক্রাবিং মৃত কোষ দূর করে ত্বককে প্রাণবন্ত করে তোলে। সপ্তাহে ২-৩ বার স্ক্রাব করুন।
ডিআইওয়াই স্ক্রাব ঘরে বসেই বানিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য ১ চামচ চিনি, ১ চামচ মধু, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ভালোভাবে মিশ্রিত করে হাত দিয়ে হালকা স্ক্রাব করুন। ওটমিল ও দই মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক হাইড্রেটেড রাখা
রোজায় ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে ইফতারের পর পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি। প্রতিদিন রাতে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। তাছাড়া ডাবের পানি ও ফলের রস খেলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন
ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার ন্যাচারাল ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। শুষ্ক ত্বকের জন্য ১ চামচ দই, ১ চামচ মধু, ১ চামচ অলিভ অয়েলের মিশ্রণ দিয়ে ম্যাসাজ করুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ১ চামচ বেসন, এক চিমটি হলুদ আর গোলাপজলের মিশ্রণ দিয়ে ম্যাসাজ করুন। অন্যদিকে স্বাভাবিক ত্বকের জন্য ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ চামচ শসার রসের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। প্যাক লাগানোর পর ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের সৌন্দর্যে খাবারের গুরুত্ব
পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে সবুজ শাকসবজি, গাজর, বিটরুট, বাদাম, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। তাছাড়া ইফতারে ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
রোদে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচায় ও ট্যান পড়া রোধ করে। সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এসপিএফ ৩০ বা এর বেশি মানের সানস্ক্রিন বেছে নিন। বাইরে বের হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান এবং ৩-৪ ঘণ্টা পরপর পুনরায় লাগান।
ভালো ঘুম অপরিহার্য
অনেকেই রাতে দেরি করে ঘুমান। ফলে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যায়। ত্বক সতেজ রাখতে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।
শেষ মুহূর্তের গ্লো পেতে যা করবেন
ঈদের আগের রাতে ভালোভাবে ত্বক ক্লিনজিং করুন। শিট মাস্ক ব্যবহার করলে ত্বক তাৎক্ষণিক উজ্জ্বল দেখাবে। সকালে উঠে বরফ বা ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন; এতে ত্বক ফ্রেশ লাগবে।
ত্বকের যত্ন নিয়ে শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা জানান, ‘ত্বকের যত্ন নেওয়ার আগে আপনাকে ত্বকটা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে অ্যালার্জি, দাগ, ছোপ, ডেডসেলের মতো সমস্যা আছে কিনা। তারপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার ইউজ করতে হবে।
শোভন বলেন, ড্রাই স্কিনের জন্য ফেস ক্লিনজার আর অয়েলি বা নরমাল স্কিনের জন্য ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন। এরপর স্কিনের কন্ডিশন বুঝে স্ক্রাব দিয়ে ভালোভাবে স্ক্রাবিং করতে হবে।
তিনি বলেন, টক দই বা আইসিং সুগার মিক্সড করেও স্ক্রাব তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক যদি খুব সেনসিটিভ হয় তাহলে আইসিং সুগারের পরিবর্তে ওটস ব্যবহার করতে পারেন; এতে ত্বকের চামড়া কেটে বা ছিঁড়ে যাবে না।
তারপর ত্বককে ভালোভাবে নারিশ করতে হবে, ম্যাসাজ করতে হবে। যাদের ত্বক অনেক বেশি অয়েলি তারা বেশি ময়েশ্চারাইজিং কোনো প্রোডাক্ট দিয়ে ফেইস ম্যাসাজ করা থেকে বিরত থাকবেন। এ ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল, সুদিং জেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন।
ড্রাই ত্বকের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, সরাসরি বাটার দিয়েও ফেইস ম্যাসাজ করা যেতে পারে। এতে ড্রাইনেস খুব ভালোভাবে চলে যায়। এ ছাড়া ফেস ক্রিম দিয়েও ফেস ম্যাসাজ করা যায়। ম্যাসাজ হয়ে গেলে ত্বক খুব ভালোভাবে ক্লিন করে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্যাক ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া ত্বকটাকে উজ্জ্বল রাখার জন্য নিয়মিত সিরাম, রাতে নাইট ক্রিম এবং দিনের বেলায় অবশ্যই সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। v
মডেল: নুসরাত; ছবি: কাব্য
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ব যবহ র কর ব যবহ র কর ন ব যবহ র করত ম য স জ কর ত বকক
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।