মনোনয়ন পেতে শো-ডাউন, বিভক্তির শঙ্কা
Published: 28th, March 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতাদের শোডাউন চলছে। ইফতার আয়োজনকে কেন্দ্র করে যা ভালোভাবে দৃশ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীর মাঝে দ্বন্দ্ব-বিভক্তি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
বিভিন্ন আসনের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা আলাদা আলাদা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছেন। একইদিনে আলাদা আলাদা ইফতার আয়োজন করে যার যার বলয়ের নেতাকর্মীকে নিয়ে কর্মসূচি করছেন তারা। এতে করে মাঠপর্যায়ে দলীয় বিভাজন বাড়ছে। কোনো কোনো উপজেলায় ইফতার আয়োজন নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। এর ফলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে, দলীয় বিরোধও চাঙা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সদরে এই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট। সম্প্রতি তা আরও বেশি দৃশ্যমান। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুলের পক্ষে নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলা সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুরের ইউনিয়নে ইউনিয়নে রমজানের শুরু থেকেই ইফতার পার্টির আয়োজন হচ্ছে। তাতে নুরুলের সমর্থক, নেতাকর্মী এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই অংশ নিচ্ছেন।
গত ১৯ মার্চ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুনামগঞ্জ-৪ (সদর- বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরুলের পক্ষে আয়োজিত এ ইফতার মাহফিলে বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। একইদিনে সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাত ও আট নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল হয়েছে। আয়োজকদের অন্যতম ছিলেন জেলা বিএনপির আবুল মুনসুর শওকত।
দু’পক্ষের ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সহযোগিতাও চাওয়া হয়। একই দিনে বিএনপির দুই বলয়ের ইফতার আয়োজন বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল বলেন, রমজানের শুরু থেকে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা ইফতারের আয়োজন করছেন। যারা বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন সহ্য করেও দলের পতাকা আঁকড়ে রেখেছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের চলমান ইফতার মাহফিল তারা ঐক্যবদ্ধভাবে করছেন। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাতে অংশ নিচ্ছেন। সুনামগঞ্জ সদর আসনের তৃণমূলে বিভক্তি নেই।
এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল মুনসুর শওকত বলেন, ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে দলের পক্ষে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সুনামগঞ্জ সদর আসনে তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন এবং সাবেক এমপি ও সাবেক হুইপ ফজলুল হক আছপিয়ার ছেলে জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবিদুর রহমানের পক্ষেও ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে। চলছে প্রচার কাজ। আবিদ তাঁর ষোলঘরের বাসভবনেও নিজ বলয়ের নেতাকর্মীকে নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছেন।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের ইউনিয়নে ইউনিয়নে ইফতার মাহফিল হচ্ছে বিএনপির। যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কয়ছর এম আহমেদ এসব ইফতার মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব ইফতার মাহফিলে শরিক হচ্ছেন। ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার সময় আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজের জন্য সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছেন তিনি।
এদিকে এই আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি এমএ সাত্তারের পক্ষেও ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়। তিনিও এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে তাঁর সমর্থক শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ফরিদুর রহমান ফরিদ ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এইচএম নাছির জানিয়েছেন।
এই আসনে যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকেও নানা আয়োজনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম তুলে ধরা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনেও পৃথক ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিভক্তি চাঙা হচ্ছে বিএনপির দুটি বলয়ে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেলের পক্ষে হচ্ছে ইফতার মাহফিল। তিনি এরইমধ্যে এই আসনের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আজমল হোসেন চৌধুরীও আলাদা ইফতারের আয়োজন করেছেন। তাঁর পক্ষের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, তিনিও এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরাও ইফতার পার্টিতে নিজ নেতার পক্ষে কথা বলছেন।
এ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক হেভিওয়েট নেতা সাবেক বিচারপতি মিফতাহ্ উদ্দিন চৌধুরী রুমি অবশ্য সব বলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রচার চালাচ্ছেন। সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনেও বিভক্তির সুর বইছে বিভিন্ন উপজেলায়।
ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতালেব খান এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভা ও ইফতার মাহফিলে নিজের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল গত ২৫ মার্চ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ইফতার মাহফিল আয়োজন করেন। সেখানে তিনি এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজের অবস্থান জানান দেন।
জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক, এই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিসুল হকের পক্ষেও ইফতার চলছে তাহিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে। আনিসুল হকের ভাই উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এর উদ্যোক্তা।
এছাড়া এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেনের সহধর্মিণীও মনোনয়ন চাইবেন এমন প্রচার আছে আসনের চারটি উপজেলাজুড়ে।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক- দোয়ারা) আসনে বিএনপির দুই হেভিওয়েটের মনোনয়নের লড়াই বহুদিনের। এই আসনের সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের পক্ষে ইফতার আয়োজন চলছে প্রতিটি ইউনিয়নে। তিনি এসব ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থেকে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন শক্তভাবে। কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এই আসনে ১৯৮৮, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন তিনি। এ নির্বাচনী এলাকার অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নে প্রার্থী হন। এবারও এ আসনে মনোনয়ন চান তিনি।
এদিকে ইফতারের উছিলায় দলীয় দায়িত্বশীলদের আলাদা আলাদা শোডাউনে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে না দাবি করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির স্বাক্ষর প্রদানকারী সদস্য (সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনকারী) আব্দুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে এবং মসজিদ ও হাটবাজারের আশপাশে ইফতারের আয়োজন করার জন্য দলের নির্দেশ রয়েছে। ইফতার আয়োজন কোনো ব্যক্তির নামে নয়। দলের নামে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, তারেক রহমান সাধারণ মানুষকে নিয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়সহ সর্বস্তরে ইফতার আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন। একটি ইউনিট একদিনে বহু স্থানে ইফতারের আয়োজন করতে পারে। এটি কোনো গ্রুপিং বা বলয়কে শক্তিশালী করার জন্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, নেতারা স্বীকার না করলেও একেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর ইফতারে দলের একেক অংশের অংশগ্রহণে বিভাজনের চিত্র পরিষ্কার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স ব ক স স ন মগঞ জ সদর য় র ন ত কর ম র ন ত কর ম র দল র স ব ক ইফত র প র ব এনপ র ক র সমর থ ও ইফত র পর য য় র জন য উপজ ল এ আসন সহয গ বলয় র আসন র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে
দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।
বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’
কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি।
এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়।
মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন।
বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।
শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ
রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে।
প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।