অবশেষে ভিনির ‘হলুদ রাইফেল’ থেকে ছুটল ‘গুলি’
Published: 21st, March 2025 GMT
ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে তখন যোগ করা সময়ের ১২ মিনিটের খেলা চলছে। টাচলাইন থেকে বদলির ডাক এসেছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের। তাঁর জায়গায় নামবেন লিও ওর্তিজ। কিন্তু ভিনিসয়ুস করলেন কী, কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার জন লুকুমির বিরুদ্ধে কোনো একটি অভিযোগ নিয়ে এগিয়ে যান রেফারির প্রতি। বিপদ টের পেয়ে দৌড়ে যান রাফিনিয়া। ভিনিসিয়ুসকে প্রায় ঠেলে সরিয়ে মাঠ ছাড়ার পথটা দেখিয়ে দেন। রাফিনিয়ার মনে ছিল, রেফারির সঙ্গে মাথা গরম করে কিংবা মাঠ ছাড়তে দেরি করে ভিনি হলুদ কার্ড দেখলে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পরের ম্যাচটি খেলতে পারবেন না।
আরও পড়ুনশেষ মুহূর্তে ভিনিসিয়ুস–জাদুতে ব্রাজিলের দারুণ জয়২ ঘণ্টা আগেকিন্তু ভিনির তা মনে ছিল না। কয়েক মুহূর্ত আগেই গোল করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে ভেসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন। আর সে গোলে ব্রাজিলও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হারিয়েছে কলম্বিয়াকে, যেখানে ভিনির নামই উঠে আসবে সবার আগে। কারণ খুব দরকারের মুহূর্তে ব্রাজিলের হয়ে জ্বলে উঠেছেন রিয়াল মাদ্রিদ, যেটা ভিনির জাতীয় দল ক্যারিয়ারে একদমই বিরল।
৩৭ ম্যাচে ৫ গোল—মানে গারিঞ্চায় নামার আগে ব্রাজিল দলে ভিনি এই পারফরম্যান্স দেখে অনেকেরই বিশ্বাস হবে না এই একই খেলোয়াড় রিয়ালের জার্সিতে স্রেফ আগুন! ব্রাজিলের সমর্থকেরা অবশ্য শেষ পর্যন্ত সেই আগুনের দেখা পেলেন ভিনির কাছ থেকে। অবশ্য ব্রাজিলের প্রথম গোলেও তাঁর অবদান আছে। কলম্বিয়ার বক্সে ফাউলের শিকার হয়েছিলেন বলেই তো পেনাল্টি পেয়েছে ব্রাজিল, রাফিনিয়া গোলও করেন স্পটকিক থেকে। কিন্তু ম্যাচের সেরা গোলটি নিঃসন্দেহে ভিনির।
আরও পড়ুন‘ভক্তে’র কাছে হার রোনালদোর, হার এমবাপ্পেরও, জিতল জার্মানি১ ঘণ্টা আগেযোগ করা সময়ে তখন ৯ম মিনিটের খেলা চলছে। সতীর্থের পাস পেয়ে বাঁ প্রান্ত থেকে একটু সরে ভেতরে ঢোকেন ভিনি। বক্সের বেশ বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরাল শট নেন। বল কলম্বিয়ান সেন্টার ব্যাক কার্লোস কুয়েস্তোর পা ছুঁয়ে বাতাসে ভাসতে ভাসতে আশ্রয় নেয় জালে। যে মুহূর্তে, যেখান থেকে কেউ ভাবেননি গোল হতে পারে—ভিনি ঠিক সেটাই সম্ভব করেছেন স্নাইপারের মতো নেওয়া শটটিতে। দেখে মনে হতে পারে, আরে, ভিনির ডান পা তো রাইফেল! ব্রাজিলের হয়ে ৩৮ ম্যাচে তাঁর ষষ্ঠ গোলটি ভক্তরাও নিঃসন্দেহে মনে রাখবেন অনেক দিন। জাতীয় দলের হয়ে ভিনি সর্বশেষ গোল করেছিলেন গত বছর ২৯ জুনে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে কোপা আমেরিকায়। পাঁচ ম্যাচ পর আবারও গোলের দেখা পেলেন।
ভিনির এই গোলটি ঢুকে পড়েছে দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসের পাতায়ও। দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেরিতে (৯৮ মিনিট ২১ সেকেন্ড) করা জয়সূচক গোল। এই কলম্বিয়ার বিপক্ষেই ১০০ মিনিট ৪ সেকেন্ডে গোল আছে উরুগুয়ের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল উগার্তের।
ম্যাচ শেষে ভিনি বলেছেন, তাঁর গোলটি দলকে স্বস্তি এনে দিয়েছে, ‘দলের পারফরম্যান্সে খুব খুশি। জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল। গোলটাও আমার প্রাপ্য ছিল। আজকের গোলটি আসলে স্বস্তির, সুখেরও। জাতীয় দলের হয়ে খেলার অনুভূতিটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যতবারই খেলি, মনে হয় প্রথমবার।’
