জাতির স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে
Published: 23rd, March 2025 GMT
গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে নানা বিষয়ে মতভিন্নতাও আছে। জাতির স্বার্থে, মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জুলাই আন্দোলনের মতো সবাই এক থাকলে দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটগুলো থেকে উত্তরণ সম্ভব।
গতকাল শনিবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। ‘গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ, জাতীয় স্বার্থ ও ঐক্যের পথরেখা’ শীর্ষক এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা।
আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি এরশাদ পতন আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি নব্বইয়ের একজন সংগঠক হিসেবে এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকে লড়াই করে বিজয় এনেছিলাম। সেই বিজয় ধরে রাখতে পারিনি। আজকের প্রজন্ম যেন সতর্ক থাকে, তাদের বিজয় ধরে রাখার জন্য। ৫ আগস্টের ঐক্য ধরে রাখতে হবে—এটা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা।’ তিনি বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের’ ঐক্য না থাকলে কোনো সংস্কার হবে না। ঐক্য ধরে রাখতে না পারায় নব্বইয়ের পর গণতান্ত্রিক কাঠামো ধরে রাখা যায়নি। সে জন্য হাসিনার স্বৈরাচার ফেরত এসেছে, মুজিববাদ ফেরত এসেছে।
আজকের প্রজন্ম যেন সতর্ক থাকে, তাদের বিজয় ধরে রাখার জন্য। ৫ আগস্টের ঐক্য ধরে রাখতে হবে—এটা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা। আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তী সরকারআলোচনার শুরুতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের একটি সর্বসম্মত চার্টারে যেতে হবে। না হলে আমরা গভীর সংকটে পড়ব। রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে যতটুকু গৃহীত হবে, সেটাই হবে সর্বসম্মত চার্টার।’ সংকট থেকে উত্তরণে সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে বলে মত দেন তিনি।
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে সবাই একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য লড়াই করেছে উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রকাঠামো একটি ভঙ্গুর অবস্থায় আছে, যেটি একটি ফ্যাসিস্ট কাঠামো গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানকে এভাবে রেখে নির্বাচন হলে, তা একই থেকে যাবে, আমাদের একটি আমূল এবং গুণগত পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে হবে, সে জন্য আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামন ফুয়াদ বলেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের যে ঘোষণা ছিল, তাতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা ছিল, তা হয়নি। ফলে এখানে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে, দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিনির্মাণের আলোচনা, সুযোগ এসেছে।
আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সংস্কারপ্রক্রিয়ার বিএনপির নানা উদ্যোগের বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য ও অনৈক্য থাকতেই পারে। কিন্তু যখনই জাতির প্রশ্ন আসবে, মানুষের অধিকারের প্রশ্ন আসবে, তখন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। ভিন্নমত থাকবে, এটাই তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে.
এর আগে গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের পরিচালক এম জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় ভারতের সরকার, দেশটির বিরোধী দল ও মিডিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান অবাক করার মতো।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আমাদের তরুণেরা যে সাহস দেখিয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এখানে আর কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েম করে পালিয়ে যেতে পারবে না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আম দ র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।