জীবনধারণের ভরসা পাহাড়ি ছড়া ও পুকুরের পানি
Published: 21st, March 2025 GMT
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তঘেঁষা দুটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এখানকার মানুষের জীবনধারণের ভরসা পাহাড়ি ছড়া ও পুকুরের পানি।
গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলাগড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করছেন আমেনা খাতুন ও জোসনা বেগম। এ সময় জিজ্ঞাসা করতেই আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার কোমর লইয়া খারাইবার পারি না। কষ্ট কইরা এই ঝর্ণার পানি লইয়া খাইয়া বাঁচুন লাগে। সরকার যদি আমাগো একটা ব্যবস্থা করতো, তাইলে বিরাট উপকার অইতো।’
এমন আক্ষেপ শুধু আমেনা বেগমের নয়, ধোবাউড়া এলাকার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষের এমন আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। সুপেয় পানির জন্য তাদের সংগ্রাম যেন শেষ হবার নয়। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ছড়ার ময়লা পানি ও পুকুরের ঘোলা পানি দিয়ে গৃহস্থালির কাজ সারতে হয় তাদের। খেতেও হচ্ছে সেই পানি। এতে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সরেজমিন দেখা গেছে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলগড়া, কাশিপুর, বাকপাড়া, শানখলা, পঞ্চনন্দপুর গ্রাম ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাংগা, চন্দকোনা এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল। এসব এলাকায় নলকূপ বসানো যায় না। এসব এলাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শুকনো মৌসুমে পুকুর ও পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করতে হয়। এতে পেটের পীড়া, চর্মসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। এসব গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি থাকায় তাদের পক্ষে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। গ্রামে দু-একজন অধিক অর্থ ব্যয় করে সাবমারসিবল পাম্প বসালেও বেশির ভাগ মানুষের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন হচ্ছে ধোবাউড়া উপজেলার মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা। এই এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নলকূপের পাইপ মাটির গভীরে পানির স্তর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। ৫০-৬০ মিটার গভীরে গেলেই পাইপ আটকে যায় পাথরে। তাই গভীর নলকূপ বসানো কষ্টসাধ্য। যারা নিজ উদ্যোগে অগভীর নলকূপ বসিয়েছেন, তাদের নলকূপেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না।
আদিবাসী নারী ইতি চিসিম ছড়ার পানি সংগ্রহ করতে এসে জানান, তাঁর বাড়িতে নলকূপ না থাকায় পানির জন্য সারা বছরই কষ্ট করতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমরার কল (টিউবওয়েল) নাই। আমরা অনেক আগে থাইকা পাহাড়ের ছড়ার পানি খাই। রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করি। খালি আমি না, সবারই এই অবস্থা।’
পানির কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপ করেন ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাঙ্গা সীমান্ত এলাকার আমির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাবারে, আমরা শুষ্ক মৌসুমে হিসাব করে পানি পান করি। টিউবওয়েলে পানি উঠে না। পুকুর আর ছড়াই আমাদের ভরসা।’
দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিন বছরে সীমান্ত এলাকায় ১০টি গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করেছেন। ওই এলাকার কেউ আবেদন করেননি। আবেদন করলে বিকল্প পদ্ধতিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী শফিউল আজমের দাবি, সীমান্ত এলাকায় দুটি নলকূপ দেওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। এবার নতুন প্রকল্প সব প্রতিষ্ঠানভিত্তিক।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিনের ভাষ্য, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের কারণে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে চাইছেন তারা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ এল ক য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এপ্রিলে ডেঙ্গু রোগী মার্চের দ্বিগুণ
চলতি বছরের মার্চ মাসের চেয়ে সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিলে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি ছিল। গত চার মাসে দেশে যে পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, গত বছরের প্রথম চার মাসে তা হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের বছর ২০২৩ সালের প্রথম চার মাসেও ডেঙ্গুতে এত আক্রান্ত রোগী ছিলেন না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ মার্চ মাসে করা জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে বাড়লেও ডেঙ্গুর শূককীট বা লার্ভার পরিমাণ বেশ কমেছে আগের জরিপের সময়ের চেয়ে। তবে এপ্রিল মাসে দেশজুড়ে থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি লার্ভার পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। চলতি মে মাসেও এমন ধারার বৃষ্টির প্রবণতা আছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর বিস্তার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদেরা। তাঁদের কথা, যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবার ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৫৭২। গত বছরের প্রথম ৪ মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৭৫।দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণের বছর ২০২৩ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭০৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে রোগীর সংখ্যা আগের বছরের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমে যায়। মৃত্যুর সংখ্যাও তেমন হারেই কমে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৫৭২। গত বছরের প্রথম ৪ মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৭৫।
সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭০১। মার্চ মাসে এ সংখ্যা ছিল ৩৩৬।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের সঙ্গে এ বছরের তুলনা করলে দেখা যায়, এবার প্রতি মাসে আগের বছরের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫০৪ জন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন যথাক্রমে ১ হাজার ৫৫, ৩৩৯ ও ৩১১ জন। এবার এই ৩ মাসে রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ১৬১, ৩৭৪ ও ৩৩৬।
এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে প্রতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটা ভালো ইঙ্গিত বহন করছে না। ডেঙ্গু আমাদের কাছে অপরিচিত রোগ নয়। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত ভালো হয়নি। এবারের ঊর্ধ্বগতি ডেঙ্গুর প্রকৃত মৌসুম অর্থাৎ বর্ষাকালে সংক্রমণের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলার আশঙ্কা রেখে যাচ্ছে।জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেননিছক সংখ্যা দিয়ে রোগের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করা যায় না, এমন কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সংখ্যা নিঃসন্দেহে কিছু ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে প্রতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটা ভালো ইঙ্গিত বহন করছে না। ডেঙ্গু আমাদের কাছে অপরিচিত রোগ নয়। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত ভালো হয়নি। এবারের ঊর্ধ্বগতি ডেঙ্গুর প্রকৃত মৌসুম অর্থাৎ বর্ষাকালে সংক্রমণের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলার আশঙ্কা রেখে যাচ্ছে।’