জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের সংস্কারবিষয়ক সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বুধবার এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার এই কমিটির অনুমোদন দেন দলটির আহ্বায়ক মো.

নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

কমিটিতে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সারোয়ার তুষারকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মনিরা শারমিন, জাবেদ রাসিন, সালেহ উদ্দিন ও আরমান হোসাইন।

সারোয়ার তুষার প্রথম আলোকে বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনাগুলোতে এই কমিটি অংশ নেবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা যখন রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকবেন, তখন এনসিপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব অংশ নেবেন।

সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে বৃহস্পতিবার থেকে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্যায়ে এদিন বেলা তিনটায় এলডিপির সঙ্গে আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মাতামত চেয়ে ৬ মার্চ ৩৭টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি ও ‘স্প্রেডশিট’ পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। ১৩ মার্চের মধ্যে তাদের মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ১৫টি দল তাদের মতামত জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত কয়েক দিনের মধ্যে জানাবে বলে কমিশনকে জানিয়েছে।

আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু বৃহস্পতিবার১৮ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সদস য এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে

লন্ডনে শুক্রবার যে বৈঠক হয়ে গেল, তা দেশের রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য আশাজাগানিয়া। এর জন্য আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান– উভয় নেতাকে অভিনন্দন জানাতে পারি। তারা দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন। 

বৈঠকটির অন্যতম একটি দিক হলো, বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করতে একটি মহল যে ক্রমাগত প্ররোচনা ও উস্কানি দিয়েছে, তা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশের জন্য লন্ডন বৈঠক মঙ্গলজনক হয়েছে। 

আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন প্রস্তুতি সাপেক্ষে। তবু সামনে আরও সাত মাস সময় রয়েছে। সরকার যেহেতু এরই মধ্যে ১০ মাস কাজ করেছে, বহু কিছু এগিয়ে গেছে। বাকি সাত মাসে নির্বাচনের অন্য প্রস্তুতিগুলোও শেষ করা সম্ভব। 

সাত মাস কম সময় নয়। জনপ্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজানো, পুলিশ বাহিনীকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে সাজিয়ে তোলা, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজগুলো এখন জোরেশোরে করা দরকার। এবারের নির্বাচনে আরও একটি বিষয় আলোচনায় এসেছে তা হলো, প্রবাসীদের ভোটাধিকার। তাদেরও ভোটার তালিকা করতে হবে। এসব কাজের পর্যাপ্ত সময় এখনও হাতে আছে।

আমার মনে হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে অপসারিত হবে। যারা নানা রকম উস্কানি দিচ্ছিল, যারা দেশের ভালো চায় না, তারা হতাশ হবে।

আরেকটি বিষয় খুব জরুরি তা হলো, সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার। বাকি যে সাত মাস আছে, সে সময় এ দুটি কাজ গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলার বিচার অন্তত সম্ভব। সরকার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান জুলাই গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছেন। তাই বিচার সম্পন্ন করা গেলে দেশের মানুষের মনোবেদনা দূর হবে।

সংস্কারের কাজ চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে হয়নি। জনগণের প্রত্যাশা, সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার করা হবে। সরকার, প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই বিচারের প্রশ্নে অনড় ও অটল থাকবেন। জনগণের এসব প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অসন্তুষ্ট হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। যদিও বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ এলডিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখন কোনো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনও বিরোধিতা আসে। লন্ডন বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত বা দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা হয়নি। একটা সম্ভাব্য সময় ঠিক করা হয়েছে। যেসব দল এর সমালোচনা করছে, তারা বলুন, এই সময়টা তাদের অপছন্দনীয় কিনা? তারা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন। সমালোচনা না করে মূল কথাটা বললেই তো হয় যে, তারা কবে নির্বাচন চান।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসির ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠন করার নির্দেশ
  • যেখানে ঐকমত্য যতটুকু হবে, ততটুকুই সংস্কার হবে: আমীর খসরু
  • বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
  • কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
  • দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
  • আগামীকাল ফের সংস্কারের সংলাপ
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে