জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে ভোট দেওয়ার বয়স ১৬ বছর, আর নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ২৩ বছর করার প্রস্তাব দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর রূপায়ণ সেন্টারে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।

তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (রোববার) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার সুপারিশমালা জমা দেওয়া হবে। সেখানে ভোট দেওয়ার বয়স ১৬ বছর এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৩ বছর করার প্রস্তাব করবে এনসিপি।’

গণঅভ্যুত্থানের পর সংবিধান আর কার্যকর নেই উল্লেখ করে নতুন সংবিধান রচনা করার দাবি জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির এই নেতা।

সারোয়ার বলেন, ‘এনসিপি মনে করে, আগামী নির্বাচন গণপরিষদ হওয়া উচিত। সংবিধান সংস্কার কাজ শেষ করে একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই গণপরিষদই আইন সভায় রূপান্তরিত হবে।’

আওয়ামী লীগকে দেশবিরোধী শক্তি উল্লেখ করে তুষার বলেন, দলটি রাজনীতিতে ফিরলে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।

এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের সংস্কারবিষয়ক সমন্বয় কমিটি গঠন করে এনসিপি। কমিটিতে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সারোয়ার তুষারকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মনিরা শারমিন, জাবেদ রাসিন, সালেহ উদ্দিন ও আরমান হোসাইন।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর। আর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৫ বছর, যা এবার কমিয়ে আনার প্রস্তাব রাখতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট র প রস ত ব র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান

সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই ধাপের ২৩তম দিনের মতো আলোচনা হয়। এর মধ্য দিয়ে মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আগেই যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়েছিল, সেগুলো বাদ দিয়ে এই ধাপের আলোচনার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয় চিহ্নিত করা হয়। এই ১৯টি বিষয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) রয়েছে।

এই ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসংক্রান্ত বিধান, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংবিধান সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, বিশেষত উচ্চকক্ষ গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও এখতিয়ার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের আলোচনায় অর্থবিল ও আস্থা ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ এবং সুপ্রিম কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে বিএনপি উচ্চ আদালতের সঙ্গে আলোচনা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার প্রশ্নে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।

সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংযোজন না করে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার বিষয়ে মত দিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, এনডিএম, আম জনতার দল ও বিএনপি।

সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দল ও জোট একমত হলেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং আম জনতার দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতির বিষয়ে সব দল একমত হলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভিন্নমত পোষণ করেছে।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ ও জেএসডি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা থেকে ওয়াকআউট করেন।

সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এসেছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, বেশির ভাগ দল জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ধাপে ধাপে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে একমত হলেও কিছু দল সরাসরি নির্বাচন এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে মত দেয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনা শেষ করার লক্ষ্য ছিল, আমরা তা সফলভাবে করতে পেরেছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব।’

আলোচনার বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে এবং কমিশনকে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনার অনুরোধ জানিয়েছে দলগুলো। কমিশন মনে করে, বাস্তবায়নের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে
  • ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
  • ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘোষণাপত্রে নিশ্চিত হবে জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি’