বাসমান দেরাবি

যখন গণহত্যা
শেষ হবে

যখন গণহত্যা শেষ হবে

আমি হাঁটব পা টিপে টিপে

খুঁজব আমার বন্ধুদের কবর, 

ভাবব ইমান, ওয়াদা আর ইসার জন্য কী লেখা যায়;

হয়তো ক্ষমা চেয়ে কিছু লিখব,

            তবে দুনিয়াবাসীর পক্ষ থেকে নয়

যখন গণহত্যা শেষ হবে

আমি আমার বাকি বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করব, 

আমরা কাঁদব আমাদের অসমাপ্ত কান্না 

কারণ, অবশেষে মৃত্যু দূরে চলে গেছে আমাদের কাছ থেকে

অথচ প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এই বেঁচে থাকা নিয়ে 

                      আমরা কত অভিশাপ দিতাম! 

এরপর আমরা গান গাইব

যখন গণহত্যা শেষ হবে

বাড়িতে ফিরব আমি 

আমার প্রতিবেশীর সন্তানদের গুনে গুনে দেখব

আর স্মৃতি আমাকে হতাশ করে না বলে

বোকার মতো আশা করব, তারা সবাই

                                         ঠিকঠাক আছে 

তাদের সংখ্যাটি নিশ্চয়ই বদলাবে না

আমি একটি জানালার পাশে ঘুমিয়ে পড়ব

এবং স্বপ্ন দেখব

আমাকে জ্বালিয়ে মারা তাদের চিল্লাপাল্লা সব…

বাসমান দেরাবি

পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট। গাজার আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন, ইসরায়েলি হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন ধ্বংসস্তূপ। ৩২ বছর বয়সী

এই কবি এখনো গাজায়

রয়েছেন।

শাহাদ আলনামি

আমার বয়স জানতে চেয়ো না

তোমার বয়স কত? যুদ্ধের সময়

পাঁচ বছরের একটা বাচ্চার বয়স আর পাঁচ থাকে না

চার বছরেই তার বয়স হয়ে যায় নব্বই,

আমাকে আমার বয়স জিজ্ঞাসা কোরো না

অনুরোধ করছি

দুঃখ, বেদনা, যন্ত্রণা এবং আরও যা যা আছে

এই শব্দগুলোই কি আমার বয়স বর্ণনার জন্য

                                               যথেষ্ট নয়

আমাদের ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপই

                          কেবল তা বোঝাতে সক্ষম 

এবং আমাদের ভাঙা স্বপ্নগুলো, যেগুলো আজীবন                                                   লালন করেছি 

আমাদের এই জীবন নিয়ে

               মা–বাবারা কি আগে থেকে জানতেন?

এই গৃহহীনতা, গণহত্যা, অনাহার, এই রক্তপাত

এই অন্তহীন রাত আগের দিনের চেয়েও অন্ধকার—

আমরা যা ঘৃণা করি,

                    সেটিই আমাদের নিয়তি হয়ে যায়

বোঝার চেষ্টা করুন, এত খোঁজাখুঁজির কিছু নেই

বয়স নিয়ে প্রশ্নটা বন্ধ দরজার পেছনে ছুড়ে ফেলুন

বয়স এক বছর হোক, চব্বিশ বা চুয়াত্তর

একটা গণহত্যার গর্জনের তলে

সেটি কোনো ব্যাপার নয়

শাহাদ আলনামি

গাজা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছেন এই তরুণ কবি। গাজার ওপর ইসরায়েলি গণহত্যা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছেন মধ্য গাজার একটি শরণার্থীশিবিরে। সেখান থেকেই প্রতিনিয়ত লিখে যাচ্ছেন গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা।

জোমানা জাকুওত

শেষ দরজা

এই দরজার পেছনে

একজন মা অপেক্ষা করছেন

হারানো ছেলে ফিরে আসবে বলে—

যেন সে কখনো মৃত্যুর মানে কী, তা না বোঝে

সে তার প্রিয় সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে থাকে

যতক্ষণ না চোখের পানি শুকিয়ে যায় 

মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়

রক্তও সব বের হয়ে যায়—

যেন সে আর সে নেই, নিজেই হয়ে গেছে সন্তান 

এভাবে নিজের আত্মার টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছে

ছেলের সঙ্গে চলে যাবে বলে

দ্বিতীয় দরজার আড়ালে

এক মেয়ে স্বপ্ন দেখে 

তার বাবা ফিরে আসবে কারাগার থেকে

প্রতিদিন কল্পনায় বাবাকে দেখে সে 

সবকিছুতেই তাকে দেখতে পায়

প্রতিদিন; 

বাবা হয়তো তাকে দেখছে না

সে বাবার সঙ্গে কথা বলে

কিন্তু বাবা কোনো সাড়া দেয় না, 

সে নিজেই বন্দী হয়ে যায় শূন্যতার কারাগারে

যখন তার বাবা সত্যিই বন্দী

তা কেবল তার ভেতরেই

তৃতীয় একটা দরজার পেছনে

চিৎকার করছে এক আহত লোক 

হাসপাতালের শেষ করিডোর থেকে, 

তার পা কেটে ফেলা হয়েছে

কোনো অ্যানেসথেসিয়া ছাড়া

একটি বালিশ বা বিছানা ছাড়া

ব্যথা–যন্ত্রণায় সে প্রলাপ বকছে

কোনোভাবেই হাসপাতাল ছেড়ে যাবে না সে; 

নিজের কাছেই এখন হয়ে গেছে বোঝা

অপেক্ষা করছে, আবার পা গজিয়ে যাবে তার,

সে একা একা চিৎকার করে যায়—

হায়, তার কান্না শোনার কেউ নেই! 

কেবল গভীর দুঃখই তার ভেতরে বাড়ে আরও

কত কত দরজার আড়ালে

ছোট ছোট পাখির ঝাঁক

যুদ্ধে শহীদদের মৃতদেহ 

নখে আঁকড়ে ধরে

আকাশের দিকে যায় উড়ে, 

পড়ে থাকাদের বয়ে নিয়ে যেতে যেতে

আমাদের জন্য বানায় এমন সিঁড়ি

যেন বেহেশত পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারি 

আরও অনেক দরজার পেছনে

আছে কত জীবত মানুষ, যেন সবাই মৃত

তারা হাঁটছে জীবনের পথে

যেন হাঁটতে অক্ষম, 

একটি রাস্তা পার হতে গেলেই তারা কাঁদতে থাকে

একজন শহীদ, একজন আহত বা এক বন্দীর স্মরণে

তারা ক্লান্তিতে ডুবে যায় 

পানিতে ডুবন্ত কোনো মানুষের মতো

লক্ষ্যহীনভাবে নৌকা চালিয়ে যায় তারা

একা

এই আশায়, দরজাটা যদি খুলত

একটি মুহূর্তের জন্য

একটিবারের জন্য 

এই প্রবল দুঃখের মধ্যেও তারা বিশ্বাস করতে থাকে

এই দরজাই

শেষ দরজা

শহরে।

জোমানা জাকুওত

গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। আরবি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই কবিতা লেখেন। গাজার ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসন ও যুদ্ধের নৃশংসতা কবি করে তুলেছে এই তরুণীকে। গাজা থেকে এখন তিনি আশ্রয় নিয়েছেন লেবাননের গাজে শহরে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র বয়স আম দ র র জন য আম র ব শ ষ হব

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী