পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের রায়ে বেকায়দায় মমতা
Published: 4th, April 2025 GMT
প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের রায়ে অশান্ত হয়ে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসক দলের নেতাদের দুর্নীতির কারণেই এ পরিণাম ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে।
তবে মমতা চাকরি হারানোর দায় কার্যত চাপিয়ে দিতে চাইছেন বাম দল, কংগ্রেস ও বিজেপির ঘাড়ে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিক্ষাসচিবসহ রাজ্য সরকারের নিয়োজিত আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পর মমতা একহাত নেন বাম দল ও বিজেপিকে। মমতা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এটা বিজেপি করিয়েছে, সিপিএম করিয়েছে। আমি অবাক হয়ে যাই, এখানে মামলাটা করেছেন কে? আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য (সিপিএমের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য)।’ কটাক্ষ করে বলেন, ‘তিনি তো পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম আইনজীবী। তিনি কেন এখনো নোবেল পাচ্ছেন না আমি জানি না। পাওয়া উচিত। ভাবছি, একটা সুপারিশ করব। ’
যদিও মমতার এ মন্তব্যের জবাব দিয়ে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নোবেল দিলে দিক না? তবু তো একটা কিছু পেতে পারি? মানুষ বিপদে পড়লে ঈশ্বরের নাম নেয়, আর তৃণমূল আমার নাম নিচ্ছে।’
রাজ্যের বিজেপি সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার মমতাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘যোগ্য আর অযোগ্যর ফারাক করে দিতে না পারায় একসঙ্গে সবার চাকরি চলে গেল। এ জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এর আগে এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌথালা জেলে গিয়েছেন। এবার আর এক মুখ্যমন্ত্রী জেলে যাবেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তাতে একা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দায়ী হতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পুরো ক্যাবিনেটের জেলে থাকা উচিত।’
মমতা এদিন কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ও এই মামলার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে মমতা কটাক্ষ করে বলেন,‘হাইকোর্টে যিনি এই মামলার রায় প্রথম দিয়েছিলেন, তিনি এখন বিজেপির সংসদ সদস্য। বিচার বিভাগ ছেড়ে দিয়ে বিজেপির সংসদ সদস্য হয়েছেন। গাঙ্গুলি না ডাঙ্গুলি! দুঃখিত। আমি জানি না তাঁর আসল নামটা। পরে জেনে নেব।’
মমতার এমন মন্তব্যের উত্তরে সংসদ সদস্য অভিজিৎ গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘পাগলের প্রলাপ!’ তাই গতকালই রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা, বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের। প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতিতে চাকরি হারিয়েছিলেন ১০ হাজার ৩২৩ জন প্রার্থী। ঠিক তার পরের বছর ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছিল বাম ফ্রন্ট সরকারের। বিদায় নিতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের।
পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ওঠে, যাঁরা চাকরির পরীক্ষায় শূন্য পেয়েছেন, তাঁদের উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটে ৫০–৫২ নম্বর দিয়ে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে বঞ্চিত যোগ্য প্রার্থীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইকে নির্দেশ দিলে সিবিআই তদন্ত করে প্রথম পর্যায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে পাঁচ হাজারের বেশি চাকরি প্রাপকদের একটি তালিকা পেশ করে। তাতে নাম ওঠে অযোগ্য ৫ হাজার ২৪৩ জনের নাম। কিন্তু রাজ্য সরকার পৃথকভাবে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা ভাগ না করে একসঙ্গে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগ দেয়। আর যোগ্য প্রার্থীরা এ নিয়ে মামলায় লড়েন সেই ২০১৬ সালের নিয়োগের পর থেকে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত হওয়া কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শাব্বর রশিদির নেতৃত্বে গড়া বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ চাকরিতে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা ১১২টি মামলার একসঙ্গে শুনানি শেষে এক রায়ে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করে দিয়ে এই দুনীতির তদন্তের জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দেন।
