আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চায় সরকার
Published: 25th, March 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে গেলে অন্য উন্নয়ন সহযোগীরাও নানা প্রশ্ন তুলতে পারে। তাই আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চায় সরকার। আগামী জুনে আইএমএফ দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আইএমএফের ঋণ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ঋণ না নেওয়াটা খুব ভালো। তবে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (ডিজিপি) ও ঋণের অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। তা ছাড়া সরকারি ব্যয়ের চাহিদা মেটানোর মতো রাজস্ব না থাকার কারণেই ঋণ নিতে হয়। বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফ ঋণ দিচ্ছে। প্রকল্পে অনেক ঋণ এলেও তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো যায় না। তারপরও আমরা একবারে মুখিয়ে আছি এমনটিও নয়। এ জন্যই চতুর্থ কিস্তি পেছানো হয়েছে। তারা নানা শর্ত দিচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষে এগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ থেকে যদি ঋণ না নেওয়া হয়, তাহলে অন্য দাতা সংস্থাও আস্থা পায় না। তখন বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকাসহ অন্যান্য সংস্থাও অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলতে পারে যে, কেন আইএমএফ সরে গেল? তখন একটি বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া এ ঋণ না নিলে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার, সেটিও এ মুহূর্তে বাড়ানো সম্ভব নয়। আইএমএফ ঋণের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কিছু অগ্রাধিকার রয়েছে। এগুলোর দু’একটি পূরণ সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আগীম বাজেট প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য কৃষি ও বিদ্যুতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এমন প্রকল্প নেওয়া হবে, যাতে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে সম্প্রসারণকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। বাজেটে কিছু মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিষয় থাকবে।
আইএমএফের অন্যতম শর্ত হচ্ছে মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এটি কি জুনের আগেই বাস্তবায়ন হবে– এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ মূল্যস্ফীতি আরও কতদিন থাকে, তা দেখতে হবে। হঠাৎ করে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেলে বিপদ বাড়বে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.
অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার, করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ করাসহ ২৭টি লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। অনুষ্ঠানে ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ সংগঠনের সদস্যরা বক্তব্য দেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ ঋণ আইএমএফ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।