চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের জগদল গ্রামের তিনটি টিউবওয়েলের সব কটিই নষ্ট। গ্রামটিতে প্রায় এক শ পরিবারের বাস। তাদের নিত্যদিন পানির কষ্ট। এই গ্রামে ২৫০ বিঘার বোরো চাষের একটি ‘স্কিম’ ছিল বাবুল হোসেনের। গভীর নলকূপের সেচেই চলত বোরো চাষ। ভূগর্ভে পানি কমে যাওয়ায় বছর দশেক ধরে সব জমিতে বোরো চাষ বন্ধ। তাই এসব খেতে এখন গমের চাষ হয়।
গ্রামে এখন আমন ধান আর শুষ্ক মৌসুমে গম—এই দুই চাষে সীমাবদ্ধ চাষাবাদ। তবে লালমাটির বরেন্দ্রভূমির এ গ্রামে বর্ষার পানিনির্ভর আমনেও অনেক সেচ লাগে।
বাবুল হোসেন বলছিলেন, আমনের বীজ লাগানোর পরই সেচ শুরু হয়। এরপর একনাগাড়ে চলে। বর্ষাও তো কমে গেছে।
জগদলের মতো বরেন্দ্র এলাকার অনেক জনপদেই এখন পানির স্বল্পতার এমন চিত্র দেখা যায়। পানির অভাবে চলতি বছর বরেন্দ্র অঞ্চলের তিন জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আট উপজেলায় বোরো চাষ সীমিত করে দিয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রতিষ্ঠানটি সেচের পানি সরবরাহ করে।
নাচোল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, উপজেলায় গভীর নলকূপ ছিল ২৫০টি। এখন ৫৫টিই বন্ধ। সেচ নেই, ফলে সেচনির্ভর চাষাবাদে প্রভাব পড়ছে। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সালেহ আকরাম বলেন, উপজেলায় এবার অন্তত ৩০ শতাংশ কম বোরো উৎপাদন হবে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের মতো দেশজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। দুই বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড এক গবেষণায় উল্লেখ করেছিল, দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নামছে ঢাকা নগর, গাজীপুর ও বরেন্দ্র অঞ্চলে। পানি কমলেও যে হারে পানি উঠছে, তার পুনর্ভরণ বা রিচার্জ হচ্ছে না।
পুনর্ভরণ দরকার। তবে মাটিতে পানি ইনজেক্ট করাটা আমি বন্ধ করতে চাই। কে, কী ধরনের পানি দেবে, তাতে দূষণ সৃষ্টি হতে পারে। পানির উত্তোলনে লাগাম টানতে চাই। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পানিসম্পদ উপদেষ্টারাজধানী বা দেশের অন্যত্র পুনর্ভরণে পাইলট বা সাময়িকভাবে প্রকল্প নেওয়া হলেও সেগুলো তেমন কার্যকর নয়। সবচেয়ে বেশি ভূগর্ভস্থ পানি সংগ্রহ করা ঢাকা ওয়াসার পুনর্ভরণ প্রকল্পের কোনো গতি নেই।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পুনর্ভরণ কমতে থাকলে উত্তরের জনপদের দশা দেশের অন্যত্রও হতে পারে।
ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে এই শঙ্কার মধ্যে আজ ২২ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। চলতি বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘হিমবাহের সুরক্ষা’।
ফাঁকা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ স্তর২০২২ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৬৫টি অগভীর ভূগর্ভস্থ পানির পর্যবেক্ষণ কূপের ৪০ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণায় শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ও অবস্থান বিশ্লেষণে দেখা যায়, পানির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে দেশের দুই–তৃতীয়াংশ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে নেমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে এক থেকে তিন মিটার পর্যন্ত পানি স্তর নেমে যাচ্ছে।
এরপর ‘দ্য গ্যাঞ্জেস ওয়াটার মেশিন কোয়ান্টিফায়ের ফ্রম পিজামেট্রে ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় পানির পুনর্ভরণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কূপের পানির স্তর নামছে। পুনর্ভরণ প্রায় হচ্ছে না। ১৯৭০ থেকে ২০২০ সাল—এ সময়ের পানির স্তর ও পুনর্ভরণ চিত্র উঠে আসে গবেষণায়।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পানিস্তর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৮০–এর দশকে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নামলেও বর্ষায় পুনর্ভরণ হতো ১৬ থেকে ১৮ মিটার। কিন্তু ২০১০ সালের পর পুনর্ভরণ ১৬ মিটারের বেশি হচ্ছে না।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ৬ মিটার পুনর্ভরণ হতো। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে পুনর্ভরণ ৩ মিটারে নেমে গেছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী দোহারে বর্ষার সময় পুনর্ভরণ ৩ মিটারে নেমে গেছে। এটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৪ মিটার ছিল।
ঢাকা কিংবা বরেন্দ্র অঞ্চলের বাইরের পরিস্থিতিও নাজুক। যেমন শেরপুর ও যশোরে পুনর্ভরণ এক দশক আগের চেয়ে যথাক্রমে ২২ থেকে ২০ মিটারে এবং ২০ থেকে ১৮ মিটারে নেমেছে।
