মাদক ব্যবসায়ীর ভাই আটকের আটকের খবরে মিষ্টি বিতরণকারীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
Published: 25th, March 2025 GMT
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে মাদক ব্যবসায়ীর ঘর থেকে ইয়াবা উদ্ধার এবং তাঁর ভাইকে আটকের খবরে মিষ্টি বিতরণ করেছিল এলাকাবাসী। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর মিষ্টি বিতরণকারীদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বোয়ালমারী সদরের সোতাশী মমিন মার্কেট এলাকায় মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। পরে মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই সড়কে সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এসব কর্মসূচিতে কয়েক শ নারী-পুরুষ অংশ নেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন, পৌর যুবদলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মোল্লা, কবি কাজী নজরুল কলেজ ছাত্রদল নেতা শামীম বিন ইসমাইল, বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি জুবায়ের হোসেন ও হামলায় আহত পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর ইউনিয়নের সোতাশী গ্রামের বাসিন্দা একাধিক মাদক মামলার আসামি মতি কাজী (৫০) দীর্ঘদিন ধরে সোতাশী এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছিলেন। মতি কাজী বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে ফরিদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক রাজা মিয়ার নেতৃত্বে অভিযানে সাবেক ইউপি সদস্য মতি কাজীর বসতঘর থেকে ৫০০ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের সময় মতি কাজী ভাই ইসলাম কাজীকে (৪০) আটক করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করেন। তবে ইসলাম কাজীর কাছে কোনো মাদকদ্রব্য না পাওয়ায় তল্লাশি শেষে তাঁকে ছেড়ে দেয়। এরপর গতকাল রাত ৯টার দিকে মিষ্টি বিতরণকারীদের বাড়িঘরে মতি কাজীর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। হামলায় সোতাশি গ্রামের বাবর মণ্ডল (২৮) ও মো. মুজাহিদ শেখ (২৩) আহত হন। তাঁদের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
গতকাল রাতেই জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক রাজা মিয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মতি কাজীকে আসামি করে একটি মামলা করেন। রাজা মিয়া বলেন, অভিযানের সময় সাবেক ইউপি সদস্য মতি কাজীর ঘর থেকে ৫০০ ইয়াবা জব্দ করা হয়। মাদকসহ মতি কাজীর ভাই ইসলাম কাজীকে আটক করে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর (ইসলাম কাজীকে) কাছে কোনো কিছু পাওয়া না যাওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বোয়ালমারী থানার ওসি মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, মাদক উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন। মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বাড়ি ঘরে হামলা করে আহতের ঘটনায় যাঁরা জড়িত তাঁদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম ক জ এল ক ব স সদস য ব যবস অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র আসলে ইসরায়েলের মারণকল
যখন কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়, তখন তা শুধু ক্ষুধার নয়, বরং সমাজের ভাঙনেরও প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। এ অবস্থায় মানুষ আবর্জনার স্তূপ থেকে খাবার খুঁজে আনে। কেউ গোপনে রান্না করে; কেউ আত্মীয়দের থেকে খাবার লুকিয়ে রাখে, কোনো পরিবার হয়তো খাবারের জন্য তাদের দাদিমার গয়না বিক্রি করে দেয়।
দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মুখে কোনো অনুভূতি থাকে না। তাদের চোখে থাকে ফাঁপা দৃষ্টি। মানুষ পশুর মতো খাবারের জন্য লড়াই করে। এটিই হলো সামাজিক অবক্ষয় ও অপমানের চরম রূপ। এটিই হলো মানবিক মর্যাদার বিলোপ। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আজকের গাজাবাসী যাচ্ছে।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ নামে একটি নতুন সংস্থা (যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে মে মাসে যাত্রা শুরু করে) নিজেদের কার্যক্রমকে একুশ শতকের আধুনিক ও সহানুভূতিশীল সংস্থা বলে দাবি করছে। তারা বলছে, তাদের চারটি ‘নিরাপদ বিতরণ কেন্দ্র’ থেকে তারা প্রতিদিন ২০ লাখের বেশি প্যাকেট খাবার বিতরণ করছে। সেখানকার ছবিতে দেখা যায়, বাচ্চাদের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন সংস্থার কর্মীরা।
