বাংলাদেশে শেখ হাসিনাবিরোধী জনরোষ সম্পর্কে ভারত আগে থেকেই অবহিত ছিল বলে দাবি করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, সবকিছু জানার পরও দিল্লির কিছুই করার ছিল না। কারণ শেখ হাসিনার ওপর ভারতের যথেষ্ট প্রভাব ছিল না; তাঁকে শুধুই পরামর্শ দিতে পারত ভারত। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে সহিংসভাবে উৎখাত করা হয়।

গত শনিবার ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে জয়শঙ্কর এসব তথ্য দিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে দেশটির ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা। বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান বিষয়ে বিশেষ আলোচনা হয়।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুসন্ধান দলের প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত বছর জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঠেকাতে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে মাঠে থাকা সরকারি বাহিনীগুলো। বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে মারণান্ত্র দিয়ে গুলি চালানো, গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনকারীদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সরাসরি নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদীয় কমিটিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান– অন্যান্য শীর্ষ অংশীদারের মতো বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতও অবগত ছিল। এ সময় তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্য উদ্ধৃত করেন। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো নিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে। এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে ‘অন্যান্য দেশগুলোর’ ভূমিকা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে চীন ভারতের প্রতিপক্ষ নয় বরং প্রতিযোগী উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ভলকার তুর্ক বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছিল। যদি তারা দমন-পীড়নে জড়িত হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হবে।

বৈঠকে ভারতের সংসদ সদস্যরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির বিষয় উত্থাপন করেন। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় আগামী দশকে ভারত কী করতে চায়, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন এমপিরা।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেও, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার কারণে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে পাঠানোর মাধ্যমে দিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। তবে ব্যাংককে আসন্ন বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৈঠকে সার্কের পুনরুজ্জীবন নিয়ে সংসদীয় কমিটিকে ব্রিফ করেন এস জয়শঙ্কর। আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের কারণে সার্ক বর্তমানে থমকে রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আবারও সচল হওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। সার্কের সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন ২০১৪ সালে নেপালে হয়েছিল। ২০১৬ সালে পাকিস্তানে শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও, উরিতে সামরিক স্থাপনায় জঙ্গি হামলার জের ধরে ইসলামাবাদ সম্মেলনে যেতে অস্বীকার করে ভারত। এর পর আর সার্কের শীর্ষ সম্মেলন হয়নি। ভারত সার্কের পরিবর্তে বিমসটেক নিয়ে বেশি তৎপর।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ষ ট রমন ত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে

ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মাত্র ১২৭ রানে অলআউট হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আরও কম, ১২৫ রানে। কিন্তু রোববার (০২ নভেম্বর) তারা চোখে চোখ রেখে লড়াই করল আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে আফগানদের করা ২১০ রানের জবাবে জিম্বাবুয়ে ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২০১ রান করে হার মানে মাত্র ৯ রানে। দুই ইনিংসে রান হয়েছে মোট ৪১১টি। যা আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ।

আরো পড়ুন:

কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস

ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত

স্বাগতিকরা থেমে থেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও ব্রিয়ান বেনেট, সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্ল ও তাশিনগা মুসেকিওয়ার ব্যাটে লড়াই করে শেষ বল পর্যন্ত। বেনেট ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৪৭ রান। অধিনায়ক রাজা ৭টি চার ও ২ ছক্কায় করেন ৫১ রান। বার্ল ১৫ বলে ৫ ছক্কায় খেলেন ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস। আর মুসেকিওয়া ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ২৮ রান।

বল হাতে আফগানিস্তানের আব্দুল্লাহ আহমদজাই ৪ ওভারে ৪২ রানে ৩টি উইকেট নেন। ফজল হক ফারুকি ৪ ওভারে ২৯ রানে ২টি ও ফরিদ আহমদ ৩ ওভারে ৩৮ রানে নেন ২টি উইকেট।

তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ১৫.৩ ওভারে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন। এই রানে গুরবাজ আউট হন ৪৮ বলে ৮টি চার ও ৫ ছক্কায় ৯২ রানের ইনিংস খেলে। মাত্র ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। ১৬৩ রানের মাথায় ইব্রাহিম আউট হন ৭টি চারে ৬০ রান করে। এরপর সেদিকুল্লাহ অটল ১৫ বলে ২টি চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংস খেলে দলীয় সংগ্রহকে ২১০ পর্যন্ত নিয়ে যান।

বল হাতে জিম্বাবুয়ের ব্রাড ইভান্স ৪ ওভারে ৩৩ রানে ২টি উইকেট নেন। অপর উইকেটটি নেন রিচার্ড এনগ্রাভা।

৯২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন গুরবাজ। আর মোট ১৬৯ রান করে সিরিজ সেরা হন ইব্রাহিম জাদরান।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