গবেষকদের একজন আনোয়ার জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশের প্রায় কোথাও পুনর্ভরণের সুষম চিত্র দেখা যাচ্ছে না। ভূগর্ভ থেকে পানি কেবল উঠছে, আর মাটির তল ফাঁকা হচ্ছে। পানির কৃত্রিম পুনর্ভরণ এখন দ্রুত করতে হবে।
পানির অভাবে চলতি বছর বরেন্দ্র অঞ্চলের তিন জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আট উপজেলায় বোরো চাষ সীমিত করে দিয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রতিষ্ঠানটি সেচের পানি সরবরাহ করে। কীভাবে পুনর্ভরণভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে ভূগর্ভ পুনর্ভরণে গবেষণা করেছেন প্রকৌশলী সৈয়দ আজিজুল হক। তিনি বলছিলেন, বৃষ্টির পানি পুনর্ভরণের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পদ্ধতি হচ্ছে ইনজেকশন। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের যেসব পিট আছে, সেগুলোকে পানি পুনর্ভরণের কাজে লাগানো যায়। পিটের নিচে কংক্রিটের স্ল্যাব দেওয়া যাবে না, এক ফুট খোয়া দিতে হবে।
কম খরচের পদ্ধতি হলো পরিত্যক্ত টিউবওয়েলকে পানি পুনর্ভরণের কাজে লাগানো। এ ছাড়া বাসাবাড়ির চতুর্দিকের দেয়ালের পাশে পরিখা করে সেগুলোতে বালু ভরে রাখা।
এখানে পুনর্ভরণের একটা উপায় পাইপ। পাশাপাশি পুকুর ও খাঁড়ি খনন করে সেই পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। এভাবে মোটামুটি ৫০ শতাংশ ঘাটতি পূরণ করা যায়। এ জন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দরকার। রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান কৃত্রিম পুনর্ভরণের অবস্থাভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমার লক্ষণ নেই। এ অবস্থায় কৃত্রিম পুনর্ভরণ যে দরকার, তা মানছেন পানিবিশেষজ্ঞসহ পরিবেশবাদীরা। পাইলট ভিত্তিতে কিছু চেষ্টাও হয়েছে।
ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে সবচেয়ে এগিয়ে ঢাকা ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট সরবরাহের ৬৭ শতাংশ পানি আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। দুই দশক আগে প্রতিষ্ঠানটি নগরের কিছু এলাকায় গর্ত করে পানি পুনর্ভরণের চেষ্টা করেছিল। এখন সেগুলোর অবস্থা কেমন, তা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারাও জানেন না।
ঢাকা ওয়াসার উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম শহীদউদ্দিন বলেন, যে ২০–২৫টি স্থানে পানি রিচার্জের ব্যবস্থা ছিল, সেগুলো সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য নেই। এগুলো পাইলট প্রকল্প ছিল। তবে বড় আকারে পুনর্ভরণের কাজ শুরুর চেষ্টা হচ্ছে।
ঢাকার পুনর্ভরণের প্রক্রিয়া বরেন্দ্র অঞ্চলে পুরোপুরি প্রযোজ্য হবে না—এমন মন্তব্য করে রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান বলেন, এখানে পুনর্ভরণের একটা উপায় পাইপ। পাশাপাশি পুকুর ও খাঁড়ি খনন করে সেই পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। এভাবে মোটামুটি ৫০ শতাংশ ঘাটতি পূরণ করা যায়। এ জন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দরকার।
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি পুনর্ভরণে কাজ করছে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। প্রকল্পটির কর্মকর্তা মো.
বিগত সরকারের সময় ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’–এ ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরণকাজ এগিয়ে নিতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি এবং একটি কৌশলপত্র তৈরি করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার এই পরিকল্পনা এগিয়ে নেবে কি না, জানতে চাইলে পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘পুনর্ভরণ দরকার। তবে মাটিতে পানি ইনজেক্ট করাটা আমি বন্ধ করতে চাই। কে, কী ধরনের পানি দেবে, তাতে দূষণ সৃষ্টি হতে পারে। পানির উত্তোলনে লাগাম টানতে চাই।’
রিজওয়ানা হাসান যে শঙ্কার কথা বলেছেন, তা রোধে ‘দূষণমুক্ত পানির নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম পুনর্ভরণ’ নিশ্চিত করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য একক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তাদের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার কথাও আছে পরিকল্পনায়; কিন্তু বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেই।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প ব যবস থ ব যবহ র উপজ ল য় সবচ য় অবস থ দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’