শেখ হাসিনাকে সহিংসভাবে উৎখাত করা হয়
Published: 24th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে শেখ হাসিনাবিরোধী জনরোষ সম্পর্কে ভারত আগে থেকেই অবহিত ছিল বলে দাবি করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, সবকিছু জানার পরও দিল্লির কিছুই করার ছিল না। কারণ শেখ হাসিনার ওপর ভারতের যথেষ্ট প্রভাব ছিল না; তাঁকে শুধুই পরামর্শ দিতে পারত ভারত। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে সহিংসভাবে উৎখাত করা হয়।
গত শনিবার ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে জয়শঙ্কর এসব তথ্য দিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে দেশটির ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা। বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান বিষয়ে বিশেষ আলোচনা হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুসন্ধান দলের প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত বছর জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঠেকাতে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে মাঠে থাকা সরকারি বাহিনীগুলো। বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে মারণান্ত্র দিয়ে গুলি চালানো, গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনকারীদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সরাসরি নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদীয় কমিটিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান– অন্যান্য শীর্ষ অংশীদারের মতো বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতও অবগত ছিল। এ সময় তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্য উদ্ধৃত করেন। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো নিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে। এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে ‘অন্যান্য দেশগুলোর’ ভূমিকা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে চীন ভারতের প্রতিপক্ষ নয় বরং প্রতিযোগী উল্লেখ করেন।
সম্প্রতি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ভলকার তুর্ক বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছিল। যদি তারা দমন-পীড়নে জড়িত হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হবে।
বৈঠকে ভারতের সংসদ সদস্যরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির বিষয় উত্থাপন করেন। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় আগামী দশকে ভারত কী করতে চায়, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন এমপিরা।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেও, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার কারণে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে পাঠানোর মাধ্যমে দিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। তবে ব্যাংককে আসন্ন বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ড.
বৈঠকে সার্কের পুনরুজ্জীবন নিয়ে সংসদীয় কমিটিকে ব্রিফ করেন এস জয়শঙ্কর। আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের কারণে সার্ক বর্তমানে থমকে রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আবারও সচল হওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। সার্কের সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন ২০১৪ সালে নেপালে হয়েছিল। ২০১৬ সালে পাকিস্তানে শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও, উরিতে সামরিক স্থাপনায় জঙ্গি হামলার জের ধরে ইসলামাবাদ সম্মেলনে যেতে অস্বীকার করে ভারত। এর পর আর সার্কের শীর্ষ সম্মেলন হয়নি। ভারত সার্কের পরিবর্তে বিমসটেক নিয়ে বেশি তৎপর।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ষ ট রমন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২২ এপ্রিল থেকে ১৭ জুনের মধ্যে ট্রাম্প–মোদির কোনো কথা হয়নি: জয়শঙ্কর
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, তিনিই ভারত–পাকিস্তানের যুদ্ধ থামিয়েছেন। বাণিজ্য চুক্তির কথা বলে দুই দেশকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ প্রসঙ্গে বলেন, ২২ এপ্রিল পেহেলগামের হামলার পর থেকে ১৭ জুনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোনো ফোনালাপ হয়নি।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের বদলায় ভারতের অপারেশন সিঁদুর অভিযান চার দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্রমাগত বলে চলেছেন, তিনিই যুদ্ধবিরতিতে দুই দেশকে রাজি করিয়েছেন। দুই দেশকে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য করতে গেলে যুদ্ধ থামাতে হবে। এই মধ্যস্থতা নিয়ে ভারতে প্রশ্ন উঠেই চলেছে; কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্তত ২৪ বার এই দাবি করেছেন। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী একবারও বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট অসত্য বলছেন। ভারতের বক্তব্য, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাকিস্তানের কাছ থেকে এসেছিল। ভারত তা গ্রহণ করেছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় লোকসভায় অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় ভাষণ দেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এই বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ২২ এপ্রিল পেহেলগামকাণ্ডের পর সহানুভূতি জানাতে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফোন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর পর তিনি ফোন করেন ১৭ জুন। কেন মোদির সঙ্গে কানাডায় তাঁর দেখা হচ্ছে না, তা ব্যাখ্যা করতে। এই দুই তারিখ, অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ও ১৭ জুনের মধ্যে একবারও মোদি–ট্রাম্প ফোনালাপ হয়নি। জয়শঙ্কর আরও বলেন, যদ্ধবিরতির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার কোনো সম্পর্কও নেই।
জয়শঙ্কর বলেন, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে অপারেশন সিঁদুর এক ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ (নিউ নর্মাল) সৃষ্টি করেছে। এই নতুন স্বাভাবিকতার পাঁচটি দিক। এক, সন্ত্রাসবাদীদের আর ঢাল হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে না। দুই, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদী হামলার যোগ্য জবাব সব সময় দেওয়া হবে। চুপ করে বসে থাকার দিন শেষ। তিন, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলবে না। সন্ত্রাসের আবহে আলোচনায় বসার উদ্দেশ্য একটাই, কী করে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা হবে। চার, পরমাণু অস্ত্রের ব্ল্যাকমেলের কাছে ভারত মাথা নোয়াবে না। পাঁচ, সন্ত্রাস ও সুপ্রতিবেশীমূলক মনোভাব পাশাপাশি চলবে না। রক্ত ও পানি একসঙ্গে বইতে পারে না। এ পাঁচ বিষয়ে ভারতের মনোভাব সুস্পষ্ট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। পররাষ্ট্রনীতি সফল বলেই লস্কর–ই–তাইয়েবার ছায়া–সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে। পররাষ্ট্রনীতি সফল বলেই মাত্র তিনটি দেশ (চীন, তুরস্ক, আজারবাইজান) অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করেছে। শত্রুতা ও বিরোধিতার লাল রেখা (রেড লাইন) অতিক্রম করার শাস্তি কী, তা বোঝানোই ছিল অপারেশন সিঁদুরের উদ্দেশ্য।