এই নির্দেশ পাওয়ার পর সিবিআই তদন্ত শুরু করে অযোগ্য ৫ হাজার ২৪৩ জন প্রার্থীর তালিকা চায় রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের কাছে। কিন্তু পায়নি।
গতকাল সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর চাকরিহারারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কলকাতার বিধাননগরের এসএসসি দপ্তরের সামনে গতকাল তাঁরা প্রতিবাদ করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য় ম খ যমন ত র ব চ রপত বল ছ ন মন ত র র চ কর কলক ত সরক র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে একটি সুন্দর দিন উপহার দিতে যা যা করতে পারেন
একজন বাবা তার সন্তানকে সুখী করার জন্য কত কিছুই না করেন। এইতো কয়েকদিন আগে এক বাবা তার আয়ের প্রায় সবটুকু জমিয়ে সন্তানের জন্য সাইকেল কিনে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। নিজের কাছে বাসের টিকিট কেনারও টাকা ছিলো না। অগত্যা বাবা সন্তানের জন্য কেনা সাইকেল চালিয়ে শত শত মাইল দূরের বাড়ির দিকে রওনা করেছিলেন।– এমন কত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে প্রতিদিন। আমরা সব সময় সব খবর পাই না। বাবারা আমাদের সুপারহিরো। বাবাকে সুখী করার জন্য আমরাও ছোট ছোট অনেক কিছুই করতে পারি।
বাবার শৈশবের গল্পটা আজ শুনতে পারেন: আজ বাবা দিবস। এ দিবসে আপনি আপনার বাবার শৈশব সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। একটি প্রশ্নই আপনার বাবাকে তার রঙিন শৈশবের দিকে ফিরিয়ে দেবে। এটা সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু গল্প ভাগাভাগি করার সময় আপনিও সেই গল্পের পার্ট হয়ে উঠতে পারবেন। বাবাকে জিজ্ঞাসা করুন ছোটবেলায় তার প্রিয় জিনিসগুলো কেমন ছিলো, সেগুলো কি কি, এখনও বাবা কোন স্মৃতিগুলো লালন করেন সেই সব কিছু জানতে পারেন। এই প্রশ্ন-উত্তরের মুহূর্তগুলো আপনাদের সম্পর্ক সুন্দর করে তুলবে।
বাবার সাথে গাছ লাগাতে পারেন: বাবা দিবস এমন একটি সময়ে আসে, যখন প্রকৃতিতে বৃষ্টি থাকে। সময়টা গাছ লাগানোর জন্য একেবারে উপযুক্ত। এই দিনে বাবার সঙ্গে গাছ লাগাতে পারেন। বাগান থাকলে বাবার সঙ্গে বাগান পরিচর্যা করতে পারেন। গাছের যত্ন নিন, গাছ সম্পর্কে কথা বলুন। দেখবেন সময়টা উপভোগ্য হয়ে উঠছে।
বাবার প্রিয় মিষ্টি উপহার দিন: বাবার দিনটি মিষ্টি করে তুলতে তার প্রিয় মিষ্টি উপহার দিতে পারেন। নিজেই বাবার জন্য বানিয়ে ফেলতে পারেন কেক, কুকিজ, পুডিং, মৌসুমী ফলের শরবত।
বিকেলটা একসঙ্গে উপভোগ করুন: বাবার সঙ্গে বিকেলের শান্ত প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন। বাবার সঙ্গে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা বিকেল কাটান।
বাবার প্রিয় খাবারের আয়োজন থাকুক ডিনারে: রাতের খাবারের আয়োজনটি বাবার জন্য বিশেষ করে তুলুন। হয়তো আপনার বাবার এমন কোনো প্রিয় খাবার আছে, সেই খাবার রান্নার চেষ্টা করুন। পরিবেশনায় আলাদা নৈপূন্য যোগ করুন।
বাবার সঙ্গে প্রকৃতির শান্ত মুহূর্তগুলো উপভোগ করুন: বাবার সাথে প্রকৃতির শান্ত মুহূর্ত উপভোগ করার জন্য দূরবীন ব্যবহার করতে পারেন। বারান্দা বা খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দূরবীন দিয়ে দূরের পাখি ওরা দেখতে পারেন। আপনি আর আপনার বাবা একসঙ্গে কোনো পার্কে বা বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন। একসঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে গল্প বলতে পারেন।
শুধু বাবা দিবসে নয় বছরের অন্যান্য দিনগুলোতেও বাবারা তার সন্তানের কাছ থেকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, মনোযোগ আর প্রাপ্য সম্মানটুকু পাক।
ঢাকা/লিপি