ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার প্রস্তাব করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২৩ করারও প্রস্তাব দেবে নতুন দলটি। দলটির ভাষ্য, শেখ হাসিনার পতন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ঘটিয়েছে জেন-জি। তাদের এত বড় অংশীদারিত্বের পরও শুধু বয়সের কারণে মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে না পারাটা হবে অযৌক্তিক।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলামটরে এনসিপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা এ অবস্থান তুলে ধরেন। আজ রোববার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দেবে দলটি। 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারে ১১টি কমিশন গঠন করেন। ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনে কীভাবে কতটুকু সংস্কার হবে, তার সুপারিশ রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন ৬ মার্চ সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬ সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৩৭টি রাজনৈতিক দলকে ‘স্প্রেডশিট’ পাঠায়।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন চায় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। এনসিপি মনে করে, এটা ২৩ বছর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার বয়স ১৬ বছর হতে পারে। লাতিন আমেরিকা, অস্ট্রিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ১৬ বছর বয়সে ভোট দেওয়ার নজির রয়েছে।

সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে– এ-সংক্রান্ত বিকল্প দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সারোয়ার তুষার বলেন, যেসব সংশোধনীর ক্ষেত্রে সংবিধানের সম্পর্ক নেই, সেগুলো নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ কিংবা প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে করা যেতে পারে। এনসিপি শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক সংবিধান বা সংবিধান পুনর্লেখন চায়। এ জন্য দলটি চাইছে গণপরিষদ নির্বাচন।

সংস্কার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে শহীদ পরিবার এবং আহতদের আকাঙ্ক্ষা জানতে চেয়েছেন বলে জানান সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, একজন শহীদের মা বলেছেন– পুলিশ যেন কোনো আন্দোলনে গুলি চালাতে না পারে। এ মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করবে এনসিপি। 

১৬৬ সুপারিশের বিষয়ে এনসিপি বলছে, কোনো ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি, কোনো ক্ষেত্রে আংশিক, কিছু ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারিনি। আবার কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি মন্তব্য প্রয়োজন মনে হয়েছে। তা আমরা বিস্তারিত লিখিতভাবে জমা দেব।

সারোয়ার তুষার বলেন, ১৬৬ সুপারিশের মধ্যে ১১১টি সংলাপ ছাড়াই বাস্তবায়ন সম্ভব বলে কমিশন মনে করছে। কীসের ভিত্তিতে আলোচনা ছাড়া ১১১টি বাছাই করলেন তারা। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার এবং পুলিশ সংস্কার প্রস্তাব কেন  স্প্রেডশিটে নেই– তা জানতে চাইব।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য মনিরা শারমিন, জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত ও সংগঠক আরমান হোসাইন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প র প রস ত ব এনস প র র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’

‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে
  • ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
  • ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘোষণাপত্রে নিশ্চিত হবে জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি’