গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা সরকার পূরণ করতে পারছে না
Published: 22nd, March 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ। গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন। এক সময়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুন সোহাগ।
সমকাল: এই সময়ের ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?
উমামা ফাতেমা: সময়গুলো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখন মনে হয় চব্বিশ ঘণ্টাও খুব কম সময়। জুন-জুলাই মাস থেকেই এমন একটা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দিন নেই, রাত নেই। প্রচুর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। একেকজনের একেক ধরনের সমস্যা। তবুও আমরা সৌভাগ্যবান। আল্লাহ হয়তো আমাদের নিজে থেকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। সেটি যেন ঠিকমতো পালন করতে পারি, তবু ভয় কাজ করে।
সমকাল: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান বাংলাদেশ কেমন আছে?
উমামা ফাতেমা: বাংলাদেশ বর্তমানে মিশ্র পরিস্থিতির মধ্যে আছে। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়েছে, একটা ভয় কাজ করে। নাগরিক নিরাপত্তা অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে একটা পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আছে। যেমন সরকার এবার রোজায় জিনিসপত্রের দামটা একটু কম রাখতে সক্ষম হয়েছে। রিজার্ভের পরিমাণও বেড়েছে। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ভালো করছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রত্যাশা করেছিলাম দেশের সর্বক্ষেত্রে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করবে (নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হবে)। প্রতিটি ক্ষেত্রে জাস্টিস (ন্যায়বিচার), অ্যাকাউন্টেবিলিটি (জবাবদিহি) কাজ করবে। জনগণ যাতে আদালতের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে না পারে। প্রশাসনের মধ্যে যে প্রতিক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাব, সেটি এখনও আমরা দেখছি, সরকারের মধ্যে আছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আমাদের একটি বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল, সরকার তা পূরণ করতে পারেনি।
সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকার আরও কী করতে পারত?
উমামা ফাতেমা: একদম শুরু থেকেই আমার অভিমত ছিল, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। জুলাই-আগস্টে যেসব থানা থেকে জনগণের ওপর গুলি করা হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তাদের ছাঁটাই করা বা গ্রেপ্তার করা যেত। যারা গুলি চালায়নি বা সহযোগী হিসেবেও ছিল না সেই থানাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের অপারেশনে নিয়ে আসা যেত। একদম শুরুর দিকে সরকার যদি পুলিশকে ফাংশনাল করার চেষ্টা করত, তাহলে হয়তো এখানে পুলিশের যে একটা ‘ওভারল ইনঅ্যাক্টিভিটি’(সামগ্রিক নিষ্ক্রিয়তা) দেখতে পাচ্ছি, সেটি কিছুটা কমানো যেত। তবে এটি সরকার পরবর্তী সময়ে কিছুটা উপলব্ধি করেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে তারা আবার কিছুটা তৎপর হয়। সত্যি কথা বলতে কী, যদি একদম প্রথম দিকে একটা পরিকল্পনা থাকত তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও বেশি উন্নত থাকত। সরকারের পরিকল্পনাহীনতা আছে, আওয়ামী লীগের বিচার তারা কবে নাগাদ করবে? তারপর আমাদের যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনগুলো হলো, কেন এই ১১টা সংস্কার কমিশন হলো? বাকি খাতগুলোর কী অবস্থা? বাংলাদেশের সব থেকে বড় সেক্টর শিক্ষা, সেই শিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্কার কমিশন গঠন হয়নি। সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিচার এবং সংস্কারগুলোর সুরাহা না করে নির্বাচন হলে খুব বেশি লাভ হবে, তা জনগণের কেউই মনে করে না। তবে সরকারের উপযুক্ত রোডম্যাপ থাকা দরকার।
সমকাল: এখন তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর কী করণীয়?
উমামা ফাতেমা: আপনি যদি গত ১৫ বছরের লড়াইগুলো দেখেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াইয়ের ধরনটা কী ছিল? এখন নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধান সভা বা গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। অনেক ধরনের লড়াই এখানে তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অভ্যুত্থান-পরবর্তী যে যেভাবে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে সে তার আকাঙ্ক্ষাগুলো সামনে এনেছে। অভ্যুত্থান নির্বাচনের জন্যই হয়েছে, কেউ কেউ এ কথা বলার কারণে দেশের মানুষের ভেতরে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। ভারতের মতো একটি দেশ যেভাবে বাংলাদেশকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে, তাদের সঙ্গে ফাইট করতে হলে আমাদের ইন্টারনাল ঐক্য থাকাটা জরুরি। সংস্কারের এবং বিচার প্রক্রিয়ার একটা সুনির্দিষ্ট অগ্রগতির মাধ্যমে নির্বাচনের প্রসেসের মধ্যে বাংলাদেশকে ঢুকতে হবে। তা ছাড়া এখানে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে।
সমকাল: ছাত্র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টিতে’ কেন গেলেন না?