রাফিনিয়ার সেই সময়ের গালমন্দ হজম করা নিয়েও কথা বলেছেন ভিনি, ‘হলুদ কার্ড দেখেছি আগে। বাছাইপর্বের খেলা সব সময়ই জটিল। দুটি কার্ড দেখলেই নিষিদ্ধ। পরের ম্যাচে বসে থাকা যাবে না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম
চট্টগ্রাম টেস্টে আজ প্রথম দিনে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে ৬০ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেনতাইজুল ইসলাম। টেস্টে এ নিয়ে ১৬তমবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম দিনের খেলা শেষে তাইজুলের প্রশংসা করে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন তামিম ইকবাল।
আরও পড়ুনতাইজুলের মনে হয় না তারা খেলা বোঝে১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের পেজে তাইজুলের একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত (আন্ডাররেটেড) বোলার। এখন খেলা অন্য বোলারদের পরিসংখ্যান দেখুন, তাহলে আমার কথাটা বুঝতে পারবেন। আরেকবার ৫ উইকেট নিয়ে দারুণ খেলেছ তাইজুল।’
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে টেস্ট ও ডিসেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক তাইজুলের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ২০১৯ সালে। ওয়ানডে (২০) ও টি-টোয়েন্টির (২) চেয়ে টেস্ট ম্যাচই (৫২) বেশি খেলেন তাইজুল। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি টেস্টে প্রথম দিনের পারফরম্যান্সসহ মোট ৫৩ টেস্টে এ পর্যন্ত ২২৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। তাঁর টেস্ট সংস্করণের পারফরম্যান্সটা যাচাই করে দেখা যায়।
এখনো যাঁরা খেলছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নাথান লায়নের। অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনারের টেস্ট অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেকের সময় থেকে লায়নের পারফরম্যান্স— ১০৩ টেস্টে ২৯.৪৮ গড়ে ৪৪১ উইকেট। মোট ২৪ বার ৫ উইকেট নিলেও তাইজুলের অভিষেকের পর থেকে ১৯ বার ৫ উইকেট নেন লায়ন। তবে অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলায় লায়ন এ সময়ে তাইজুলের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বোলিং গড় এবং স্ট্রাইকরেটে লায়ন ও তাইজুলের মাঝে ব্যবধান বেশি না। তাইজুলের বোলিং গড় ৩১.৫৬, স্ট্রাইক রেট ৬১.৯, যেখানে লায়নের স্ট্রাইকরেট ৬১.৬ ও গড় ৩০.১৯।
আরও পড়ুনতাইজুলের ভেলকি, শেষ সেশনে গেল ৭ উইকেট২ ঘণ্টা আগেভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েন। টেস্টে তার অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেক থেকে এই সংস্করণে ৮৫ ম্যাচে ২২.৮৪ গড়ে ৪৩০ উইকেট নেন অশ্বিন। এ সময়ে ২৮ বার পেয়েছেন ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও বেশি বেশি টেস্ট খেলায় স্বাভাবিকভাবেই এ সময়ে তাইজুলের তুলনায় বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন অশ্বিন।
ভারতের আরেক স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তাইজুলের অভিষেকের দুই বছর আগে টেস্টে অভিষেক জাদেজার। তাইজুলের অভিষেকের সময় থেকে এ পর্যন্ত ৬৮ টেস্টে ২৭৮ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। তবে তাঁর চেয়ে এ সময়ে বেশি সংখ্যকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। জাদেজা এ সময়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৩ বার, তাইজুল নিয়েছেন ১৬ বার।
তাইজুল ৫ উইকেট নেওয়ার পর তাঁকে জড়িয়ে ধরেন অধিনায়ক নাজমুল