বাঁধ নির্মাণে মাটির সংকট নষ্ট হচ্ছে গো-চারণভূমি
Published: 24th, March 2025 GMT
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সরকার স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বোরো ফসল উৎপাদন তীর্ব সংকটের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। একই কথা বলছেন বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পে সংশ্লিষ্টরা।
সুনামগঞ্জের বৃহৎ বোরো ফসলি হাওর মাটিয়ান হাওর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বড়দল গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণে বাঁধসংলগ্ন গো-চারণভূমি থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে। এতে মাটির সংকট তো হচ্ছেই, গো-চারণভূমির কোনো অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। পাউবো প্রতিবছর একই স্থানে মাটি কাটার ফলে এমন দুরবস্থা হয়েছে।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণে তিনি জানান, প্রতিবছর পাউবো যদি স্থায়ী বাঁধের চিন্তাভাবনা করে, তাহলে আগামী ৫ বছর লাগাতার কাজ করলে হয়তো সমাধান পাওয়া যাবে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওরে ২০১৭ সাল থেকে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের (পিআইসি) মাধ্যমে হাওরের কান্দা কেটে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়াও কান্দা কেটে হাওরপাড়রের লোকজন নতুন বাড়ি তৈরি ও মাটি ভরাট করে। এভাবে ধারাবাহিক মাটির কাজ অতিবাহিত হওয়ার পর ২০২৫ সালে এসে বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণেও মাটি সংকট দেখা দেয়। ভবিষ্যতে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে কৃষকদের ধারণা।
হাওর অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীবনের সঙ্গে মিশে আছে কান্দা। এটি হাওরের প্রাকৃতিক ভূপ্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা উঁচু জমি হিসেবে পরিচিত। কান্দা হাওরের কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের প্রাণকেন্দ্র। এটি স্থানীয় মানুষের গবাদি পশুর চারণভূমি, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ এবং মৌসুমি ফসল উৎপাদনের স্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও বর্ষাকালে এগুলো জলজ প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কান্দা কেটে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কারণে ক্রমশ তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ওপর ক্ষতির প্রভাব পড়ছে।
হাওর অঞ্চলে বন্যা ও আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে রক্ষা পেতে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই বাঁধ নির্মাণের কারণে হাওরের প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।
বাঁধের মাধ্যমে পানির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হলেও ভূপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাঁধের নির্মাণকাজে কান্দাগুলো কেটে সমান করে ফেলা হচ্ছে, যা প্রাকৃতিক জলাবদ্ধতা রোধের ক্ষমতা নষ্ট করছে।
পরিবেশকর্মীরা জানান, কান্দাগুলোতে হাওরের প্রচুর প্রজাতির পাখি, মাছ এবং উদ্ভিদের বাসস্থান। এগুলো বিলুপ্ত হওয়ার ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বন্যা ও বর্ষার সময় মাছের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা কান্দাগুলো বিলুপ্ত হলে মাছের প্রজাতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। কান্দাগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়; হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবিকার একটি অংশ। কান্দাগুলোর ক্ষয় এবং বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক কৃষক জমি হারাচ্ছেন। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে।
মহালিয়া হাওরপারের বাসিন্দা সুলেমানপুর গ্রামের হাবুল মিয়া বলেন, হাওরে এক সময় বড় বড় কান্দা ছিল। এসব কান্দায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠত নানা প্রজাতির গাছপালা। এখান থেকে গবাদি পশুর খাদ্য ও জ্বালানি সংগ্রহ করা হতো।
তাহিরপুরে দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, এ বছর হাওরে মাটি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কৃষকরা বিকল্প ব্যবস্থা করে দূর থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এতে তাদের তিন গুণ টাকা খরচ হয়েছে। সামনের বছর এসব হাওরে বাঁধ নির্মাণ করতে মাটির কারণে আরও বেশি সমস্যা হতে পারে। এমনও হতে পারে, পিআইসির জন্য কৃষকরা আগ্রহী হবেন না।
সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স সার্ভিসের (সিএনআরএস) সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী ইয়াহিয়া সাজ্জাদ বলেন, কান্দা থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণের কারণে প্রতিবছর গো-চারণভূমি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এতে প্রাকৃতিক ক্ষেত্র থেকে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে। তা ছাড়া কান্দার পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন জলজ বন যেমন চাইল্যা, বউল্যা, মটমঠিয়া, নল খাগড়া, বিন্না, বনতুলসী, গুজাকাটা জাতীয় জলজ বন সংকটাপন্ন, এমনকি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, কান্দাগুলো হাওরের প্রতিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। হাওরের অর্থনীতিতে এসব কান্দা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, কান্দা বিলীন হওয়ার কারণে মাটি সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে নজর দিতে হবে। পিআইসির সংশ্লিষ্টদের সচেতন করা হচ্ছে এ ব্যাপারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ওর র প র চ রণভ ম
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।
ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল।
নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।