২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। হামাসের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই গাজায় সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে, এবং হামাসের বহু শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছে। তবে, এই হতাহতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি, কারণ হামাস তাদের হতাহত সদস্যদের সংখ্যা প্রকাশ করতে আগ্রহী নয়।

ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের নেতাদের বিরুদ্ধে "টার্গেটেড কিলিং" বা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে আসছে, যার ফলে হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা একের পর এক নিহত হচ্ছেন। এই হামলার মধ্যে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইসমাইল বারহৌমও আহত হন। তিনি পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ইসরায়েলি বাহিনী এই হামলাকে "একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী"কে লক্ষ্যবস্তু করার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এটি তাদের রাজনৈতিক এবং সামরিক মহলকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ, যা তাদের যুদ্ধ সক্ষমতা ও আন্দোলনকে নষ্ট করতে চায়।

হামাস তাদের শীর্ষ নেতাদের হতাহতের সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে জানায়নি, তবে তারা দাবি করেছে যে, তাদের ৬,০০০ থেকে ৭,০০০ সদস্য নিহত হয়েছে, যার মধ্যে সশস্ত্র সদস্য এবং বেসামরিক ব্যক্তিরাও রয়েছে। একাধিক হামাস নেতা জানিয়েছেন, তাদের ২৫,০০০ যোদ্ধার মধ্যে বেশিরভাগ এখনও বেঁচে আছে, তবে তারা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছে।

২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি, হামাস তাদের রাজনৈতিক ব্যুরোর ১৬ জন শীর্ষ নেতার নাম প্রকাশ করেছে, যারা গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের সময় নিহত হন। এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন ইসমাইল হানিয়া, যিনি হামাসের আন্তর্জাতিক কূটনীতির মুখপাত্র ছিলেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ার, যিনি ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণের প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন, এবং সালেহ আল-আরুরি, যিনি হামাসের উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এছাড়া, হামাসের সামরিক শাখার কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের মৃত্যুও নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া শীর্ষ সামরিক নেতাদের মধ্যে মারওয়ান ইসা, আহমেদ আল-গান্ডুর এবং আইমান নফালের নামও প্রকাশিত হয়েছে।

হামাসের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিবিসি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে যে, গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণে নিহত হামাস নেতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন হামাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খালেদ মেশআল, হামাসের রাজনৈতিক আন্দোলনের সদস্য মাহমুদ জাহার এবং ফাতাহ শরিফ, যিনি লেবাননে হামাসের কমান্ডার হিসেবে কাজ করছিলেন।

গাজার পরিস্থিতি এখনো চরম সংকটাপন্ন। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতির সময় মৃত্যুর সংখ্যা যাচাই করা গেছে, এবং সেখানে নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই মহিলা ও শিশু। এই সংঘাতের কারণে গাজায় মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়ছে।

গত কয়েক মাসে গাজার বাইরে কিছু কম পরিচিত হামাস সদস্যকে ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন হামাসের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মাহমুদ আবু ওয়াতফা এবং হামাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান বাহাজাত আবু সুলতান।

সম্প্রতি আরও কিছু হামাস নেতা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- ইয়াসের হার্ব, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর আরেক সদস্য; আহমেদ আল-হাত্তা, যিনি গাজার হামাস-চালিত বিচার মন্ত্রণালয়কে তদারকি করতেন; এবং ইসমাইল আল-দআলিস, যিনি হামাসের সরকারি প্রশাসনিক কমিটির প্রধান ছিলেন — এবং এর মাধ্যমে গাজার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতেন।

এদিকে, গাজার সামরিক বিশ্লেষক হামজা আত্তার আল জাজিরাকে বলেছেন, “কেবল হামাসই জানে তাদের সশস্ত্র শাখা কাসসাম ব্রিগেডের কত সদস্য নিহত হয়েছে। আমরা বেশ কিছু পোস্ট দেখতে পাচ্ছি যেখানে আত্মীয়দের শোক প্রকাশ করা হয়েছে, যেগুলি যুদ্ধের ভাষায় লেখা, তবে হামাস এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা করেনি।”

ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতাদের উপর ব্যাপক আক্রমণ চালালেও, গাজার ভিতরে এখনও কিছু শীর্ষ নেতারা বেঁচে আছেন এবং গোপনে অবস্থান করছেন। হামাসের শীর্ষ সামরিক নেতাদের মধ্যে মুহাম্মদ শাবানা এবং মোহাম্মদ সিনওয়ারও রয়েছেন, যারা গাজায় হামাসের অপারেশনগুলো পরিচালনা করছেন।

ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর চাপ তৈরি করতে হামাসের শীর্ষ নেতারা তাদের গোপন অবস্থানে আছেন এবং প্রয়োজনে তারা ফের আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন।

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার পাশাপাশি, হামাসও তাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে, এবং গাজায় সংঘাতের ফলে সহিংসতার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলির প্রতি অঙ্গীকারের অভাব এবং দুই পক্ষের মধ্যে আস্থাহীনতা এই সংঘাতকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে তুলছে।

গাজায় বর্তমান পরিস্থিতি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অবিলম্বে মানবিক সহায়তা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র র জন ত ক সদস য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

৭৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক

বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড পরিচালন মুনাফা করলেও বছর শেষে ব্যাংকটির নিট মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি। গত বছর শেষে পূবালী ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছিল ৬৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ৮২ কোটি টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি গত বছরের জন্য লভ্যাংশও অনুমোদন করা হয় গতকালের এই সভায়। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ২০২৩ সালেও ব্যাংকটি একই হারে শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দিয়েছিল।

ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংক ঋণের সুদ থেকে ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আয় করেছে। বিনিয়োগ, কমিশন, মুদ্রা বিনিময় ও ব্রোকারেজ থেকে আয় করেছে ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তাতে সব মিলিয়ে আয় হয় ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে বেতন-ভাতাসহ নানা খাতে খরচ হয় ১ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। ফলে পরিচালন মুনাফা হয় ২ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে ৯৬১ কোটি টাকা। এরপর কর পরিশোধের পর নিট বা প্রকৃত মুনাফা হয় ৭৮০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় আমরা চাহিদার বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এই পরামর্শ দিয়েছে। খেলাপির তুলনায় বেশি সঞ্চিতি রাখার মাধ্যমে ব্যাংকটির ভিত্তি মজবুত করা হয়েছে।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংকের আমানত বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের হার কমে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন এখন ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আর কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজার ৬৭৮। সারা দেশে ৫০৮টি শাখা ও ২২৭টি উপশাখা রয়েছে ব্যাংকটির। বর্তমানে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি নেটওয়ার্ক পূবালী ব্যাংকের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০২৬ এশিয়ান গেমসেও থাকছে ক্রিকেট
  • শক্তিশালী ব্যালান্স শিট প্রবৃদ্ধিসহ ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য
  • ২০২৪ সালে রেকর্ড হারে বেড়েছে বিশ্বের সামরিক ব্যয়: সিপ্রির প্রতিবেদন
  • ২০২৬ এশিয়ান গেমসেও থাকছে ক্রিকেট
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের পদাবনতি, দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
  • ৭৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক
  • দুই বছর ধরে ঝুলছে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার তদন্ত
  • নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জবি শাখার ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
  • সড়কের কাজ ফেলে রেখে উধাও ঠিকাদার, দুর্ভোগে অর্ধলাখ বাসিন্দা
  • তালেবান সরকার কেন ভারতের দিকে ঝুঁকছে