উমামা ফাতেমা: আমি মনে করি এখনও জুলাই অভ্যুত্থানের অনেক কাজ বাকি আছে। নতুন দলে যারা গিয়েছেন তাদের জন্য সেখানে যাওয়াটাও জরুরি ছিল। বাংলাদেশে রাজনীতিতে বড় ধরনের ‘ভ্যাকুয়াম ক্রিয়েট’ হয়েছে, সেটা পূরণ করার দরকার আছে বলেই তারা পলিটিক্যাল পার্টি তৈরি করেছেন। আন্দোলনে আহত-নিহতদের পরিবারগুলো যে এখনও একটা মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আমাদের তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। আমাদের যত রাজনৈতিক দল আছে, যত ছাত্র সংগঠন আছে সবার মধ্যে জুলাইয়ের স্পৃহাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করতে হবে, তাই মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে থাকাটা আমার জন্য জরুরি।
সমকাল: সেটিকে কতটা সহজ মনে করেন?
উমামা ফাতেমা: প্রতিমুহূর্তে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। সবসময় আমি যেটা ভাবি, আমি যেভাবে চিন্তাটা করছি, আরেকজনের সঙ্গে আমার চিন্তা নাও মিলতে পারে। আমি কাজের প্রয়োজনে জেলায় জেলায় গিয়েছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই প্ল্যাটফর্মে থাকতে চায়। কাজ করতে চায়। আমার মনে হয় সবাইকে নিয়ে ভালো কিছু করতে পারব।
সমকাল: তরুণরা এখন বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে কিনা?
উমামা ফাতেমা: তরুণদের মধ্যে আগে থেকেই অনেক ভাগ ছিল। তবে আন্দোলনে সবাই একই উদ্দেশ্যে এসেছিল। সবাই শেখ হাসিনার পতন চেয়েছিল। বিএনপিও ছিল, ইসলামী দলগুলোও ছিল। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর মতো দলও ছিল। এই যে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন এখানে একত্র হয়েছিল, তাদের সবার লক্ষ্য তো এক না। সবাই ভেবেছিল যে, শেখ হাসিনা চাইলে তাঁর ভুলগুলো শুধরে নেবেন। তবে সত্যি বলতে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল না। শেখ হাসিনা প্রতিটি জায়গাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলেছিল।
সমকাল: ১৫ বছরের আন্দোলন আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে কিনা?
উমামা ফাতেমা: বিএনপি ২০১৫ সালের পরে রাস্তায়ই নামতে পারত না। নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামতে না পেরে বিএনপি ওই সময়ে তেল-গ্যাসের দাম নিয়েও মাঠে নামে। তারপর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালে তারা ৩১ দফাতে পাবলিক ডিমান্ড একুমুলেট (জড়ো) করতে বাধ্য হয়। বিএনপি, গণসংহতি, জামায়াত বা যে দলই বলি না কেন সবাই বুঝেছিল জনগণের চাওয়াকে প্রাধান্য না দিলে কখনও শেখ হাসিনার পতন ঘটানো সম্ভব নয়। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ এসেছিল ঢাকাতে। এরপর কোথায় বিএনপি, জনগণ কি তাদের কথায় নেমেছে? যেদিন আবু সাঈদ বুক পেতে রাস্তায় মারা গেল, এর পর থেকেই জনগণ রাস্তায় নেমেছে।
সমকাল: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কতটুকু?
উমামা ফাতেমা: আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা চালিয়েছে, দেশের সিভিলিয়ানদের ওপর তারা যে মরণঘাতী অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে, মানুষ মেরে ফেলেছে, শিশুদের হত্যা করেছে, ওই রাজনৈতিক দল কোনোভাবেই রাজনীতিতে ফেরার অধিকার রাখে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মতো যথেষ্ট পরিমাণে গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাধা পাচ্ছি। তবে নিষিদ্ধের কার্যক্রমে বাংলাদেশের জনগণের সম্মতি রয়েছে।
সমকাল: দেশে হঠাৎ নারী নিপীড়ন বেড়ে গেল কেন?
উমামা ফাতেমা: নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নারীরা বর্তমানে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে ভয় পান, অন্ধকারে যাওয়া-আসা করতে ভয় পান। অনেক জায়গায় ছেলেরা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাত ১১-১২টার পরে বের হয়, সেই প্রবণতাটা এখন কমেছে। রাত ১০টার পরে কোনো পরিবারও বাইরে যেতে ভয় পায়। জনগণ সরকারের কাছে চায় আশ্বাস। জনগণ পুলিশকে জানালে তারা বলছে, আমাদের লোক নেই, অন্য কাউকে বলেন, সেনাবাহিনীকে বলেন। সবার কাছে তো আর সেনাবাহিনীর যোগাযোগ থাকে না।
সমকাল: জুলাই-আগস্টেও তো নারীরা নির্ভয়ে রাস্তায় নেমেছিল!
উমামা ফাতেমা: নারীকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদের অধিকারের কথা বলতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারীরা কথা বলেছে। তারা লেখালেখি করেছে, রাস্তায় নেমেছে। নির্দ্বিধায় তারা কথা বলেছে। যে কোনো পোশাকেই তারা নেমে গেছে। তো আজকে এসে কেন তাহলে এই ভয়টা পেতে হবে?
সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।
উমামা ফাতেমা: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন সরক র র জনগণ র ক জ কর আম দ র ব এনপ ন করত ধরন র সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল