গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে নানা বিষয়ে মতভিন্নতাও আছে। জাতির স্বার্থে, মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জুলাই আন্দোলনের মতো সবাই এক থাকলে দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটগুলো থেকে উত্তরণ সম্ভব।

গতকাল শনিবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। ‘গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ, জাতীয় স্বার্থ ও ঐক্যের পথরেখা’ শীর্ষক এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা।

আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি এরশাদ পতন আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি নব্বইয়ের একজন সংগঠক হিসেবে এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকে লড়াই করে বিজয় এনেছিলাম। সেই বিজয় ধরে রাখতে পারিনি। আজকের প্রজন্ম যেন সতর্ক থাকে, তাদের বিজয় ধরে রাখার জন্য। ৫ আগস্টের ঐক্য ধরে রাখতে হবে—এটা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা।’ তিনি বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের’ ঐক্য না থাকলে কোনো সংস্কার হবে না। ঐক্য ধরে রাখতে না পারায় নব্বইয়ের পর গণতান্ত্রিক কাঠামো ধরে রাখা যায়নি। সে জন্য হাসিনার স্বৈরাচার ফেরত এসেছে, মুজিববাদ ফেরত এসেছে।

আজকের প্রজন্ম যেন সতর্ক থাকে, তাদের বিজয় ধরে রাখার জন্য। ৫ আগস্টের ঐক্য ধরে রাখতে হবে—এটা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা। আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তী সরকার

আলোচনার শুরুতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের একটি সর্বসম্মত চার্টারে যেতে হবে। না হলে আমরা গভীর সংকটে পড়ব। রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে যতটুকু গৃহীত হবে, সেটাই হবে সর্বসম্মত চার্টার।’ সংকট থেকে উত্তরণে সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে বলে মত দেন তিনি।

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে সবাই একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য লড়াই করেছে উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রকাঠামো একটি ভঙ্গুর অবস্থায় আছে, যেটি একটি ফ্যাসিস্ট কাঠামো গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানকে এভাবে রেখে নির্বাচন হলে, তা একই থেকে যাবে, আমাদের একটি আমূল এবং গুণগত পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে হবে, সে জন্য আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামন ফুয়াদ বলেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের যে ঘোষণা ছিল, তাতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা ছিল, তা হয়নি। ফলে এখানে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে, দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিনির্মাণের আলোচনা, সুযোগ এসেছে।

আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সংস্কারপ্রক্রিয়ার বিএনপির নানা উদ্যোগের বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য ও অনৈক্য থাকতেই পারে। কিন্তু যখনই জাতির প্রশ্ন আসবে, মানুষের অধিকারের প্রশ্ন আসবে, তখন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। ভিন্নমত থাকবে, এটাই তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে.

জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ কয়েক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, সেখানে তারা (পুলিশ বাহিনী) জানিয়েছিল, পুলিশ কারও দলের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার অস্ত্র হতে চায় না।

এর আগে গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের পরিচালক এম জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় ভারতের সরকার, দেশটির বিরোধী দল ও মিডিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান অবাক করার মতো।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আমাদের তরুণেরা যে সাহস দেখিয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এখানে আর কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েম করে পালিয়ে যেতে পারবে না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আম দ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার’ ও ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ইন ফিজিক্স’ প্রদানের জন্য দেশের পদার্থবিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

কোন সালের জন্য পুরস্কার —

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের গবেষণা কাজের জন্য এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

পুরস্কার মল্যমান কত —

১. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য পুরস্কার পাওয়া গবেষককে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।

২. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একজন বিজ্ঞানী বা গবেষককে নগদ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

আবেদনের শেষ তারিখ —

আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) বরাবর আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে—

আবেদনকারীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিন কপি আবেদনপত্র, তিন প্রস্থ জীবনবৃত্তান্ত, তিন প্রস্থ গবেষণাকর্ম এবং তিন কপি ছবি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকাশিত গবেষণাকর্ম পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে।

২. যৌথ গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে গবেষণা পুরস্কারের অর্থ সমান হারে বণ্টন করা হবে। এ ক্ষেত্রে সহযোগী গবেষক বা গবেষকের অনুমতি নিয়ে আবেদন করতে হবে।

৩. আবেদনকারী যে বছরের জন্য আবেদন করবেন পাবলিকেশন ওই বছরের হতে হবে।

৪. একই পাবলিকেশন দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য আবেদন করা যাবে না।

৫. কোন কারণে একজন প্রার্থী পুরস্কারের জন্য আবেদন করলে প্রার্থিতার স্বল্পতা বিবেচনা করে তাঁর আবেদন বিবেচনা করা হবে।

৬. পরীক্ষক তাঁর গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য সুপারিশ না করলে তাঁকে পুরস্কারের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে না।

৭. পদার্থবিজ্ঞানে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার একবার প্রাপ্ত গবেষকও পরবর্তী সময়ে আবেদন করতে পারবেন।

৮. নতুন গবেষককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

৯. যদি মানসম্মত গবেষণা কাজ না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে পূর্বের পুরস্কার পাওয়া গবেষকের নতুন গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য পরীক্ষকের সুপারিশের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।

# আবেদন জমা দেওয়ার ঠিকানা: প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত
  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন
  • নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ১০০ কোটির সম্পদ, স্বামীর প্রতারণা, ৪৭ বছর বয়সেই মারা যান এই নায়িকা
  • তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
  • শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
  • সনদ বাস্তবায়নে আবারো কমিশনের সভা আয়োজনের দাবি