এ বছর জাতীয়ভাবে নববর্ষ পালন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে
Published: 23rd, March 2025 GMT
এ বছরের বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসবের মধ্য দিয়ে। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকার জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি সার্বজনীন অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। আজ রোববার দুপুরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আগামী ১৩ এপ্রিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চৈত্র সংক্রান্তি কনসার্ট আয়োজন করা হয়েছে। এই কনসার্টে মাইলস্, ওয়ারফেজ, দলছুট, এভোয়েড রাফা, ভাইকিংস্ ও স্টোন ফ্রি ব্যান্ড দল গান পরিবেশন করবে।
এবারের বাংলা নববর্ষ উদযাপনে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আগে নির্ধারণ করা অনুদানের অর্থ দ্বিগুণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এ বছরই প্রথম সরকার প্রতিটি জেলায় এক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে, যা আগে ছিল ৫০ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ৪৯৫টি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা আগে ছিল ৩০ হাজার টাকা।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এবার বাংলা নববর্ষ পালনে শুধু রাজধানীকে কেন্দ্র করে না সারা দেশের সব জেলায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপস্থিতি শুধু অংশগ্রহণ নয়, দৃশ্যমানভাবে যাতে উপস্থিতি স্পষ্ট হয় সেভাবে সাজানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুরের ধারার হাজার কন্ঠের গান এবার হবে উন্মুক্ত চত্বরে এবং সেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে আয়োজন হবে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, পহেলা বৈশাখের আগের দিন চৈত্রসংক্রান্তিতে বিভিন্ন ব্যান্ড দলের পরিবেশনার পাশাপাশি বাউল–ফকিরদের অংশগ্রহণেও হবে বিশেষ পরিবেশনা। পহেলা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পহেলা বৈশাখ ও জুলাই বিপ্লব নিয়ে প্রদর্শিত হবে ড্রোন শো। এটি হবে চীন সরকারের সহেযাগিতায়।
উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, এবারের বর্ষবরণের আয়োজনের মোট বরাদ্দ এখনই নির্ধারণ করে বলা সম্ভব না। তবে পরে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
এবার রাজধানীতে নববর্ষের শোভাযাত্রার সময় ও স্থান সম্পর্কে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামীকাল এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংস্কৃতি উপদেষ্টার বৈঠকের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে; বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকায়। হাওরের পুবালি বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটেন কৃষক। অন্যদিকে চলে মাড়াই। কিষানিরা মনের আনন্দে মাড়াই করা ধান শুকান। বিকেলের শান্ত রোদে শুকনো ধান মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ধান কাটা উৎসবে শুধু কিষান-কিষানি নন, সব বয়সী মানুষই যোগ দেন। হাওরে এটি এক অনন্য উৎসব। চলে বৈশাখজুড়ে। এ উৎসবের কাছে কাঠফাটা রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যেন তুচ্ছ। ধানের সবুজ শীষের রং যখন লালচে হতে শুরু করে, তখন কৃষকের মনের রং বদলায়। চোখ-মুখ খুশিতে ভরে ওঠে। লোকমুখে প্রচলিত– বছরের প্রথম দিনে ঘরে ফসল তুললে সারাবছর অভাব থাকে না। তাই তো হাওরে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান তলিয়ে যায়। যাতে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
আনন্দ-বেদনার এ বৈশাখে প্রকৃতি নতুন বিন্যাসে সাজে। বসন্তে প্রকৃতিতে যে রং লাগে, তা পূর্ণতা পায় বৈশাখে। অসীম আকাশে নানা বর্ণের মেঘের আনাগোনা আমাদের মনে সঞ্চারিত করে সঞ্জীবনী মন্ত্র। চোখে প্রশান্তি এনে দেয় সর্ববিস্তৃত প্রকৃতি। এ সময় চারদিকে আগুন ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, জারুল, বাগানবিলাসসহ প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের। কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে উৎসব আমেজে। বৈচিত্র্যময় সমারোহে বসে বৈশাখী মেলা। এতে লোকগান, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি আকর্ষণ করে সবাইকে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রুদ্রমূর্তির বৈশাখে প্রকৃতিতে থাকে ভিন্ন চেহারা। কালবৈশাখী আসে তীব্রবেগে। উড়িয়ে নিয়ে যায় অভাগীর জীর্ণ কুটির। উপকূলে বিপদ হয়ে আসে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গ্রীষ্মের তাপদাহে তটস্থ হয় মানুষ। এ সময় আবহমান গ্রামবাংলার ছোট নদী, খালবিল, ডোবা শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পড়েন বিপাকে। আবার এ সময়ে প্রকৃতি সাজে নতুন করে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি পেতে আশ্রয় নেয় সবুজ প্রকৃতির শীতল ছায়ায়। একদিকে বৈশাখ খরতাপ ছড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রশান্তির শীতল ছোঁয়া দেয় পরম আনন্দ। বৈশাখ আসে নতুন করে সব গড়তে। শীর্ণ-জীর্ণতায় সবুজ সতেজ করে তুলতে। ‘নূতনের কেতন উড়ে’ কালবৈশাখীতে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে শুরু হয় নবজীবনের হিসাবনিকাশ। স্বপ্নমুখর বৈশাখের রং তাই একটু বেশিই উজ্জ্বল। প্রকৃতি সজীব সতেজ আর মানুষেরা প্রাণচঞ্চল।
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়