আমরা গাজায় যা দেখছি, সেটি কেবল ক্ষুধা নয়, বরং একটি সমাজকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া। ইসরায়েলি সরকার আদৌ চিন্তিত নয় যে ফিলিস্তিনিরা বাঁচবে, নাকি মরবে। তারা শুধু গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের অভিযোগ এড়াতে চায়। আর সেই ছদ্মাবরণ হিসেবে জিএইচএফ এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চোখে ধুলো দেওয়ার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, আমরা যেন তা বুঝতে পারি।ইসরায়েলি মুখপাত্ররা বলছেন, জাতিসংঘের ট্রাকগুলো গাজার সীমানার ভেতরে আছে কিন্তু জাতিসংঘ নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বিতরণ করছে না। কিন্তু এ বক্তব্য খুব সহজ বিশ্লেষণেই ভেঙে পড়ে।
প্রথমত, সংখ্যা ঠিক মিলছে না। গত এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা হিসাব করে জানায়, ১৮ মাসের অবরোধ ও যুদ্ধের পর এবং দুই মাসের পূর্ণ ইসরায়েলি অবরোধের ফলে মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে গাজায় জীবন বাঁচানোর জন্য যে পরিমাণ খাবার দরকার, তার অর্ধেকের নিচে নেমে যাবে। অর্থাৎ গাজার সব মানুষের খাদ্যের পুরো চাহিদা পূরণ করতে হবে এই ত্রাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে। কিন্তু প্রতিদিনের ২০ লাখ প্যাকেট খাবার গাজার প্রয়োজনের অর্ধেকও নয়।
আরও পড়ুনইসরায়েল কেন গাজায় অস্ত্রধারী গুন্ডা পোষে ১১ জুন ২০২৫দ্বিতীয়ত, শুধু সংখ্যায় খাবার পৌঁছালেই দুর্ভিক্ষ বন্ধ হয় না; দুর্ভিক্ষ আঘাত করে সবচেয়ে দুর্বল মানুষগুলোর ওপর। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, যখন ২০ শতাংশ পরিবার মারাত্মক খাদ্যসংকটে পড়ে, তখন সেটিকে ‘দুর্ভিক্ষ’ বলা যায়। এ অবস্থায় নারীরা, বিশেষ করে যাঁদের স্বামী নেই এবং যাঁদের অনেক শিশু বা বয়স্ক অভিভাবক আছেন, তাঁরাই সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন। সেসব পরিবারকে চিনে ত্রাণ পৌঁছানোই আসল কাজ।
জিএইচএফ গাজায় চারটি বিতরণ কেন্দ্র চালায়—তিনটি রাফার ধ্বংসস্তূপে, আরেকটি গাজার মাঝখানে। সব কটিই সামরিক এলাকায়। এরা খুব অল্প সময়ের জন্য এবং খাবার বিতরণের খুব অল্প আগে সবাইকে জানিয়ে খোলে। মানুষ ধ্বংসস্তূপে শিবির করে বসে থাকে, কখন দরজা খুলবে সেই আশায়। তারা জানে, ইসরায়েলি সেনারা ভিড় সামলাতে গুলি চালাতে দ্বিধা করে না। যেসব দুর্বল মা, বয়স্ক মানুষ বা প্রতিবন্ধী এই দৌড়ে অংশ নিতে পারেন না, তাঁরা কীভাবে খাবার পাবেন?
আরও পড়ুনইসরায়েল এখন শেষ সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো১২ এপ্রিল ২০২৫তৃতীয়ত, মানুষের বাস্তব প্রয়োজন অনুযায়ী ত্রাণ দেওয়া দরকার। যেমন অপুষ্ট শিশুদের জন্য দরকার বিশেষ ধরনের খাবার (যেমন ‘প্লাম্পিনাট’, যা সাধারণ খাবার খেতে না পারা শিশুর জন্য তৈরি) দেওয়া দরকার। কিন্তু জিএইচএফের বক্সে থাকে ময়দা, পাস্তা, তেল, চাল, ডাল, তাহিনি (তিলবীজ থেকে তৈরি একধরনের মাখনবিশেষ)। জিএইচএফের ত্রাণের মধ্যে কোনো শিশুখাদ্য বা প্লাম্পিনাট নেই। কোনো প্রশিক্ষিত নার্স বা পুষ্টিবিদও নেই, যাঁরা অপুষ্ট শিশুদের সেবা দিতে পারেন।
আমরা গাজায় যা দেখছি, সেটি কেবল ক্ষুধা নয়, বরং একটি সমাজকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া। ইসরায়েলি সরকার আদৌ চিন্তিত নয় যে ফিলিস্তিনিরা বাঁচবে, নাকি মরবে। তারা শুধু গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের অভিযোগ এড়াতে চায়। আর সেই ছদ্মাবরণ হিসেবে জিএইচএফ এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চোখে ধুলো দেওয়ার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, আমরা যেন তা বুঝতে পারি।
● অ্যালেক্স ডি ওয়াল যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড পিস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক
দ্য গার্ডিয়ান, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত