কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিএনপির সাংগঠনিক সভাকে কেন্দ্র করে দলের দুটি পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইটপাটকেল ও চেয়ার নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম পৌর মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সভা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সময় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের (সুমন), সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদসহ (ওয়াসিম) জ্যেষ্ঠ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার কারণে বেশ কিছুক্ষণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ী ও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক কামরুল হুদার অনুসারীদের সঙ্গে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাজেদুর রহমান মোল্লা (হিরণ) ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল হোসেনের (জুয়েল) অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যদিও কামরুল হুদার দাবি, সংঘর্ষে তাঁর কোনো নেতা-কর্মী জড়িত ছিলেন না। তবে বিএনপি নেতা সাজেদুর রহমান মোল্লা ও যুবদল নেতা তোফায়েল হোসেন এ ঘটনার জন্য কামরুল হুদার নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছেন।

তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সভায় কামরুল হুদার গ্রুপ ছাড়া যাতে অন্য নেতা-কর্মী প্রবেশ করতে না পারে, এ জন্য কামরুল হুদার লোকজন গেটে পাহারা বসায়। আমরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভাস্থলে প্রবেশের চেষ্টা করলে হকিস্টিক, চায়নিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে কামরুল হুদার অনুসারীরা। এতে আমাদের অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। অতর্কিত হামলায় আমরা সভাস্থলে প্রবেশ করতে না পেরে চলে আসি।’

সাজেদুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের নিয়ে আমি অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের চেষ্টা করলে তারা (কামরুল হুদার লোকজন) আমাকে লাঞ্ছিত করে। এ ছাড়া আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। এতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। আমি সভাস্থলে প্রবেশ করতে না পেরে স্থানীয় আবুল খায়ের মার্কেটের সামনে এসে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করি। কিছুক্ষণ পর সেখানেও আমার ওপর হামলা করে কামরুল হুদার লোকেরা। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক কামরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। যখন ঘটনা ঘটে তখন আমরা সভাস্থলে। ওই সময় জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আমার কোনো নেতা-কর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। কার ব্যানার আর ফেস্টুন ওপরে থাকবে—এ নিয়ে বিরোধে তারা নিজেরাই সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে শুনেছি। সভাস্থলে কিছু হয়নি, যা হয়েছে বাইরে হয়েছে। আর এসব ঘটনার পেছনে অন্য দলের ইন্ধন আছে। তারাই বিএনপিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, বিএনপির সাংগঠনিক সভায় দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কির ঘটনা তিনি শুনেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র রহম ন ম ব এনপ র স কর ম দ র প রব শ স ঘর ষ এ ঘটন উপজ ল ঘটন র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