ওয়াক্ফ বিল ইস্যুতে মুসলিমদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়ে দিলেন নাইডু
Published: 29th, March 2025 GMT
ওয়াক্ফ বিল নিয়ে বিজেপির চিন্তা কিছুটা বাড়িয়ে দিল শরিক দল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। অন্ধ্র প্রদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ শরিক দলের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু গতকাল শুক্রবার মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন, ওয়াক্ফ সম্পত্তি রক্ষায় তিনি দায়বদ্ধ। রাজ্যের ওয়াক্ফ সম্পত্তির চরিত্র নষ্ট হয়, এমন কিছু তিনি হতে দেবেন না।
কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের অস্তিত্ব রক্ষায় টিডিপির সমর্থন জরুরি। সেই দলের সর্বময় কর্তার এমন মন্তব্য বিজেপিকে কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সরকার আগেই তার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিল, ঈদের পর সংসদের যে চার দিন অধিবেশন বাকি থাকবে, সেখানে ওয়াক্ফ বিল পেশ ও পাস করা হবে। আগামী শুক্রবার সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে।
যেসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আল্লাহর নামে নিবেদিত, সেগুলোকে ওয়াক্ফ সম্পত্তি বলা হয়। সেই সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়। রাজ্য ও কেন্দ্রের ওয়াক্ফ বোর্ড সেসব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতে ৯ দশমিক ৪০ লাখ একরজুড়ে থাকা ৮ দশমিক ৭০ লাখ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াক্ফ বোর্ড। এই বিপুল সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য প্রায় দেড় লাখ কোটি রুপি।
ওয়াক্ফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে। অভিযোগ নিরসনে কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল আনে। খসড়া বিলটি বিবেচিত হয় সংসদের দুই কক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত যুগ্ম সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি)। বিরোধীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে শুধু সরকার পক্ষের সদস্যদের আনা ১৪টি সংশোধনী গ্রহণ করে এই অধিবেশনে সরকার তা পেশ ও পাস করাতে চাইছে।
সরকারের আনা বিলে দেশের সর্বত্র ওয়াক্ফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় সরকারের ভূমিকা রাখা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিলটি অসাংবিধানিক। এর মাধ্যমে সরকার মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে।
গত বছরের আগস্টে এই বিল সরকার সংসদে পেশ করেছিল। সেই সময় টিডিপি কিছু প্রশ্নও তুলেছিল। তবে বিজেপির সদস্য জগদম্বিকা পালকে চেয়ারম্যান করে গঠিত জেপিসিতে বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় টিডিপি তেমন একটা আপত্তি জানায়নি। এখন চূড়ান্ত বিল পেশ হওয়ার সময় টিডিপি মুসলিমদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে রাজনৈতিক কারণে।
জনগণনার পর জনসংখ্যার নিরিখে লোকসভার আসন বৃদ্ধি হলে দক্ষিণের ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিরোধীরা জোটবদ্ধ হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ একমাত্র দক্ষিণি রাজ্য, যারা ওই প্রচেষ্টার সরাসরি বিরোধিতা করেনি। এতে রাজ্যে টিডিপি কিছুটা কোণঠাসা। সেই কারণে মনে করা হচ্ছে, মুসলিম সমাজ যাতে দলের বিরোধিতা না করে, সে জন্য চন্দ্রবাবু নাইডু এই ভূমিকা নিতে চাইছেন। এক ইফতার অনুষ্ঠানে ওয়াক্ফ সম্পত্তি নিয়ে দলের দায়বদ্ধতার কথা জানানোর পাশাপাশি মুসলিমদের জন্য তিনি কী কী করেছেন, সে তথ্যও বিস্তারে বলেছেন।
টিডিপির এই ভূমিকা বিরোধীদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কংগ্রেস মনে করছে, চন্দ্রবাবু সম্ভবত রাজনৈতিক বিপদটা বুঝতে পেরেছেন। বিজেপিও বোঝার চেষ্টা করছে, নাইডুর বাধ্যবাধকতা কতটা।
পাশাপাশি বিজেপি বিহারের অবস্থাও বোঝার চেষ্টা করছে। নাইডু বিরোধিতার রাস্তায় গেলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারও সেই পথ ধরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিলটি রাজ্যসভায় মুখ থুবড়ে পড়বে। তাতে বিজেপির সম্মানহানি হবে।
চলতি বছরের শেষে বিহার বিধানসভার ভোট। ওয়াক্ফ প্রসঙ্গে মুসলিম ভোট বিজেপি ও তার শরিকদের বিরুদ্ধে একজোট হলে বিজেপির কাছে সেটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিহারে শুধু নীতীশের দল জেডিইউ নয়, এলজেপি নেতা চিরাগ পাসোয়ানও মুসলিমদের সমর্থনের জন্য ওয়াক্ফ বিলের বিরোধিতা করতে পারেন। ভোটের আগে ওয়াক্ফ বিল পাস করানোর মতো এত বড় একটা ঝুঁকি বিজেপি কি নেবে?
ওয়াক্ফ বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ঈদের আগে শেষ শুক্রবার জুম্মার নামাজে মুসলিমদের কালো ব্যাজ পরার অনুরোধ করেছিলেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মহম্মদ ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি। বিজেপির প্রতি ভারতের মুসলিম সমাজ এমনিতেই সদয় নয়। তবু সেই সমাজের অনগ্রসর ‘পসমন্দা’ শ্রেণির মুসলিমদের কাছে টানতে বিজেপি বেশ কিছু দিন ধরেই সক্রিয়।
তবে বিজেপির একাংশের ধারণা, ওয়াক্ফ বিল পাস হলে গোটা মুসলিম সমাজই বিরূপ হবে। বিরোধিতার রাস্তায় নামবে। কারণ, তারা মনে করবে, সেটা হবে তাদের স্বাধীন ধর্মাচরণে কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ। এই হস্তক্ষেপ দেশের অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সংগঠনের ক্ষেত্রে নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